জয় মুক্তিবাহিনী
বদরুজ্জামান চৌধুরী (ভাঙ্গা, কাছাড়)
মুক্তিফৌজ বাহিনীর বীরত্ব গাঁথা আজ সব স্বদেশপ্রাণ বাংলাদেশের মুখে মুখে। ইয়াহিয়ার এজিদ বাহিনী আজ ভীতসন্ত্রস্ত। প্রায় প্রতিদিনই এই অকুতােভয় বাঙালী যুবকদের হাতে নিহত হচ্ছে ইয়াহিয়ার তথাকথিত যুদ্ধবাজ হানাদার সৈনিকেরা। স্বল্পমেয়াদী ট্রেনিংপ্রাপ্ত এই বীর বাঙালী মুক্তিবাহিনীর হাতে সুশিক্ষিত রণ নিপুণ সেনা নায়কদের দ্বারা পরিচালিত পাক হানাদার বাহিনী বারংবার পর্যদস্ত হচ্ছে। আধুনিক উন্নত ধরণের সমরাস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী কেন এমন মার খাচ্ছে?
মুক্তিবাহিনীর হাতে যথেষ্ট হাতিয়ার না থাকলেও মনে রয়েছে অপরিসীম সাহস এবং এদের চোখে রয়েছে অনির্বাণ স্বদেশ প্রেমের শিখা। এরা জানে মরতে এমনিতেই হবে।
বেইমান টিকা খা নিরস্ত্র সহস্র সহস্র নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সকল মানুষকে ধরে নিয়ে রক্ত শুষে নিচ্ছে। মা বােনদের উপরে পাশবিক উপায়ে চালাচ্ছে বলাকার।
গত চব্বিশ বছর ওরা যে শােষণ চালিয়েছে, তা বজায় রাখার জন্যেই বীভৎস হত্যালীলা।
বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। আজ একটা স্বাধীন সরকার যা জনগণ নির্বাচিত। সেই স্বাধীন সরকারেরই সৈন্যবাহিনী মুক্তিবাহিনী। আজ বাংলাদেশের হাজার হাজার যুবক যুবতী মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেও মুক্তিবাহিনীতে যােগ দিচ্ছে।
তাদের মনে রয়েছে কঠিন সংকল্প “আমরা মরতে হয়, গুলির দ্বারা এই অত্যাচারের জবাব দিয়ে মরবাে। রক্তের বদলে রক্ত চাই।।
তােমরা আমাদের রক্ত ঝরাবে, ঝরাও জল্লাদ কত রক্ত ঝরাতে পার ঝরাও কিন্তু তােমাদের রক্ত আমরা চাই। আগামী দিনের বাংলার মাটিতে যে ফসল ফলবে- সেই ফসলের মাঠ তােমাদের রক্তে রাঙা হয়ে উঠুক। আর তােমাদের সঙ্গে তাদের রক্তও আমরা চাই। আগামী দিনের বাংলার মাটিতে যে ফসল ফলবে- সেই ফসলের মাঠ তােমাদের রক্তে রাঙা হয়ে উঠুক। আর তােমাদের সঙ্গে তাদের রক্তও আমরা চাই, সেই সব মীরজাফরদেরর রক্ত, যারা স্বদেশ এবং স্বজাতীর প্রতি বেইমানী করছে। এদের কারুকেই আমরা ক্ষমা করবাে না, ইতিহাস ক্ষমা করে না।”
আমরা ভারতীয় মানবতাবাদীরা, আজ সালাম জানাই স্বাধীন বাংলাদেশের সেইসব বীর সেনানীদের যারা অকুতােভয়ে এই অসম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি – জয় তাদের হবেই। জয় মুক্তিবাহিনী। জয় বাংলা।।
সূত্র: আজাদ, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১