You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.30 | শরণার্থী সমস্যা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

শরণার্থী সমস্যা

বাংলাদেশাগত শরণার্থীদের সমস্যা আজ আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নহে। প্রথম দফায় ভারত ইহার ধাক্কায় নানা ভাবে বিব্রত বটে কিন্তু আজ সারা দুনিয়া ইহার সঙ্গে মানবীয় কারণে জড়িত হইয়া পড়িতেছে।
পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মেঘালয় আসামকে মুখ্যতঃ শরণার্থীদের চাপে দারুণ হিমসিম খাইতে হইয়াছে। শরণার্থীদের মাথা গুজিবার স্থান, খাদ্য, ঔষধ পথ্য, বস্ত্রদান এসকল দায়দায়িত্ব কত গভীর ও জরুরী তাহা চিন্তার জিনিষ।
বাস্তুত্যাগ যাহারা করিয়া আসিয়াছেন তাহারা কত যে দুঃখ কষ্ট বেদনা ও বিপত্তি মাথায় লইয়া উহা করিয়াছেন তাহা মানুষ মাত্রকেই ভাবাইয়া তােলে।
পাষাণ হৃদয় এহিয়াশাহী বর্বরতার শিকার হিসাবে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ ছিন্নমূল, তাহাদের সােনার সংসার আজ খা খা করিতেছে। তাহাদের পিতৃপুরুষের বাস্তুভিটা আজ শ্মশানবৎ।
যাহারা আসিয়াছেন আমাদের সরকার, আমাদের সমাজ যথাসাধ্য তাহাদের সেবা সাহায্য করিতেছেন। ভারত সরকারও রাজ্য সরকারের পক্ষে শরণাগতদের জন্য যে সকল ব্যবস্থা করা হইতেছে তাহাতে ক্ৰটী হয়ত অল্পবিস্তর থাকিতে পারে কিন্তু কোন স্থানে রিলিফ কর্মচারীদের এবং যােগানদার, ঠিকাদারদের লালসা সমালােচনার জিনিষ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কাছাড়ের জিলাকৰ্ত্তা অত্যন্ত সচকিত, করিমগঞ্জের মহকুমাধিপতিও বিশেষ সতর্ক, অন্যান্য বহু কর্মচারীও বেশ সচেতন তবুও কোন কোন কর্মচারীদের এবং তাহাদের আশ্রিত ঠিকাদার-দোকানদারদের নামে বেশ বদনাম রাষ্ট্র হইতেছে।
কবে কিভাবে শরণার্থীদের সমস্যা সমাধান হইবে সেটা আমাদের আলােচ্য নহে। আমরা বলিতে চাই কতিপয় লােভী ও মতলববাজ ও মুনাফা শিকারী কর্তৃক যেন শরণার্থীদের খুদকুড়া তথা খাদ্য, ঔষধ, পথ্য, বস্ত্র, এসকল জিনিষে যেন ভাগবাটোয়ারা স্থান লাভ করিতে না পারে।
এসব ব্যাপারে যাহাতে দুর্নীতি প্রশ্রয় না পায় তৎপ্রতি কাছাড়ের বিচক্ষণ জিলাধিপতি কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করিবেন এ বিষয়ে নিরপেক্ষ মহল বিশেষ আশা রাখেন।
(জনৈক নাগরিক)

সূত্র: আজাদ, ৩০ জুলাই ১৯৭১