একটি নিবেদন
পূৰ্ব্ব বাঙলার জনগণ স্বাধীনতার এক দুর্ধষ্য সংগ্রামে লিপ্ত, আওয়ামী লীগের অবিসংবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের দৃঢ় নেতৃত্বে সেই সংগ্রাম পরিচালিত। আওয়ামীলীগ পূর্ব বাঙলার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রের অধিকারীরা শােষণমুক্ত নাগরিকের জীবন পরিচালনার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়িয়া তুলিলেন এবং স্বাধিকার বর্জনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পূর্ণ সমর্থন লাভ করিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী তাহা বরদাস্ত করিতে পারিলেন না, ফলে ২৬শে মার্চ পূর্ব বাঙলার মানুষের ভাগ্যে এক অপূর্ব নির্যাতনের অধ্যায় সূচীত হইল। এখন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদল পশুবলের আশ্রয় লইয়া নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র আক্রমণ দ্বারা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করিয়াছে। অকথ্য অত্যাচার চালাইয়া জনগণকে বিধ্বস্ত করিতেছে ও নির্মম হত্যাকাণ্ড চালাইয়াছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বাঙলার জনগণ পাকিস্তান হইতে পৃথক স্বাধীন বাঙলা ঘােষণা করিয়া লড়াইয়ে অবতীর্ণ হইয়াছেন ও অসীম সাহসের সহিত আত্মাহুতি দিতেছেন।
আত্মাহুতির মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্ৰানিয়ন্ত্রণীর এই স্বীকৃতিকে আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন ও অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতেছি। স্বাধীন দেশের নাগরিক বিশেষ করিয়া বাঙালী হিসাবে আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে পারি না। আমাদের নিশ্চিত কর্তব্য হইয়া পড়িয়াছে তাহাদের এই অপরিসীম বিপদে যথাসাধ্য দান করা।
একদিকে যেমন আমাদের কেন্দ্রীয় গবর্ণমেন্টের নিকট দাবী করিব যে এই স্বাধীন বাঙলাকে রাষ্ট্রীয় মৰ্য্যাদার স্বীকৃতি প্রদান এবং দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের উপর চাপ দান— যাহাতে এই বাঙলার জনগণের উপর পাশবিক অত্যাচারের অবসান ঘটে। অন্যদিকে আমাদের এ দেশবাসীর নিকট বিনীত আবেদন তাহারা স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া আমাদের ত্রাণ কমিটীতে অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য প্রদান করিতে আগাইয়া আসুন।
ব্যক্তিগতভাবে একটি নিবেদন জানাইতেছি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একজন একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে আত্মনিয়ােগ করিবার আমার সুযােগ ঘটিয়াছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে যে আত্মসংশয়, একাগ্রতা, দৃড়সঙ্কল্পতা, শৃঙ্খলাবােধ প্রদর্শন করা প্রয়ােজন হয় তাহার প্রগাঢ় উপলব্ধি করিতে সক্ষম হইয়াছিলাম পূর্ব বাঙলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এই গুণপনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কাৰ্য্যে অগ্রসর হইবার আশা রাখি।
বিনীত
সুরেশ চন্দ্র দেব
সভাপতি
করিমগঞ্জ বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটী
৫-৪-৭১ ইং
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৭ এপ্রিল ১৯৭১