You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ ও শরণার্থী

সােনার ভারত খণ্ডনের এবং পাকিস্তান সৃষ্টির তথা অশান্ত, উন্মত্ত পাক-রাজনীতির অদূরদর্শিতরা প্রায়শ্চিত্ত শেষ ত হইল না বরং ইদানীং পাকিস্তানের মিলিটারী শাসকদের নরমেধ যজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার মা ভাই-বােনের ক্রন্দনরােল, প্রাণদান এসব সভ্যজগতের আকাশ বাতাস বিষাইয়া তুলিয়াছে। নিরপরাধ নারী শিশুর রক্তে বাংলাদেশের নদ-নদী, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ী লাল হইয়া গেল। বাংলার শত শত সহর ও পল্লী জনপদ আর শস্য শ্যামলা বাংলার বুক বিবর্ণও বিধ্বস্ত হইয়া গেল, বাংলার আলাে বাতাস বিষাইয়া গেল। আজ এহিয়াশাহী বর্বরতায় সভ্য জগৎ স্তম্ভিত।
মান সম্মান ও প্রাণ বাঁচাইবার জন্য হাজার হাজার শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম আর ত্রিপুরার বুকে আসিয়া মাথা গুজিবার স্থান খুঁজিতেছে। আমাদের সরকার এবং ভারতের সর্বশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান ও নর-নারী শরণার্থীদেরে আশ্রয় দান এবং তাহাদের খাদ্য দান করিতেছেন। আমরা যতটুকু জানি প্রত্যহ শত শত ভয় বিহ্বল শরণার্থী নরনারীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত দায়িত্ব বাড়িয়া চলিয়াছে। ইহার শেষ যে কবে হইবে তাহা নিশ্চয় করিয়া বলার উপায় নাই।
মানবতার দিক দিয়া তাহাদের প্রতি আমাদের যে কর্তব্য রহিয়াছে তাহা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস আছে জাতীয় সরকার এবং সর্বশ্রেণীর জনগণ শরণার্থীদের যথাসাধ্য সহায়সম্বলে কোন প্রকার ত্রুটি করিবেন না। অদৃষ্টের তীব্র পরিহাস আজ বাংলাদেশ হইতে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে যাহারা আশ্রয়প্রার্থী হইয়া আসিতেছেন তাহাদের দেশের পরিস্থিতি কবে যে স্বাভাবিক হইবে তাহা বলা শক্ত।
সুতরাং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচার বিবেচনার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী যথা কর্তব্য পালনের দায় ও দায়িত্ব হইতে গণতান্ত্রিক কোন রাষ্ট্র নিষ্কৃতি পাইতে পারে । এই ব্যাপারে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে আগাইয়া আসিতেই হইবে। আমরা শরণার্থীদের সাহায্য সহায়তার ব্যাপারে অধিকতর দূরদর্শিতার জন্য এবং বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানের জন্য আমাদের সরকারের বিশেষ মনােযােগ আকর্ষণ করিতেছি।

সূত্র: আজাদ, ৫ মে ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!