You dont have javascript enabled! Please enable it!

অনিশ্চিতের অবসান চাই

সীমান্ত শহর করিমগঞ্জকে আজ একটা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে কাটাতে হচ্ছে। সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের ভেতর এখানে সেখানে রােজই মুক্তিসেনা ও পাকফৌজের মধ্যে লড়াই চলছে। সেই লড়াই এর গুলির আওয়াজ শহর তথা সীমান্তবাসীদের গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু লড়াই যত জোরদার হচ্ছে। শরণার্থী আগমন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শহর তথা মহকুমার স্কুল কলেজগুলি সেই যে কবে এপ্রিলের প্রথম দিকে বন্ধ হল আজও তা খােলার নাম নেই আর কবে পর্যন্ত খুলবে সেটাও সঠিক বলা কারাে পক্ষে সম্ভব নয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যদিও বা স্কুলগুলি খােলার একটা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ২৪ ঘণ্টার ভেতর তা আবারাে ভর্তি হয়ে যায়। এই অবস্থায় কবে পৰ্য্যন্ত স্কুলগুলি খােলা সম্ভব হবে সেটা বলা কঠিন। এই অবস্থা বেশিদিন চলতে দিলে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ গােল্লায় গিয়ে আরাে একটা কঠিন সমস্যার উদ্ভব হবে এতে সন্দেহ নেই।
স্কুল কলেজগুলি বন্ধ থাকার দরুন শিক্ষক শিক্ষিকাদের পক্ষে নিয়মিত বেতন পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই সম্পর্কে বাংলদেশ ত্রাণ কমিটী মুখ্যমন্ত্রীর নিকট এক তারবার্তায় কয়েকটা সময়ােচিত দাবী তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করব মুখ্যমন্ত্রী তা বিশেষভাবে বিবেচনা করে পন্থা গ্রহণ করবেন।
শরণার্থী শিবিরের নির্মাণ কাৰ্য্য যত দ্রুত হওয়ার আশা করা গিয়েছিল তা তেমনভাবে অগ্রসর না হিওয়ার] দরুনই আরাে জটিলতার সৃষ্টি হয়ে চলেছে। কাজ পর্যবেক্ষক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার থাকছেন। গৌহাটীতে আর মাঝে মধ্যে এসে কিছু কন্ট্রাক্ট বিতরণ করে দিয়েই চলে যাচ্ছেন এবং স্থানীয়ভাবে এই সকল কাজ দেখাশােনা করার মতও কোন কর্মচারী নিয়ােগ করা হয়নি। এমতবস্থায় এত বিরাট নির্মাণকাৰ্য্য চলতে পারে না। সুতরাং এই কাজ পরিচালনার জন্য করিমগঞ্জে অবিলম্বে একজন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মচারী নিয়ােগের জন্য ত্রাণ কমিটীর দাবীর সমর্থনে আমরাও আমাদের দাবী রাখছি।
স্কুল কলেজগুলির উপর যাতে আর চাপ সৃষ্টি না হয় সে জন্য করিমগঞ্জ শহর পাথারকান্দি ও লাতুতে অন্ততঃ ২৫ হাজার লােকের প্রাথমিক আশ্রয়গৃহ নির্মাণ করা উচিত হবে। এবং এই গৃহগুলির নির্মাণকাৰ্য্য সপ্তাহকাল মধ্যে শেষ করা অবশ্য কর্তব্য। সরকারী কাৰ্য্যকরণে স্থানীয় জনমনে বিরূপ মনােভাবের যাতে সৃষ্টি না হয় সে দিকে সকলেরই নজর রাখা উচিত। ঘন ঘন মন্ত্রী মহােদয় ও বড় বড় অফিসাররা আসছেন কিন্তু এখানকার অবস্থা যথা পূর্বং তথা পরং।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি কন্ট্রাকটররা তাদের বিলের টাকা না পাওয়ায় গত ২রা জুন ২৪ ঘণ্টার জন্য তারা রেশন সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে শরণার্থীদের খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুরােধে সাময়ীকভাবে সেটা চালু হয়েছে সত্য কিন্তু যে কোন মুহূর্তে তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা আছে। এই সম্পর্কে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৭ জুলাই ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!