পাকিস্তানী অপপ্রচার
ভারত একটি গণতান্ত্রিক সমাজবাদী রাষ্ট্র, ইহা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র নহে। ভারত সম্প্রসারণবাদী নয়, ইহা পরদেশের উপর লালসা করেনা। বিশ্বের সকল দেশের প্রতি ভালবাসা ও প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখিয়া চলা ভারতের পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা।
ভারতের নিকটতম ঘনিষ্ঠ-প্রতিবেশী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাহা ঘটিতেছে, এহিয়াশাহী বর্বরতায় বাংলায় যে তাণ্ডব চলিতেছে, যাহার ফলে প্রতিবেশী ভারতের জনজীবনে দারুণ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়াছে, হাজার হাজার মানুষের মরণ-ক্রন্দন, হাহাকার, দুঃখ দুর্দশা ভারত চোখ কান বুজিয়া বরদাস্ত করিতে পারেনা। ভারতের সংবাদপত্র, ভারতের আকাশবাণী সেগুলির নিম্নতম অংশের প্রচার করিতেছে মাত্র। মানবতা এবং প্রতিবেশিত্ব এসব দিক দিয়া ইহা অপরিহার্য বলিয়াই ভারত বা ভারতবাসীরা চায়না অহেতুক ভাবে ফাসাদে জড়াইয়া পড়া কিন্তু পাকশাসকগােষ্ঠীর অনাচারে, অত্যাচারে, বর্বরতায় এবং অমানুষিকতায় ভারত আজ স্তব্ধ, ব্রিত এবং বহু দায়দায়িত্বের অংশীদার হইয়া পড়িতেছে। শুধু ভারতই নহে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে আজ পাকিস্তানী অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার ও হত্যালীলার চিত্র ফুটিয়া উঠিতেছে, প্রকাশিত হইতেছে।
কিন্তু পাকশাসকগােষ্ঠী নিজেদের দুরপনেয় কলঙ্ক কালিমা চাপা দেওয়ার জন্য নানাভাবে বিশেষতঃ পাক রেডিও মারফতে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাইয়া জনমত বিভ্রান্ত করিতে ত্রুটি করিতেছে না। লজ্জা, সৌজন্য এসবের মাথা খাইয়া পাকিস্তান নিজেদের কাটা কান ঢাকিবার জন্য মিথ্যার শিরস্ত্রাণ বাঁকা করিয়া চলিতেছে।
পাকিস্তানের এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভারত পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের হালচাল পর্যবেক্ষণ করিয়া পাকশাসকদের সাবুদ করার জন্য আহ্বান জানাইতেছে।
আমাদের দেশের যে বা যাহারা লাইসেন্সহীন বা লাইসেন্সওয়ালা রেডিও মারফতে পাক অপপ্রচার শােনার বা নিজেদের চিন্তাধারাকে বিভ্রান্ত করার পথে চলেন তাহাদের হুশিয়ার হওয়া প্রয়ােজন। কেননা এ ভাবেই দেশে বিভীষণ পঞ্চমবাহিনী সৃষ্টি হয়। যাহারা নিজেদের দেশ ও মাতৃভূমির বিরুদ্ধে শত্রুদের অপপ্রচার শ্রবণ করিয়া নিজেরা বিভ্রান্তিতে পড়িবার পথ পান তাহারাই চক্ষুশূল বা ক্ষতিকারক পর্যায়ের হইয়া যান। অসতর্ক আলাপ আলােচনায় তাহাদের স্বরূপ প্রকাশ হইয়া পড়িতে পারে বা পড়ে।
ভারতের প্রত্যেক নাগরিকেরই বােঝা উচিত ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী”, বা “হুবুল ওয়াতন মিনাল ঈমান”। অর্থাৎ নিজের দেশকে ভালবাসা, নিজের দেশকে মহান করা ধর্মবিশ্বাসেরই অঙ্গ।।
পাকিস্তানী অপপ্রচার মুক্ত থাকিয়া কথায়, কাজে আচরণে মাতৃভূমি ভারতের সার্বভৌমত্বের ও অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক যথাকৰ্তব্য পালন করা ভারতের প্রত্যেক নাগরিকেরই পবিত্র কর্তব্য।
দেশ ও জাতির বর্তমান যুগসন্ধিক্ষণে বাস্তবমুখী হইয়া রাষ্ট্র নেতাদের নির্দেশ ও উপদেশ যথাযথভাবে পালন করিবার গুরুত্ব ও তদনুযায়ী কাজ করার দায়িত্ব সর্বাগ্রে প্রয়ােজন।
সূত্র: আজাদ, ৯ জুন ১৯৭১