You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি

[প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাম্প্রতিক সফরের সময় স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে। কয়েকটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্থানাভাববশতঃ গত সংখ্যায় তা প্রকাশ করা সম্ভব হয় নি। সে জন্য আমরা দুঃখিত। -বার্তা সম্পাদক]।
করিমগঞ্জ পৌরসভার পক্ষে পৌরপতি শ্রীপ্রমােদরঞ্জন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে যে স্মারকলিপি পেশ করেন তাতে ইয়াহিয়া খানের শাসনকালে অনুষ্ঠিত জঘন্যতম অত্যাচারের ফলে বাংলাদেশ থেকে যেভাবে শরণার্থীরা সীমান্তবর্তী করিমগঞ্জ সহরে দলে দলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তা বর্ণনা করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয় যে দেশ বিভাগের পর থেকেই এই ক্ষুদ্র সহর উদ্বাস্তুদের চাপ সহ্য করে আসছে যার ফলে সহরের সমস্যা ও ময়লা পরিষ্কারের সমস্যা দেখা দেয়। পৌরসভা মাত্র ত্রিশ হাজার লােকের সেবা করার দায়িত্ব নিতে পারেন, কিন্তু এখন শিবিরগুলােতে আরাে ত্রিশ হাজারের মতাে লােক রয়েছেন। এ অবস্থার মােকাবেলা করার জন্যে সরকার থেকে উপযুক্ত সাহায্য পাওয়া আবশ্যক। করিমগঞ্জ হাসপাতালের উন্নয়ন সাধন, যােগাযােগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা প্রভৃতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। করিমগঞ্জ সীমান্তে প্রায়ই পাকিস্তানী হামলা হয় বলে প্রকাশ করে সম্প্রতি সুতারকান্দি-জারাপাতা এলাকার পাকিস্তানী সেনাদল কর্তৃক ভারতীয় এলাকায় ভারতীয়দের হত্যার প্রতি তাঁর মনােযােগ আকর্ষণ করে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে অধিকতর যােগাযােগ প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানান হয়। সীমান্তের জন্য একজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দায়িত্বশীল অফিসার নিযুক্ত করার দাবী জানান হয়। উক্ত অফিসার সামরিক ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যােগাযােগ করে চলবেন। পৌরসভার উক্ত স্মারকলিপিতে শিবিরের বাইরে অবস্থানকারী উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করার আবেদন জানান।
বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটির পক্ষে কমিটির সভাপতি শ্রীসুরেশচন্দ্রদেব (প্রাক্তন এম পি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরাে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এতে শরণার্থীদের সঙ্গে আগত সমাজ বিরােধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, শিবিরের বাইরে অবস্থানকারী রেজিষ্টারীকৃত শরণার্থীদের জন্য সাহায্য ব্যবস্থা, শরণার্থী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা এবং শরণার্থী শিক্ষকদিগকে এই কাজে লাগানাে, করিমগঞ্জসহ কাছাড়ে মাইক্রোওয়েভ টেলিকমিউনিকেশন যােগাযােগ প্রতিষ্ঠা, সীমান্ত রক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধিকতর যােগাযােগ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করার দাবী জানানাে হয়। সীমান্তে বিদেশী গুপ্তচর, গােলযােগ সৃষ্টিকারী প্রভৃতির ওপর কড়া নজর রাখার জন্য ইন্টেলিজেন্স বিভাগকে আরাে শক্তিশালী করে সমাজবিরােধী ব্যক্তিদের পাকড়াও করার ব্যবস্থা করার জন্যও স্মারকলিপিতে আবেদন জানানাে হয়।
মহকুমা পরিষদের পক্ষে সভাপতি শ্রীরাকেশচন্দ্র দাস এক স্মারকলিপিতে পাকসেনার আক্রমণে গৃহহারা সুতারকান্দি ও জারাপাতা গ্রামের অধিবাসীদের জন্য শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ও সহরের স্কুলগুলাে থেকে অবিলম্বে শরণার্থী অপসরণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা সুষ্ঠু রাখার জন্য অনুরােধ করা হয়।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্রীঅরবিন্দ চৌধুরী একটি স্মারকলিপিতে মেঘালয়ের শরণার্থীদের উপর অশােভন ব্যবহার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং অবিলম্বে মেঘালয়ের শরণার্থীদের কাছাড় জেলায় স্থানান্তরীত করার দাবী জানান।
করিমগঞ্জ মার্চেন্টস এসােসিয়েশনের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তাতে বিশেষ করে পরিবহন যােগাযােগ অব্যস্থা, বন্যা প্রতিরােধ এবং জেলা শিল্পন্নয়নের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সূত্র: যুগশক্তি, ২৫ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!