You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিফৌজের বিরাট সাফল্য

জকিগঞ্জ এলাকা পাক কবলমুক্ত ডউকী ও জৈন্তাপুর অঞ্চলে ২০ কিলােমিটার অঞ্চল মুক্তিফৌজের করায়ত্ত আখাউড়া পর্যন্ত মুক্তিফৌজের দ্রুত অগ্রগতি চুড়খাইতে দুই পক্ষে তুমুল লড়াই- পাকিস্তানী সৈন্যদের পশ্চাদপসরণ সমগ্র মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা
গত ২১ শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের জকিগঞ্জ থানা এলাকা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে সক্ষম হয়।
শনিবার শেষ রাত্রি প্রায় ৩ ঘটিকা থেকে মুক্তিসেনারা অতর্কিতভাবে আটগ্রাম, আমলসী, ছাগলী, রহিমপুর, জকিগঞ্জ প্রভৃতি পাকসেনাদের ঘাটীগুলি আক্রমণ করে বসে। উভয় পক্ষে তুমুল গােলাগুলি বর্ষণ হতে থাকে। ভাের ৫ ঘটিকায় করিমগঞ্জ শহরের উপর পাকসেনারা মর্টারের গােলাবর্ষণ করতে থাকলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা তার উচিত জবাব দেয়।
ছয় ঘণ্টা ব্যাপী প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাকসেনারা পলায়নে বাধ্য হয়। কিছু সংখ্যক পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। রাজাকার ও মেলেসিয়া সহ ১৭ জনকে মুক্তিসেনারা গ্রেপ্তার করে। ২৯ জন পাকসেনা এই সংঘর্ষে নিহত হয়। মুক্তিসেনাদেরও প্রায় ৭ জন ঘায়েল হয় বলে প্রকাশ। পাক ফৌজের একজন বেলুচ সেনাকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মুক্তিফৌজের হাসপাতালেই তার মৃত্যু ঘটে। এই সংঘর্ষে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের লেফট্যানেন্ট এন, আফজাল হাজির নামক একজন অফিসারও নিহত হয়।
পাক ফৌজের করিমগঞ্জ শহরের উপর যে গােলাবর্ষণ করে তাতে গুল বেগম (৩০), আরতি পাল, পূর্ণলক্ষী পাল ও রূপচঁাদ পাল নামক একটী কিশােরের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু ঘটে। তাছাড়া আরতি ভট্টাচার্য্য, মাখন আলী, দেবাশীষ দাস, মীরারানী পাল, কার্তিক দাস ও তরমুজ আলীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। একদিন পর মীরা রানী পালেরও মৃত্যু ঘটে।
শহরের অপরদিকে জীগঞ্জে যখন প্রবল গােলাগুলি চলছে তখন শহরের রাস্তায় লােকচলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় অতি সঙ্গত কারণেই মহকুমাধপতি শ্রীইন্দ্রজীৎ গুপ্ত দুপুর বার ঘটিকা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারী করেন, এই সান্ধ্য আইন দুই দিনের জন্য সন্ধ্যা থেকে ভাের পর্যন্ত বলবৎ থাকে। | জকিগঞ্জ থানা এলাকা দখলের পর সকাল প্রায় ৯ ঘটিকায় বাংলাদেশের নের্তৃস্থানীয় ব্যক্তি মি. ইসমৎ চৌধুরী ও আব্দুল যুথি চৌধুরী বিরাট উল্লাসের মধ্যে জকিগঞ্জে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
বিকাল ৪ ঘটিকা থেকে পাক সেনারা চুরখাই অঞ্চল থেকে দুরপাল্লার কামান ছুঁড়ে ভারতীয় এলাকা আক্রমণের চেষ্টা করে। কামানের কয়েকটা গােলা লক্ষ্মীবাজার ও ফকিরের বাজার এলাকায় এসে পড়ে। ফলে নদীয়া রাম নমঃশূদ্র নামে একজন ভারতীয় নাগরীক মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং আরাে ৩ জন গুরুতর। আহত হয়।
সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উহার প্রত্যুত্তর দিলে পাক গােলাবর্ষণ স্থগিত হয়ে যায়।
মুক্তিবাহিনী জকিগঞ্জ এলাকায় পাকসেনাদের উদ্দেশ্যে ব্যাপক তল্লাসী চালায়। পরদিন রাজাকার ও মেলেশিয়া সহ আরাে ২৪ জন পাকসেনাকে মুক্তিফৌজরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়, প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করতে সুরু করেছে।
২২ শে ডিসেম্বর থেকে সিলেট জোনের এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান দেওয়ান ফরিদ গাজীর উদ্যোগে জকিগঞ্জ থানা এলাকায় অসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। মি. হুমায়ুন দাউদ কোরেশিকে এই অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়েছে। জনগণের মন থেকে জঙ্গী শাসনের ভয় দূর করার উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জে একটা বিরাট জনসভার আয়ােজন করা হয়েছে। দেওয়ান ফরিদ গাজী এম এন এ ডা. মালিক এম পি এ, আবদুল লতিফ এম পি এ, মুক্তিফৌজের কর্ণেল সি, আর দত্ত প্রভৃতি জনগণের উদ্দেশ্যে দৃপ্ত ভাষণ দেন। লুক্কায়িত শত্রুদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্যও তারা আহ্বান জানান। জনসাধারণের বিপুল হর্ষধ্বনী দ্বারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানান।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১ ডিসেম্বর ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!