পাকিস্তানের মধ্যেও অশান্তি
জঙ্গী শাসক কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নির্দয়ভাবে দমনের চেষ্টা পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ তাে করতে পারেই নি, বরং তাদেরকে অধৈর্য ও অবাক করে তুলেছে। এমন কি জেনারেল ইয়াহিয়ার ভুট্টোর মত সমর্থকরাও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার জন্য সােরগােল তুলেছে। মনে হচ্ছে তারা হঠাৎ বুঝতে পেরেছেন যে তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
পশ্চিম পাকিস্তানে বিশেষ করে পাক্-অধিকৃত কাশ্মীরে অসন্তোষের বজ্রনির্ঘোষ লণ্ডনেও এসে পৌঁছেছে কারণ, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অধিবাসী যারা ব্রিটেনে বসবাস করেছেন তারা একটি কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্ট গঠন করেছেন। এই ফ্রন্টের নেতা হচ্ছেন মােহম্মদ ইউসুফ মানি, মীরপুরের নামজাদা উকিল। ইনি লণ্ডনে প্র্যাকটিস করছেন। শ্রীমানি লণ্ডনে সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদের বলেছেন যে, বর্তমানে বৃটেনে বসবাসকারী পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ২০,০০০ নাগরিক পাকিস্তানের উৎপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র তাদের দেশেই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর নন, বাংলাদেশের আন্দোলনকে সকল রকমের সম্ভাব্য সাহায্য দেওয়াও তাদের উদ্দেশ্য।
কাশ্মীরী নেতা ঘােষণা করেছেন যে, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার উইংকমাণ্ডার, এম. জাঞ্জুয়ার নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী সাহায্য সমিতির সাথেও সহযােগিতা করবে বলে তার দল স্থির করেছে। এই সমিতির নেতাদের মধ্যে আছেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক হামজা আলভি, পাকিস্তান টাইমস্ এর, প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার শ্রীনাসিম বাজোয়া এবং বহু ছাত্র ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। শীইউসুফমানি সাংবাদিকদের বলেছেন যে, পাকিস্তানী শাসকরা সৰ্ব্বপ্রকারে এই সমিতির সদস্যদের হয়রান করছে। তাদের পরিবারের যে সব সদস্য পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বাস করেছেন তাদের উপর অত্যাচার চালানাে হচ্ছে।
ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানী, বেলজিয়ামের বৃহদায়তন কাশ্মীরী জনগণও এই কাশ্মীর মুক্তি-ফ্রন্ট এর সমর্থক। শ্রীমানির পরিকল্পনা আছে নিউইয়র্কে গিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কাছে তিনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণের দুঃখ কষ্টের কথা বললেন। তিনি বলেছেন—পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আজ যে নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন, ঠিক সেই রকম অত্যাচার সহ্য করেছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অধিবাসীরাও। ( ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সরকারী সংবাদ সংস্থা পাকিস্তান প্রেস ইন্টার ন্যাশনাল (পি, পি, আই) পরােক্ষ ভাবে স্বীকার করেছে যে, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপক অসন্তোষ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। (কম্পাস, কলিকাতা)।
সূত্র: আজাদ, ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১