শরণার্থী ত্রাণে করিমগঞ্জ রেডক্রশ সােসাইটি
গত কয়েক মাসে শরণার্থীদের ত্রাণকার্য্যে করিমগঞ্জ রেডক্রশ সােসাইটির ভূমিকা সম্পর্কে সােসাইটির করিমগঞ্জ শাখার সম্পাদক ডঃ অমলেন্দু দাস নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছেনঃ- “রেডক্রশ সেবাকার্য শুরু হওয়ার পর ২ মাস কাল পর্যন্ত কোনরূপ ত্রাণ সামগ্রী বাহির হইতে আসে নাই। এই দুই মাস কাল ওষুধ পত্রাদি এবং শিশুদের পথ্য ইত্যাদি স্থানীয় বাজার হইতে নগদ মূল্যে ক্রয় করিতে হয়। এখানে উল্লেখযােগ্য সেই সময় এই সমস্ত জিনিস দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য ছিল, করিমগঞ্জ রেডক্রশ সােসাইটি অশেষ ক্লেষ [শ] স্বীকার করিয়া এই সমস্ত দ্রব্য সংগ্রহ ও ক্রয় করেন। দুই মাস পর যখন ত্রাণ সামগ্রীর মাত্রা নির্ধারণ করা হইল, তখন বিভিন্ন স্থান হইতে ত্রাণ সামগ্রী আসিতে আরম্ভ করে। তবে তাহার পরিমাণ প্রয়েজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তথাপি আমরা যাহা পাইয়াছি, তাহা যথাযথভাবে বণ্টন করিবার চেষ্টা করিয়াছি। প্রায় দুই মাস যাবত শরণার্থীরা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রেডক্রশের অধীনে জরুরী ত্রাণ সংস্থা সুপরিকল্পিতভাবে সেবার দায়িত্ব নেয়। তখন হইতে যাহাদের প্রকৃত প্রয়ােজন যেমন শিশু, বালক-বালিকা; প্রসূতি মায়েদের ও রােগীদেরকে দৈনিক দুগ্ধ বিতরণ করা হইতেছে। এতৎসহ শিশুদের দুগ্ধ ও পথ্য সরবরাহ অনুযায়ী যথাসাধ্য বণ্টন করা হইতেছে।
করিমগঞ্জ মহকুমার বাংলাদেশ শরণার্থীরা প্রথম চার মাস বহু শিবিরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করিতেছিলেন। সেই সময় কখনও কখনও ৫২ টি শিবিরেও আমরা দুগ্ধ ও ঔষধ বিতরণ করিয়াছি। বর্তমানে ৬ টা শিবিরে শরণার্থীরা কেন্দ্রীভূত হইয়াছেন এবং ঐ শিবিরগুলিতে প্রায় ৩৭ হাজার শরণার্থী আশ্রয় লাভ করিয়াছেন। আমরা গত আড়াই মাস যাবৎ ২টি শিবিরের সমস্ত রােগীদের সেবাকার্য চালাইয়া যাইতেছি।
পােষাক পরিচ্ছদ আমরা খুব অল্পই পাইয়াছি। যাহা পাইয়াছিলাম তাহাও সুষ্ঠুভাবে শরণার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হইয়াছে। আমাদের বেতনভুক্ত কোন কর্মী নাই। মুষ্টিমেয় কর্মী কয়েকজনকে দৈনিক ভাতা (Daily Allowance) দেওয়া হইতেছে। তাহাও কর্মীদের কাজ ও শ্রমের তুলনায় খুবই সামান্য।
প্রসঙ্গক্রমে উহাও উল্লেখ্য যে আমরা জিনিষপত্র কতটুকু কি পাইয়াছি এবং কিভাবে তাহা বিলি বণ্টন করা হইয়াছে, তাহার সম্পূর্ণ হিসাবই আমরা রাখিয়াছি। অন্যান্য ব্যাপারেও হিসাব-পত্র একজন Chartered Accountant কর্তৃক পরিক্ষিত ও অনুমােদিত হইয়াছে। রেডক্রশ সােসাইটির সমস্ত হিসাব পত্রই আগামী ২১ শে নভেম্বর Annual General Meeting এও পেশ করা হইবে।
সূত্র: যুগশক্তি, ৫ নভেম্বর ১৯৭১