You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.11 | আক্রান্ত হলে পারস্পরিক সহায়তা শান্তি, নিরাপত্তায় ভারত-সােভিয়েট চুক্তি স্বাক্ষর | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

আক্রান্ত হলে পারস্পরিক সহায়তা
শান্তি, নিরাপত্তায় ভারত-সােভিয়েট চুক্তি স্বাক্ষর

ভারত ও সােভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র গত ৯ই আগষ্ট দুদেশের মধ্যে মৈত্রী, শান্তি ও সহযােগিতার এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সােভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই প্রেমিকো ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরণ সিং এবং ইউ এস এ এর কূটনৈতিক মহলে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।
চুক্তির সম্পূর্ণ বয়ান নিম্নরূপ-

অনুচ্ছেদ-১
চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুটি পক্ষ নিশ্চয় সহকারে ঘােষণা করছে যে—সংশ্লিষ্ট দুটি দেশ ও তাদের জনগণের মধ্যে স্থায়ী শান্তি বিরাজমান থাকবে। প্রতিটি পক্ষ অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতির প্রতি শ্রদ্ধাবান থাকবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। দুটি পক্ষই তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, মৈত্রী ও সুপ্রতিবেশীসুলভ আরচণকে সংহত করবে ও সম্প্রসারিত করবে।
অনুচ্ছেদ-২
দুটি পক্ষ তাদের স্ব স্ব দেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে, সম্ভাব্য সকল উপায়ে সহযােগিতার সঙ্কল্প জানিয়ে এই ঘােষণা করছে যে, এশিয়া তথা সারা বিশ্বে শান্তি রক্ষা এবং তা দৃঢ় করার জন্য অস্ত্র প্রতিযােগিতা বন্ধ করার জন্য ও পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
অনুচ্ছেদ-৩
উভয় পক্ষ, জাতি ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষ ও রাষ্ট্রের সমতার মহৎ আদর্শে বিশ্বাসী। উভয় পক্ষ ঔপনিবেশিকতাবাদ ও বর্ণবৈষম্যের নিন্দা করছে এবং এই অভিশাপ গুলির সম্পূর্ণ নির্বাসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সঙ্কল্পের কথা পুনরায় ঘােষণা করছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য উভয় পক্ষ অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযােগিতা করার কথাও ঘােষণা করছে।
অনুচ্ছেদ-৪
ভারত সাধারণতন্ত্র রাশিয়ার শান্তিপূর্ণ নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই নীতির লক্ষ্য সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে মৈত্রী ও সহযােগিতা স্থাপন। | সােভিয়েত সাধারণতন্ত্রও ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা বিশ্বাস করে এই নীতি বিশ্বশান্তি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও উত্তেজনা হ্রাসের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযােগ্য অবদান।
অনুচ্ছেদ-৫
উভয় পক্ষ, স্থায়ী বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে গভীরভাবে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযােগিতার ওপর গুরত্ব আরােপ করছে। এই উদ্দেশ্যে উভয় পক্ষ স্থির করছে, দুটি দেশের স্বার্থ জড়িত প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যার ব্যাপারে তারা যােগাযােগ রাখবে। পারস্পরিক বৈঠক, মত বিনিময়, সরকারী প্রতিনিধি দলের সফর ও দুটি সরকারের বিশেষ দূত প্রেরণের মাধ্যমে এই যােগাযােগ রক্ষা করা হবে।

অনুচ্ছেদ—৬
উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, কারিগরী প্রভৃতি বিষয়ের সহযােগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অনুচ্ছেদ-৭
উভয় দেশের মধ্যে যে মৈত্রী সম্পর্ক বর্তমান আছে তার ভিত্তিতে উভয় পক্ষ ঘােষণা করছে যে তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণের উদ্দেশ্যে কোন সামরিক আঁতাত বা মিতালি তারা গড়ে তুলবে না বা তাতে যােগ দেবে না।
কেউ কারুর ওপর আক্রমণ করবে না এবং কারুর ওপর আক্রমণের জন্য কেউ তাদের নিজেদের অঞ্চল আক্রমণকারীকে ব্যবহার করতে দেবে না।
অনুচ্ছেদ-৮
উভয় পক্ষ ঘােষণা করছে, এক পক্ষ যদি আক্রান্ত হয়, তবে অপর পক্ষ আক্রমণকারীকে কোনরূপ সাহায্য দেবে না। যদি দু পক্ষের মধ্যে কোন পক্ষ আক্রান্ত হয় বা আক্রমণের হুমকীর মুখােমুখি হয় তবে তারা অবিলম্বে পরামর্শ বৈঠকে বসবে এবং তাদের নিশ্চিত শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যথােপযুক্ত ও সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অনুচ্ছেদ—৯
উভয় দেশ, এই চুক্তির বিরােধী কোন ব্যাপারে অপর কোন একটি রাষ্ট্র বা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গােপনে চুক্তিতে বা বাধ্যবাধকতায় আসবে না।
অনুচ্ছেদ-১০
এই চুক্তি ২০ বছরের জন্য সম্পাদিত হচ্ছে। কোন একটি পক্ষ এই চুক্তি বাতিল করার জন্য এক বছরের নােটিশ না দিলে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, স্বাভাবিকভাবেই পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ সম্প্রসারিত হয়ে যাবে। এই চুক্তির অনুমােদন সাপেক্ষ এবং স্বাক্ষরিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে অনুমােদন-পত্র বিনিময়ের পর মস্কোতে তা অনুমােদিত হবে এবং তখন থেকেই বলবৎ হবে।
অনুচ্ছেদ-১১
যদি চুক্তির কোন ধারার ব্যাখ্যা সম্পর্কে কোন মতপার্থক্য দেখা দেয়, তবে উভয়পক্ষ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বােঝাপড়ার মনোেভাব নিয়ে আলােচনায় বসে মীমাংসায় আসবে।
এই চুক্তি সংশ্লিষ্ট সরকারগণের অনুমােদন সাপেক্ষ এবং অনুমােদন জ্ঞাপক পত্রাদি বিনিময়ের তারিখ থেকেই চুক্তি কার্যকরী হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের এক মাস মধ্যে মস্কোতে চুক্তি অনুমােদন ও কাগজপত্র বিনিময় হবে।
অনুচ্ছেদ-১২
কোন একটি অনুচ্ছেদ বা অনুচ্ছেদসমূহের ব্যাখ্যা নিয়ে চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোন মতদ্বৈধ দেখা দিলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা দান এবং বুঝাপড়ার পথে দ্বিপাক্ষিকভাবে তার সমাধান করতে হবে।
উপরােক্ত পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত দূতগণ হিন্দী, রাশিয়ান ও ইংরাজীতে সমস্ত বয়ানই সমানভাবে প্রামাণ্য বর্তমান চুক্তি ও স্বাক্ষর করেছেন।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১১ আগস্ট ১৯৭১