ইত্তেফাক ভারত-ভাগের পর পশ্চিমবঙ্গীয় মাওলানা আকরাম খাঁর ‘আজাদ’ (মুসলিম লীগের নাজিমউদ্দিন গ্রুপের সমর্থক) ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। সােহরাওয়ার্দী-সমর্থক ইত্তেহাদ’। কলকাতায় রয়ে যায়। কিছুদিন পর তুচ্ছ অজুহাতে কলকাতার আনন্দবাজার, যুগান্তর’, ইত্তেহাদ’ প্রভৃতি ‘পূর্ব-পাকিস্তানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। ‘পূর্ববাংলায় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে ১৯৪৯ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রস্তাবিত ইত্তেহাদ’ নামে সাপ্তাহিক প্রকাশের অনুমতি দেয়া না হলে, একটু পাল্টে নাম রাখা হয় ইত্তেফাক মাওলানা ভাসানী এর প্রতিষ্ঠাতা, ইয়ার মােহাম্মদ খান প্রকাশক ও ফজলুর রহমান খাঁ সম্পাদক হন নিদারুণ সংকটের মধ্যদিয়ে ইত্তেফাকের যাত্রা শুরু হয়। মাওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিব যেখানেই আওয়ামী লীগের সভা করতে যান, সেখানেই ইত্তেফাকের জন্য চাদা তােলেন মুসলিম লীগ সরকারের কাছে তখন ইত্তেফাক রাষ্ট্রদ্রোহীদের কাগজ এবং মার্কিনিদের কাছে ছদ্মবেশী কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত বিপজ্জনক পত্রিকা। একপর্যায়ে মুজিবের অনুরােধে মানিক মিয়া (তফাজ্জল হােসেন) ইত্তেফাকের দায়িত্ব। নেন। তখন তিনি সম্পাদকীয় লিখতে জানেন না, কোনােদিন রিপাের্টও লিখেননি। সুতরাং প্রথম দিকে যুক্ত হলেন পত্রিকা ব্যবস্থাপনায়। বরিশাল কালেক্টটের কেরানি মানিক মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের ‘প্রােপাগান্ডা অফিসার নিযুক্ত হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়ানোের সময়। সােহরাওয়ার্দীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তিনি তাকে কলকাতায় নিয়ে যান। রাজনীতির প্রতি উৎসাহী মানিক মিয়া সরকারি চাকরি ছেড়ে মুসলিম লীগের কাজ শুরু করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর সােহরাওয়াদী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দৈনিক ইত্তেহাদ বের করেন এবং মানিক মিয়া সেখানে চাকরি পান (সাংবাদিকতার নয়)। দেশভাগের পর তিনি চরম আর্থিক দুরবস্থায় পড়েন। এ সময় তিনি ইনফরমেশন অফিসার পদে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকা আসেন। হােটেলে থাকার পয়সা না থাকায় মােগলটুলীতে ছাত্রলীগ-অফিসে ওঠেন। ছাত্রলীগ তখন বাংলা ভাষা। দাৰি দিবস (১১ মার্চ) পালনের আয়ােজনে ব্যস্ত।সে-রাতে দাবি দিবস উপলক্ষে ছাত্রদের এক গােপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ খবর পেয়ে শেষরাতে হানা দিয়ে কয়েকজন ছাত্রনেতার সাথে মানিক মিয়াকেও ধরে থানায় নিয়ে যায় এবং যখন তিনি১ ঢাকার কারকুন বাড়ি লেন থেকে এটির প্রকাশনা শুরু হয়। আব্দুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পাঁচত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৬০ছাড়া পান ততক্ষণে ইন্টারভিউর সময় উত্তীর্ণ। পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকায় চাকরির ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী ছিলেন।
কিন্তু এখন তার সংসারের কী উপায় হবে ভেবে একেবারে ভেঙে পড়েন। এ-সময় মুজিব এসে পাশে দাঁড়ালেন, তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, মানিক ভাই, ভাববেন না। আপনি বরং ইত্তেফাকের ভার নিন। আমি আর মাওলানা (ভাসানী) সাহেব ভিক্ষা করে হলেও টাকা জোগার করে দেব। মানিক মিয়া রাজি হলেন। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা বরিশাল থেকে নিয়ে এসে কমলাপুরের এক বস্তিতে বাসা নেন। হঠাৎ ‘মােসাফির’ ছদ্মনামে রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি’ শিরােনামে নূরুল আমীনের মুসলিম লীগ রাজত্বের কীর্তিকাণ্ড নিয়ে তিনি এক নিবন্ধ লিখেন। ‘ভাষা গ্ৰাম্য, ব্যাকরণগত ভুলে ভর্তি। কিন্তু যুক্তি ও আক্রমণ তীব্র’। প্রথম লেখাতেই চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। শুরু হল মােসাফিরের নিয়মিত কলামরাজনৈতিক ধোঁকাবাজি; শুরু হল সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের জয়যাত্রা। ১৯৪৭ সালে বাংলাভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গ (শহর বাংলা) থেকে পূর্ববঙ্গ (গ্রামবাংলা) বিছিন্ন হয়। স্বাভাবিকভাবেই গ্রামবাংলায় তার উপযােগী নেতৃত্ব, সংগঠন, সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক প্রচারের চাহিদা ছিল। এই চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছিলেন ভাসানী-মুজিব, ইত্তেফাক ও মানিক মিয়া (মােসাফির)। ইত্তেফাক সাধারণ মানুষের সহজবােধ্য ভাষার কাগজ হওয়ায় প্রথমদিকে নাক উঁচু শিক্ষিতদের কেউ ঠাট্টা করে একে ‘বিড়িওয়ালা ও লুঙ্গিওয়ালাদের’ কাগজ বলত। মােসাফিরের রাজনৈতিক কলামের ভাষারীতিও ছিল গ্রাম্য ও অপরিশীলিত। প্রচলিত ও অপ্রচলিত গ্রাম্য গল্প ও প্রবাদে ভর্তি। ফলে সাধারণ অর্ধশিক্ষিত মানুষের কাছে এর আবেদন ছিল বিপুল। দৃষ্টান্তস্বরূপ, লীগ। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলা হয় ‘নূরুল আমীনের চোখে বিড়ালে মুতিয়া দিয়াছে’ অন্যত্র, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলা হয় বাজারে গিয়াছিলাম। গরুর দামে একটা মুরগী কিনিয়া। লইয়া আসিয়াছি।’ এভাবেই গাফফার চৌধুরীর ভাষায়, ভাসানী-মুজিব-মানিক মিয়ার । মাধ্যমে গ্রামবাংলায় শুরু হয় এক নবজাগরণ (‘রাইজ অব রুবাল বেঙ্গল’)।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি দৈনিক পত্রিকার প্রয়ােজন অনুভূত হওয়ায় ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর (মতান্তরে ২৫ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দৈনিক ইত্তেফাক সারাদেশে যুক্তফ্রন্টের মুখপত্ররূপে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। | নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বিপাকে পড়ে। ফজলুল হক তার ভাগ্নে সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া)-কে মন্ত্রী করতে চাইলে সােহরাওয়ার্দী। মুজিবকেও মন্ত্রী করার দাবি জানান। এমতাবস্থায় ৩ এপ্রিল ফজলুল হকসহ মাত্র চারজন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন (সংকট কাটিয়ে পুরাে মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ১৫ মে)। এ নিয়ে আওয়ামী লীগেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ইত্তেফাকে কেউ কেউ মাওলানা ভাসানীর১. আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৬২ আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৬৩সমালােচনা করতে থাকেন। এমতাবস্থায় ১৪ মে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকার জেলা প্রশাসন (ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াহিয়া চৌধুরি) থেকে ইয়ার মােহাম্মদ খানের স্থলে তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়াকে প্রিন্টার ও পাবলিশার করা হয় (পূর্ব থেকেই তিনি সম্পাদক ছিলেন) এবং মাওলানা ভাসানীকে প্রতিষ্ঠাতার স্থলে পৃষ্ঠপােষক করা হয় (পরে সুযােগমতাে মাওলানাকে পৃষ্ঠপােষকতা থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নাম ছাপা হয়)। অর্থাৎ মালিকানা কু করা হয়। দলের ঐক্য ও ভাবমূর্তির কথা বিবেচনা করে মাওলানা বা ইয়ার মােহাম্মদ এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেননি। ফলে ভাসমান মানিক মিয়া হলেন সম্রান্ত পত্রিকা মালিক। ইত্তেফাকের প্রথম যুগে এর বেতনভুক সম্পাদক মানিক মিয়া চীন সফর করে ফিরে এসে নয়া চীনে কি দেখিলাম’ শিরােনামে সমাজতান্ত্রিক চীনের তাৎপর্য জন-জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছিলেন।
আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি সেদিন সাম্রাজ্যবাদী, যুদ্ধবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তার কলম গতিপথ পরিবর্তন করে মার্কিনপন্থী হয়ে যায়। কমিউনিস্টরা তখন তার ভাষায় ‘লালমিয়া’ বই কিছু নয়। | ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনামলে ‘অত্যাসন্ন পাকিস্তান বিভক্তির আশঙ্কায় ‘স্বপ্রণােদিত হয়ে পাকিস্তান বিভক্তি ঠেকানাের চেষ্টায় নিয়ােজিত থাকাকালে’ ১৯৬৯ সালের ৩১ মে রাতে রাওয়ালপিন্ডিতে মানিক মিয়া মারা যান। তার নেতা সােহরাওয়ার্দীর পাশে সরকারি জায়গায় কবরস্ত করার জন্য স্বয়ং মুজিব অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তাকে আজিমপুরে কবরস্ত করা হয়। মুজিব নিজের কাঁধে তার মানিক ভাইয়ের লাশ বহন করে কবরস্থানে নিয়ে যান। | মানিক মিয়ার মৃত্যুর পরই ইত্তেফাকের ‘জাতীয়তাবাদী’ ভূমিকার ইতি ঘটে। ইত্তেফাক পরিণত হয় আওয়ামী লীগের ভেতরে চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও মার্কিনঘেঁষা লবীটির মুখপত্রে। উল্লেখ্য, শুরুতে ইত্তেফাক ৬ দফাকে সমর্থন করেনি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে ইত্তেফাক সমর্থন তাে করেইনি বরং বিরােধিতা করেছে। একাত্তরের মার্চে পাকবাহিনী ‘পিপল,’ ‘সংবাদ’ ও ‘ইত্তেফাক’ কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। সংবাদ ও পিপল স্বাধীনতার পরই কেবল পুন: প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইত্তেফাক মাত্র ক’দিন পরই পুনঃ প্রকাশিত হয়। শােনা যায়, জেনারেল টিক্কা এজন্য মােটা টাকা ক্ষতিপূরণ” দিয়েছিলেন।
যুদ্ধের সময় মানিক মিয়ার এক ছেলেও মুজিবনগর যায়নি। এ সময় অন্য কোনাে বাঙালি অনুমতি না পেলেও, মানিক মিয়ার এক পুত্র টিক্কার অনুমতি নিয়ে লন্ডন সফর করার সুযােগ পান । সেখানে তার সাথে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে যােগাযােগ করে মুজিবনগর থেকে ইত্তেফাক প্রকাশের অনুরােধ জানানাে হয়। তিনি সে-অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করে শক্রকবলিত ঢাকায় ফিরে এসে ঢাকা থেকে ইত্তেফাক৪. সিরাজ উদদীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১০২ এএল খতিব, কারা মুজিবের হত্যাকারী? পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৫৯। আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৩১ আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৩১প্রকাশ করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনা-লেখক সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে মঈনুলকে পিতার সুযােগ্য পুত্র’ অখ্যায়িত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিরােধী।ভূমিকার জন্য সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দিন উভয়ই ইত্তেফাকের প্রতি বিরূপ ছিলেন। কিন্তু মুজিব স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ‘পুত্রবৎ’ ‘হিরাে-মঞ্জুকে’ (মানিক মিয়ার দু’ ছেলের ডাকনাম) ক্ষমা করে দেন। অথচ মঈনুল ১৯৬৭ সালে তার কাকা মুজিবের ওপর আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখিত একটি কবিতা ইত্তেফাকে ছাপেননি।
উপরন্তু শেখ মুজিবকে অত বড় করে না দেখিয়ে আন্দোলন নিয়ে কবিতা দেখার জন্য তিনিকবিকে উপদেশ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিব মিশর ও সিংহলের মতাে সংবাদপত্র শিল্পকে জাতীয়করণের আওতায় আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানিক মিয়ার ইত্তেফাক পত্রিকা ও মানিক মিয়ার পরিবারের প্রতি দুর্বলতাবশত তিনি তা করেননি। অথচ একটি দৈনিক পত্রিকা ছাপাখানাসহ প্রতিষ্ঠায় তখন জাতীয়করণের জন্য নির্ধারিত সীমা ২৫ লক্ষ টাকার বেশি মূলধন প্রয়ােজন ছিল। এছাড়া ইত্তেফাককে ব্যক্তিমালিকানায় রাখার অনুমতি দিতে গিয়ে বাংলার বাণী’, জনপদ প্রভৃতিকে প্রকাশে অনুমতি দিতে হয়। সর্বশেষ বাকশালী’ নিয়ন্ত্রণের যুগেও বাংলাদেশের প্রগতিবিরােধী’ ইত্তেফাক প্রকাশে অনুমতি পায়। | ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও একদলীয় (বাকশাল) ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিবাদে ব্যারিস্টার মঈনুল হােসেন ও এমএজি ওসমানী জাতীয় সংসদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু মঈনুল হােসেন গণতান্ত্রিক নীতি আঘাতপ্রাপ্ত হবার কারণে পদত্যাগ করেননি। তিনি তার প্রভুর আশীর্বাদেই তা করেছিলেন। মুজিবের মৃত্যুর পর মােশতাক আওয়ামী লীগারদের জয় করতে ব্যর্থ হয়ে ডেমােক্রেটিক লীগ গঠন করলে মঈনুল হােসেন এতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যােগ দেন। গণতন্ত্রের কী পরাকাষ্ঠা! ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ -এর মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ড ও ক্ষমতার পটপরিবর্তন সম্পর্কে। পরদিন ইত্তেফাক বলে :গতকাল ছিল গতানুগতিক জীবনধারার একটি ব্যতিক্রম। চলার পথে শক্তি সঞ্চয়ের দিন। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। দেশের প্রবীণ নেতা খন্দকার মােশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দেশের ভার গ্রহণ করিয়াছে। প্রত্যুষে বেতারে এই ঘােষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া একটি আকাক্ষিত সূর্য-রাঙ্গা প্রভাত দেখিতে পায়।প্রকৃতপ্রস্তাবে মুজিব তার সতীর্থ’ মানিকভাই, ‘পুত্রবৎ’ ভাইপােদ্বয় এবং তাদের ‘দখলকরা প্রতিষ্ঠান ইত্তেফাকের প্রতি বারবার যে অতিশয় স্বজনপ্রীতি’ দেখিয়েছেন, উপযুক্ত প্রতিবেদন তারই প্রতিফল স্বরূপ। বলা বাহুল্য, সময় ও পরিবেশমতাে সামান্য এদিক-ওদিক হলেও ইত্তেফাকের ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকার মৌল চরিত্র অব্যাহত গতিময়।*৯. আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮ এএল খতিব, কারা মুজিবের হত্যাকারী? পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৪৬
সূত্র : বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-১৯৭৫ – হালিমদাদ খান