You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তানী অপকৌশল

পাকিস্তানী সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য ভারতের তথা ভারতবাসীর শান্তি, শৃঙ্খলাকে বিপন্ন করা। এই উদ্দেশ্য সফল করতে পাকিস্তানের বর্তমান জঙ্গী শাহী সরকার কত চেষ্টাই না করে চলেছেন। পাকিস্তানের পৃষ্ঠপােষকতায় এবং ষড়যন্ত্রে আমাদের জম্মু ও কাশ্মীরে প্লেবিসাইট—ফ্রন্ট নামে একদল গড়ে উঠেছিল শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে। পাকিস্তানের অর্থে ও সাহায্যে পুষ্ট এই দল ক্রমশঃ কাশ্মীরবাসীদের মধ্যে বিবাদের এবং বিচ্ছেদের বীজ ছড়াতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু হায় আল্লা, আবদুল্লা সাহেব কি জানতেন যাদের জন্য তিনি এত কষ্ট করছিলেন তারাই তার সর্বনাশ করবে। তারপরই এ বছরের প্রথমদিকে সরকার এই সর্বনাশা দলটিকে বেআইনী বলে ঘােষণা করলেন এবং আবদুল্লা সাহেবকে কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত করলেন।
পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর অঞ্চলের বর্তমান সভাপতি আব্দুল কাইউম খান সাহেব যিনি ছলে, বলে কৌশলে সমস্ত জম্মু ও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করে চলেছেন, প্লেবিসাইট ফ্রন্ট বেআইনী ঘােষিত হওয়ায় খুবই মর্মাহত হবারই কথা। বার বার তাদের যত্ন সহকারে তৈরী পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই ভারতের প্রতি তাদের বিদ্বেষ আরও বেড়ে গিয়েছে। আবদুল্লা সাহেবের উপর যে সমস্ত বাধা নিষেধ আরােপ করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বার বার তাদের এই বৈরী মনােভাবের পরিচয় দিতে বিরত হতে পারেন নাই। কি করে তা সম্ভব? তারা যে কাশ্মীরবাসীকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসেন এবং তাদের স্বর্গসুখ দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তান সরকার একটা মােটা টাকা খরচ করে চলেছেন পাকিস্তানী অনুচরদের নানা কথা—কৌশল শিখিয়ে ভারত সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে ও ভারতের ক্ষতিসাধন করতে। যদিও পূর্ববাংলা প্রায় আলাদা হয়ে গিয়েছে এবং এই গত কয়েকমাসে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার চরমতম অবনতি ঘটেছে, তথাপি পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ ভারত বিরােধী, কার্যকলাপ থেকে বিরত হন নাই। কিন্তু এই নিদারুণ পরিস্থিতিতেও যে তারা হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত হবেন বলে ধরে নিলে ভুল করা হবে। নিজেদের দেশ দেনার দায়ে বিক্রী হয়ে গেলেও পাকিস্তান সরকার ভারত বিরােধী কার্যকলাপ থেকে বিরত হতে পারেন না। কারণ পাকিস্তান জন্মই নিয়েছিল শত্রুভাবাপন্ন মন নিয়ে, যার প্রথম প্রয়াস কাশ্মীরে সশস্ত্র আক্রমণ। কিন্তু হায় তাদের এত চেষ্টাও সফল হল না। যাদের তারা ভারতের কবল থেকে মুক্তি দিতে চান তারা যে মুক্তি মােটেই চান না। পাকিস্তানী অভিধানে মুক্তির অর্থ কি তার জ্বলন্ত উদাহরণ পূৰ্ব্ববঙ্গ যাকে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিয়েছিলেন গত ২৩ বছর পূর্বে। কিন্তু পূৰ্ব্ববঙ্গে আবার মুক্তি সংগ্রাম কেন এবং কাদের বিরুদ্ধে?

সূত্র: আজাদ, ৩০ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!