ভারত সতর্ক ও সচকিত রহিয়াছে
পাকিস্তানের মতিগতি লক্ষ করা হইতেছে আসাম বিধান সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি:শিলং ২৬ শে অক্টোবর অদ্য আসাম বিধান সভায় এক বিবৃতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মহেন্দ্র মােহন চৌধুরী বলেন-পাকিস্তানী সৈন্যদের প্ররােচনামূলক কাজে এবং পাক অন্তর্ঘাতকদের ক্রিয়াকলাপ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও আসাম সরকার অবহিত ও সচকিত থাকিয়া দেশের নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার যথােচিত ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন।
যদিও সীমান্ত এলাকার কোন কোন স্থানে পাক সৈন্যেরা অহেতুক গুলিবর্ষণ করে তৎসত্বেও সীমান্ত অঞ্চলের জনগণের মনােবল অটুট আছে। জনগণ আতংকিত হইতেছেনা। সরকারী প্রচার বিভাগ হইতে সীমান্ত এলাকার জনগণের মধ্যে প্রকৃত বিষয় প্রচার করা হইতেছে এবং যাহাতে গুজব বা আতংক অযথা ছড়াইতে না পারে তৎপ্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা হইতেছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন পাকিস্তানের প্ররােচনামূলক কাজে আমাদের সীমান্তের কোন কোন অঞ্চলে বেশ কিছু লােকের কষ্ট ও অসুবিধা হইতেছে। সরকার ইহা জানেন। তবে এটুকু জোর দিয়া বলা চলে যে আমাদের দেশ রক্ষী বাহিনী যথাযথভাবে পাকফৌজের বা পাকিস্তান সরকারের দ্বারা সংসাধিত বা পরিকল্পিত যে কোন হামলার মােকাবেলায় প্রস্তুত। ধৈৰ্য্য ও সংযমের সহিত মনােবল অটুট রাখিয়া চলা আমাদের উচিত।
হায় এহিয়া খান
সম্পাদক সমীপেষু,
আপনার পত্রিকার পাঠকদের অনেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনে থাকেন। কয়েকদিন আগে ঐ বেতার কেন্দ্র থেকে একটা ছােট নাটক প্রচারীত হয়েছিল। তার বিষয়বস্তু ছিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল এহিয়া খানের মানসিক অবস্থার একটি চিত্র অঙ্কন। এই প্রসঙ্গে আপনার পত্রিকার মাধ্যমে আমি কিছু আলােচনা করতে চাই। আমার এই চিঠিখানি আপনার পত্রিকায় ছাপালে কৃতজ্ঞ হব।
ঐ নাটকে পূর্ববাংলার জঙ্গীশাহী সরকারের কার্যকলাপে প্রধান নায়ক এহিয়া খান। তারই আদেশে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ নরনারী ও শিশু খানসেনাদের হাতে নির্যাতিত ও নিপিড়িড়িীতি হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। এই সব লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত ও নিপীড়িত আত্মা প্রতিশােধ নিতে সমস্ত পাকিস্তানের আকাশে বাতাসে মিশে রয়েছে এহিয়া খান যেন তাদের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এবং বর্তমানে তাকে সান্তনা দেবারও লােক নাই। এমন কি যাদের আধিপত্য বজায় রাখবার জন্য এবং যাদের মঙ্গলের জন্য তিনি এত অন্যায় অত্যাচার করলেন নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর, আজ তারাও তাকে স্বা[সা]ন্তনা দেওয়া দূরের কথা, ঘৃণা করছে। প্রেসিডেন্ট সাহেব স্বপ্নে বিভীষিকা দেখেন। পূর্ববাংলায় তার কৃত কার্যকলাপের ছবি ফুটে উঠে স্বপ্নে। তিনি দেখতে পান আল্লার দরবারে তার বিচার হচ্ছে, সকলেই তার বিপক্ষে সাক্ষী দিচ্ছে, স্বপক্ষে কেউ নাই। পূর্ববাংলার বর্তমান অবস্থার জন্য সকলেই তাকে দোষী বলে একবাক্যে চিৎকার করে উঠছে। আস্তে আস্তে সকলেই দরবার ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই তিনি শুনতে পান পৈশাচিক উল্লাস। তার নিশ্বাস প্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দরবার কক্ষ সেই পৈশাচিক উল্লাসে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠে, আর তিনি ভয়ে মূৰ্ছা যাওয়ার উপক্রম হন।
নাটকটি কাল্পনিক হলেও বাস্তবের সঙ্গে আমরা মিল খুঁজে পাই। শুধু মিল বললে ভুল হবে -একেবারে হুবহু মিল রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সাহেবের অশান্তি কিন্তু তার নিজেরই সৃষ্টি এবং তারই ফল শুরু হয়েছে তার মানসিক বিকারের রূপ নিয়ে।
– ইতি ৩১-১০-৭১ আব্দুল মতিন, দাশগ্রাম, করিমগঞ্জ
সূত্র: আজাদ, ৩ নভেম্বর ১৯৭১