মাত্র চার মাস চালিয়ায় যেতে পারলে –
পাক জঙ্গীশাহী খতম হবে
আসামের অর্থমন্ত্রী শ্রীত্রিপাঠীর বিবৃতি
শের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যদি আরও চার মাস যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বনিয়াদ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে, আর সাথে সাথে তার সামরিক শক্তিও ভেঙ্গে পড়বে।
এক বিবৃতি প্রসঙ্গে এই কথা বলে আসামের অর্থমন্ত্রী শ্রীকামাখ্যা প্রসাদ ত্রিপাঠী বলেছেন যে পাকিস্তানে বিদেশী মুদ্রার পরিমাণ আট কোটি ডলার। তা থেকে আজ মাসিক দুকোটি ডলার করে খরচ হচ্ছে। কাজেই চার মাসের মধ্যেই ঐ সঞ্চিত বিদেশী মুদ্রা খতম হয়ে যাবে। ( ইতিমধ্যে পাকিস্তানী টাকার মূল্য হ্রাস পেয়ে ডলার প্রতি ৪.৭৬ থেকে ১৪ টাকায় নেমে গেছে। শ্ৰীত্রিপাঠী বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান ২০০ কোটি টাকা বিদেশী মুদ্রা আয় করত। ওই আয় এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং একদিকে যেমন বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় যেমন চার মাসে খতম হয়ে যাবে। অপর দিকে শিল্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের আয় ২০০ কোটি টাকা থেকেও বঞ্চিত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন যে শুধু তাই নয়। পূর্ব পাকিস্তান বিদেশী মুদ্রার তিন ভাগের দুইভাগ উপায় করে তিন ভাগের এক ভাগ খরচা করত। আর পশ্চিম পাকিস্তান তিন ভাগের একভাগ আয় করে তিন ভাগের দুইভাগ নিজে ভােগ করতাে। এখন পূৰ্ব্ব-পাকিস্তান থেকে ঐ আয় শূন্যের কোঠায় এসে গেছে অথচ পূৰ্ব্বঅংশে ব্যয়ের মাত্রা হয়েছে তিন ভাগের দুই ভাগ। এর অর্থ হল আয়ের কোঠায় শূন্য নিয়েই পাকিস্তানের সমস্ত খরচা চালাতে হচ্ছে। সুতরাং আর চার মাস বাদে পাকিস্তানকে পূৰ্ব্বঅংশে যুদ্ধ চালাতে হবে—সঞ্চয় শূন্য, আয় শূন্য নিয়ে অথচ ব্যয় থাকবে অব্যাহত।
সুতরাং যদি বাংলাদেশের সংগ্রামীরা স্বাধীনতা যুদ্ধ আর চার মাসের উপরে চালিয়ে নিতে পারেন। তাহলেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা একেবাইে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
এটা ঘটবে চারমাসব্যাপী বর্ষাকালের পরে। ত্রিপাঠী বলেন যে বিদেশী পূর্বপাকিস্তানীরা ৯০ কোটি বিদেশী বিনিময়যােগে মুদ্রা অর্জন করে তা দেশে পাঠিয়ে থাকেন। ঐ মুদ্রা যদি বিদেশের পাকিস্তানী ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংক মারফত যদি পূৰ্ব্ববাংলার চলে আসে তাহলে পাকিস্তানের ভেঙ্গে পড়ার ব্যবস্থা পূর্ণ হবে।
সূত্র: আজাদ, ২ জুন ১৯৭১