You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.19 | স্বীকৃতি বিলম্বিত কেন? | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

স্বীকৃতি বিলম্বিত কেন?
-গণেশ দে

বিপদগ্রস্ত করিমগঞ্জ
বাতাসে ওপার থেকে ভেসে আসা বারুদের গন্ধ-বিষ—ওপারের আত্মজনের ভেসে আসা আর্তনাদের মর্মবিষ। কুশিয়ারার জল বিষাক্ত ক্লেদাক্ত, মাছ বিষাক্ত। দারুণ অভাব-বাজারে খাদ্য সামগ্রীর অভাব—যা পাওয়া যাচ্ছে তাতেও বীজানু জীবাণুর ভয়। | মানুষ আসছে কাতারে কাতারে। কলেরা নাচছে দুয়ারে দুয়ারে। ওপারে বর্বর দস্যুদের কাটামারা জুতাের পদশব্দ তাই সীমান্ত সহর করিমগঞ্জ আজ সদা সন্ত্রস্ত-অতন্দ্র। এরই ফাক দিয়ে একটা গম্ভীর বৈশাখী দিন এবার যেন প্রায় উড়ে ফসূকে পালিয়ে গেল। চির নূতনের ডাক’ নিয়ে ২৫শে বৈশাখ এবার দ্রুত সঞ্চরমান বলাকার মতই দিগন্তে মিলিয়ে গেল। অন্যবারের মনমাতানাে ধৈৰ্য্য এবার কোথায়? তবু করিমগঞ্জের এখানে ওখানেন’টা খালের পুলের পাশের, লংগাই রােডের রামকৃষ্ণমিশন রােডের এম. এম. সি স্কুলের প্রাঙ্গনের কৃষ্ণচূড়া ফ্লাওয়ার আর শিবিরগুলাে কার্পণ্য করেনি ফুলের ঢল নামাতে। পুকুর পারে ‘পাথর হয়ে যাওয়া কবি আজ সত্যি হয়ত পাথর হয়ে গেছেন। নাকি ঐ পাথর কবির হৃদয়েও বাজছে—বিশ্বের যেথা যত উঠে ধ্বনি? তা যদি হয় তবে পাথর কবি আবার হয়ত বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছেন
“পুণ্যে পাপে সুখে দুঃখে পতনে
উত্থানে মানুষ হইতে দাও তােমার সন্তানে।”
“বাংলার ভাই, বাংলার বােন।
এক হােক এক হােক এক হােক।
হে ভগবান।”
আমরা তার সাথে আজ যােগ দিয়ে বলি
বাংলার বজ্র বাংলার বিদ্যুৎ
বিধ্বংসী হােক, বিধ্বংসী হােক, বিধ্বংসী হােক
হে ভগবান।
শরণার্থীর চাপ, রােগের চাপ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ, নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের অভাবের চাপ সর্বোপরি এ সমস্ত পরিস্থিতির জন্য উদ্ভূত মানসিক চাপে আজ করিমগঞ্জ ভারাক্রান্ত। সারা কাছাড়ের দৃষ্টি কেন্দ্র আজ করিমগঞ্জ। করিমগঞ্জের খবরই আজ কাছাড়ের সেরা খবর।
এখন এই পরিস্থিতিতে যা প্রয়ােজন তা হচ্ছে করিমগঞ্জবাসীর অসীম মনােবল। এক হাতে রােগ শােক অভাবকে রুখে আরেক হাতে শরণার্থীদেরে বুকে টেনে নিতে হচ্ছে তাদের। আর তা তারা করে চলেছেন অসীম মনােবলে আর যােগ্যতার সঙ্গে।
করিমগঞ্জবাসীকে শুনতে হচ্ছে নিত্য নূতন ফার্স্ট হ্যাণ্ড সব নির্যাতনের কাহিনী দেখতে হচ্ছে অত্যাচারের শিকারদের অসহায় স্বরূপ। তাই জেলার অন্যান্য অংশ অপেক্ষা করিমগঞ্জের মন আজ বিক্ষুব্ধ বহুলাংশে। পূর্ব বাংলার স্বকীয়তায় বিশ্বের তথা ভারতের স্বীকৃতি দেওয়ায় যে টাল বাহানা চলেছে তা নিয়ে করিমগঞ্জ আজ বােধ হয় সবচেয়ে বেশী বিরক্ত আর ক্ষুব্ধ। কারণ কুশিয়ারার ওপারের চিৎকার, মারণাস্ত্রের শব্দ দিল্লী না পৌঁছলেও করিমগঞ্জ কানে তালা লাগিয়ে দেয়। কাতারে কাতারে শরণার্থীর ফটো রাজদরবারে তাদের দুঃখের কান্না পৌঁছাতে পারেনা অথচ সে কান্নায় আজ করিমগঞ্জের পথঘাট মুখরিত। মন্ত্রীরা ঘন ঘন আসছেন— “পৰ্যবেক্ষণ” নামক কাজটি করেই চলে যাচ্ছেন। করিমগঞ্জ তার নানা চাহিদার ফিরিস্তি যথারীতি মন্ত্রীদের ব্যাগে গুজে দিচ্ছে। তবে সব চাহিদার সেরা চাহিদা—সব কলােরােলের মূল ধারা আজ বােধহয়—স্বীকৃতি। “ভারত সরকার সর্বাগ্রে স্বাধীন বাংলাকে স্বীকৃতি দাও”
করিমগঞ্জের মিলন মেলায় আজ আরও একটা কথা ধরা পড়েছে—এত কিছু সত্বেও
ভাগাভাগি হয়েছিল সম্পদ যত খাল কেটে সীমানাও ছিল নির্ধারিত যােগ সেতু চাই ভাঙ্গি নাই আমরা তাই হলাে আজ প্রমাণ সন্দেহাতীত। ভাগ কি করেছিলেন সূর্যসেন শৌর্য-নজরুল কাব্য? রবীন্দ্রনাথের গীত?

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৯ মে ১৯৭১