You dont have javascript enabled! Please enable it!

নূতন শরণার্থী সমস্যা

পাকিস্তানের স্বৈরাচারী ডিক্টেটার ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাহার বর্বর জঙ্গীবাহিনী বাংলাদেশে যে নারকীয় তাণ্ডব চালাইয়াছে, তাহার বলি হিসাবে প্রায় ছয়লক্ষ শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করিয়াছেন। স্বাভাবিক মানবতা
বােধে উদ্বুদ্ধ হইয়া সরকার এই সমস্ত বিপন্ন মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু বিপুল দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিধ সমস্যারও মােকাবিলা করিতে হইতেছে।
প্রথমতঃ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গতি এই বিরাট সমস্যার মােকাবিলা করার উপযােগী নয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই দায়িত্বের সবটাই বহন করিতে অগ্রসর হইতে হইবে। দ্বিতীয়তঃ এই বিপুল জনস্রোতের আশ্রয় প্রদানের জন্য ভারত আদৌ প্রস্তুত ছিল না, তাই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার এই সম্পর্কে কোনরূপ সুসংবদ্ধ নীতি প্রণয়ন করেন নাই। বিভিন্ন এলাকায় তাই বিভিন্ন ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়া সরকারী কর্মচারীরা সম্মুখীন হইতেছেন। এই সম্পর্কে একটি কেন্দ্রীয় নীতি অনতিবিলম্বে বিশদভাবে প্রণয়ন করা প্রয়ােজন। তৃতীয়তঃ আইন শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারগুলিকে কিছুটা সমস্যায় পড়িতে হইতেছে। এই বিপুল জনসমষ্টির সঙ্গে ছদ্মবেশধারী ইয়াহিয়া খানের কিছু গুপ্তচরও ভারতে ঢুকিয়া পড়িয়াছে! ইহার বিভিন্ন ধরণের গুজব, বিশেষতঃ সাম্প্রদায়িকতার মনােভাব ছাড়াইবার ব্যাপারে তৎপরতা প্রদর্শন করিতেছে। এই সমস্ত গুপ্তচর ও উস্কানিদাতাদের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশেষ পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হইতেছে যে, এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে শরণার্থীর সংখ্যা আরাে বহুগুণ বৃদ্ধি পাইবে তাহা নিঃসন্দেহে বলা যায়। দীর্ঘদিন ধরিয়া এই আশ্রয়প্রার্থীদের দায়িত্ব বহন করা ভারতবর্ষের পক্ষে একা সম্ভব নহে। এই সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমুহের বিশেষ দায়িত্ব রহিয়াছে। ইতিপূর্বে অন্যত্র এই ধরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে স্বীয় দায়িত্ব পালন করিতে দেখা গিয়াছে।
বাংলাদেশের নিপীড়িত নরনারী শিশুর সাহায্যার্থেও সকলে অবিলম্বে অগ্রসর হইবেন এবং পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর নৃশংস হত্যালীলা বন্ধ করিতে কমনওয়েলথ ও রাষ্ট্রসঙ্ কাৰ্যকরী ব্যবস্থা অবলম্বন করিবেন। ইহাই আশা করিতেছি।

সূত্র: যুগশক্তি, ২৩ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!