স্বাধীনতা দিবসে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বেতার ভাষণ
আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমহেন্দ্র মােহন চৌধুরী স্বাধীনতা দিবসে আসামবাসীদের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দান করেন তাহা ১৫ আগষ্ট ৮টায় গৌহটী বেতারকেন্দ্র হইতে প্রচারিত হয়।
-বাংলাদেশ প্রসঙ্গে-
বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে শ্রী চৌধুরী বলেন—বাংলাদেশে যাহা ঘটিতেছে তাহা হইতে পৃথিবীর গণতন্ত্র ভাবিবার বহু কিছু দেখা দিয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গিগােষ্ঠী জনগণের ভােটের ও গণতন্ত্রের মর্যাদার পরিবর্তে ব্যাপক গণহত্যায় মাতিয়াছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবীদারদেরে নৃশংসভাবে হত্যা করিয়া, পাশবিক অত্যাচারে মাতৃজাতিকে খুন জখম করিয়া শিশু বৃদ্ধদেরে কাতল করিয়া সেখানে নারকীয় কাণ্ড চলিতে থাকায় ৮০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ ও মান বাঁচাইবার জন্য আমাদের দেশে আসিয়া আশ্রয় লইয়াছে এবং আজও আসা বন্ধ হয় নাই।
ভারতের মত একটা গরীব রাষ্ট্রের পক্ষে ৮০ লক্ষাধিক শরণার্থীর চাপ বহন করা কঠিন ব্যাপার। বাংলাদেশের স্বাভাবিকতার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহারা ফিরিয়া যাইবেন। এদেশে তাহাদের স্থায়ীভাবে বসবাস করিতে দেওয়া হইবেনা।
—পাক গুপ্তচর প্রসঙ্গে-
শ্ৰীচৌধুরী বলেন শরণার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে এহিয়াচক্রের বহু গুপ্তচর আসামে প্রবেশ করিয়াছে। আমাদের মাঝে বিরােধ সৃষ্টি এবং নাশকতামূলক কাজ করা তাহাদের লক্ষ্য। আমাদের কোন লােক যাহাতে ঐসব কুকৰ্ম্মকারীদেরে কোন আশ্রয় না দেন বা সহায়তা না করেন তপ্রতি কড়া নজর রাখিতে হইবে।
সরকার কঠোর হস্তে নাশকতাকারীদেরে তথা পঞ্চম বাহিনীকে দমন করিতে ত্রুটি করিবেন না।…
রাজাকারকে গ্রেপ্তারের পর মুক্তি
এই সপ্তাহে কিছু সংখ্যক অসামরিক লোেক ভারতীয় সীমান্তে একজন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করে। বাঘরসাংগনের কোন এক সফিক মাষ্টার উক্ত রাজাকারকে থানায় পৌঁছাইয়া দেওয়ার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে নাকি রাজাকারীকে ছাড়িয়ে দেয়। এই মর্মে স্থানীয় পুলিশেও একটী সংবাদ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ। উক্ত সফিক মাষ্টারের বাড়ীতে সন্দেহভাজন লােকদের আনাগােনাও আছে বলিয়া শােনা যায়। এই সম্পর্কে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২৫ আগস্ট ১৯৭১