করিমগঞ্জে বাংলাদেশ হইতে শরণার্থী আগমন অব্যাহত
পাকিস্তান সরকার বাংলা হইতে ভারতে প্রবেশ করিবার সবগুলি রাস্তা বন্ধ করিয়া দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও নানা দিক দিয়া সহস্র শরণার্থী এখনও করিমগঞ্জ মহকুমায় প্রবেশ করিতেছেন। মাইলের পর মাইল পদব্রজে বা নৌকাযােগে প্রচুর বাধা বিপত্তি এবং অমানুষিক শারীরিক পরিশ্রম অগ্রাহ্য করিয়া ইহারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে প্রবেশ করিতেছেন। ইহাদের স্থান সংকুলানের জন্য লাতুতে তাবু খাটাইয়া সামরিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা হইতেছে। করিমগঞ্জ মহকুমার বত্রিশটি শিবিরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিলচরে নূতন নূতন শিবির খুলিয়া ইহাদের আশ্রয় দেওয়া হইতেছে।
ইতিমধ্যে করিমগঞ্জ মহকুমায় যে ৪০ সহস্র শরণার্থী আশ্রয় নিয়াছেন, তাহাদের সুষ্ঠু ত্রাণ কার্য্যের ব্যবস্থা করতে গিয়া প্রশাসন হিমসিম খাইতেছেন। বত্রিশটি শিবিরবাসী উদ্বাস্তুর সুষ্ঠু সাহায্য প্রদানের ব্যাপারে সরকারী প্রয়াসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয়ের অভাব বিশেষভাবে দৃষ্টিগােচর হইতেছে। মফঃস্বল অঞ্চলে সৰ্ব্বত্র রেশন পৌছান হইতেছে না। সেখানে স্থানীয়ভাবে রেশন সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু মফঃস্বলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহকারী না পাওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি হইতেছে। অধিকাংশ শিবিরেই (শহরেও) ওজন পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় সঠিক পরিমাণ সামগ্রী আসিয়া পৌঁছিতেছে কিনা তাহা যাচাই করিবার কোন সুযােগ নাই। খােদ শহরের উপরে মাদ্রাসাতে শিবির খােলার দুই সপ্তাহের মধ্যে জলের কোন ব্যবস্থাই বহুবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও গতকাল পর্যন্ত করা হয় নাই। লালফিতার বাঁধন এবং সরকারী বিভাগগুলির আমলাতান্ত্রিক মনােভাবের জন্য অত্যন্ত জরুরী প্রশ্নগুলির মীমাংসার জন্যও অহেতুক সময় নষ্ট হয় বলিয়া অভিযােগ পাওয়া গিয়াছে।
এ দিকে ডেপুটি কমিশনার করিমগঞ্জ মহকুমাকে কলেরা আক্রান্ত এলাকা বলিয়া ঘােষণা করা সত্বেও এই সম্পর্কে সতর্কতামূলক যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন, তাহার কিছুই নেওয়া হয় নাই। মফঃস্বলে কলেরার টিকা প্রদানের কোনও ব্যবস্থাই প্রায় অনুপস্থিত। লাতুতে সহস্র আগমনকারী উদ্বাস্তুর জন্য একজন মাত্র টাকা প্রদানকারী নিযুক্ত আছেন। ক্যাম্পগুলির আশেপাশের আবর্জনা পরিষ্কার করার প্রয়াস একান্তই অপ্রতুল, এবং কোনও জীবাণুনাশক ঔষধ নিয়মিতভাবে দেওয়া হয় না। যাহার ফলে কলেরা তাে বটেই, অন্যান্য সংক্রামক রােগের ব্যাপক বিস্তার ঘটিবার সমূহ সম্ভাবনা রহিয়াছে।
অপর দিকে এই সমস্যার মােকাবিলা করিতে গিয়া স্বাভাবিক প্রশাসনিক কায্যাদি প্রায় বন্ধ আছে। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও ত্রাণকাৰ্য্যে সরকারী প্রয়াসের মধ্যে বিস্তর ত্রুটির ফলে জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষোভ সঞ্চারিত হইতেছে।
-ষ্টাফ রিপাের্টার
সূত্র: যুগশক্তি, ১৪ মে ১৯৭১