বাংলাদেশে মুক্তিফৌজের অগ্রগতি
গত সপ্তাহে শ্রীহট্ট রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ উল্লেখযােগ্য উন্নতি করিয়াছে। সর্বত্রই পাসৈন্য নাজেহাল হওয়ার খবর পাওয়া যাইতেছে। কুমারশাইল বাগান এলাকায় এক পা টহলদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাইয়া মুক্তিফৌজের বীর গেরিলারা ১৮ জনকে খতম করিয়াছে এবং ৬ জন গুরুতর আহত হইয়াছে। দুই দিন পর উহার প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য পাকহানাদাররা কুমারশাইল এলাকার অনেক ঘর বাড়ী পুড়াইয়া দেয় কিন্তু তাহারা ফিরিয়া যাওয়ার সময় কমাণ্ডোদের অতর্কিত আক্রমণে আরও ১৪ জন পাকসৈন্য খতম হয়। ঐ এলাকায় একজন পাকসৈন্যের একটী বুটপরা কাটা পা দেখা যায়। গেরিলারা যে মাইন পাতিয়া রাখে। তাহারই বিস্ফোরণে যে কয়জন পাকসৈন্য খতম হয়, এই কাটা পা তাহাদেরই একজনের হইবে এবং তাড়াতাড়ি পালাইবার সময় উহা ফেলিয়া যায়।।
গত সপ্তাহের শেষভাগে আটগ্রাম-লােভাছড়া এলাকায় পাক-হানাদার দল মুক্তিবাহিনীর একটী অগ্রবর্তী ঘাটীর উপর আক্রমণ করে। প্রচণ্ড সংগ্রামের পর হানাদার-বাহিনীর ১৫০ জন সৈন্য খতম হয়। পাকবাহিনীর অধিনায়ক তিন দিন জঙ্গলের মধ্যে আত্মগােপন করিয়া একটী অন্তর্বাস মাত্র পরিহিত অবস্থায় পালাইয়া প্রাণে বাঁচেন। এই সংঘর্ষে কিছু পাক অস্ত্রশস্ত্র গেরিলারা উদ্ধার করে।
শ্রীহট্ট জেলার নানা স্থানে প্রচণ্ড সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাইতেছে। সহরের নিকটে রাধানগর এলাকায় পাসৈন্যদের সঙ্গে কমাণ্ডোদের ৬ দিন ব্যাপী অনবরত গােলাগুলি বিনিময় হয় এবং পাসৈন্য নাজেহাল হইয়া পড়ে।
ছাতক হইতে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে দোয়ারাবাজারের নিকট রকেট আক্রমণ করিয়া গেরিলারা পাসৈন্য ও অস্ত্র বােঝাই দুইখানি মটর লঞ্চ ডুবাইয়া দেন। ঐ সঙ্গে রসদ বােঝাই কয়খানি নৌকাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই আক্রমণে বহু সৈন্য নদীতে ডুবিয়া প্রাণ হারায় ও বহু অস্ত্রশস্ত্র ও রেশন ডুবিয়া যায়।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৬ অক্টোবর ১৯৭১