সমগ্র সুনামগঞ্জ মহকুমা পাক কবলমুক্ত
পাক কবলমুক্ত সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু পাক-সৈন্য হত—মুক্তিবাহিনী কর্তৃক বহু নৌকা ও গুলিগােলা দখল—ত্রিপুরার বহু গ্রামে পাক-সৈন্যের গুলিবর্ষণ—অনেক মাইন উদ্ধার
সুনামগঞ্জ
পাক সৈন্যের সঙ্গে দুইদিন ব্যাপী প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিবাহিনী সমগ্র সুনামগঞ্জ মহকুমা পাক কবলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। জল বৃদ্ধির ফলে পাক-সৈন্যরা বিশেষভাবে কাবু হইয়া গিয়াছে। মুক্তিবাহিনী বহু নৌকা এবং নৌযান করিয়া খাদ্যশস্য ও গােলাগুলি দখল করিয়া নিয়েছে। একটী স্পীড বােট, দুইটী লঞ্চ, চারটী ষ্টীম বােট ও ১৬টী বিরাট বজরা মুক্তিবাহিনী দখল করিয়া নিয়েছে। ছাতক হইতে ঢাকা যাওয়ার পথে দুইটী বজরা মুক্তিবাহিনী দখল করে। প্রতি বজরায় ৬০০০ ব্যাগ সিমেন্ট ছিল। অন্য একটী বজরাও মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। উহাতে ৩০০০ বস্তা গম ও প্রায় ৪ লক্ষ টাকার ঔষধপত্রাদি ছিল। কমাণ্ডো আক্রমণে সুনামগঞ্জ-ছাতক, সুনামগঞ্জ ময়মনসিং, সিলেট ঢাকা ও সুনামগঞ্জ ঢাকা নদীপথ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণে সুনামগঞ্জে ২০ জনের অধিক পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
করিমগঞ্জ
গত তিনদিন ধরে করিমগঞ্জের সন্নিকটবর্তী ভাঙ্গার অপর পারে আমলসীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিসেনাদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে ৬জন পাঞ্জাবী সৈন্য নিহত হয়েছে, মৃতদেহগুলি এখনও ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। উভয় পক্ষই উহা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই লড়াইয়ে একজন মুক্তিসেনা নিহত হয়েছেন। করিমগঞ্জ সীমান্ত বরাবর পাক-সৈন্যদের বিপুল সমাবেশ করা হয়েছে। লাতুর সন্নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনী অধিকৃত বাংলাদেশের সারপার ঘাটিটী দখল করার জন্য পাক সেনাদের একটী চেষ্টা মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দেয়। পাকসেনা বাহিনী পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়।
গােয়ালপাড়া
গােয়ালপাড়া জেলার মানকাচরের অপরদিকে বাংলাদেশের চিলমারীতে পাক-সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
ত্রিপুরা
ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর টহলদাররা আগরতলা ও সিধাই থানার বিভিন্ন স্থান থেকে পাকিস্তানী দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা পােতা বহু মাইন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তথাপি একটী মাইন বিস্ফোরণের ফলে আগরতলার বাহিরে একটী যাত্রীবাহী বাস সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভাগ্যক্রমে বাসটীতে কোন যাত্রী ছিল না। ড্রাইভার ও সহকারী গুরুতর জখম হয় বিলােনিয়া-মােতাই সড়কে একটী সেতুর নীচ থেকেও দুইটী মাইন উদ্ধার করা হয়। ত্রিপুরাতে ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়জয়ামুড়া, বেগাদি, মােহনপুর, রাঙ্গাজুটি, নােকামল, আশাগড়, কেশাবান, দেবীপুর, হরিহরগােলা প্রভৃতির উপর পাক-সৈন্যরা প্রবল গুলিবর্ষণ করে চলেছে। কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক সহ একজন শরণার্থী এই গুলিতে নিহত হয়।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে মুক্তিবাহিনী একটী দোতলা ষ্টীমারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ফলে উহা ডুবে যায়। ষ্টীমারটী থেকে বহু গােলাবারুদ মুক্তিসেনারা দখল করে নেয়। এই দলটীই আরাে চারটী মটর লঞ্চ ডুবিয়ে ৬০ জন পাকসৈন্য নিহত করে।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২৫ আগস্ট ১৯৭১