আমেরিকার টেলিভিশনে বাংলাদেশের চিত্র
গত ২৯ শে জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সি,বি,এস এর টেলিভিশনে বাংলাদেশে পাকিস্তানের নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়। লক্ষ লক্ষ আমেরিকান নাগরিক এই অনুষ্ঠানটি দেখেন। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘বিবেকের প্রশ্ন’। ইহাতে বলা হয়, ভারতে বাংলাদেশের ৭০ লক্ষ সন্ত্রস্থ শরণার্থী উদ্বাস্তু শিবিরে রােগ, শােক, মানসিক উদ্বেগ প্রভৃতির বিরুদ্ধে জীবন সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত। তবু তারা ভাগ্যবান ভারতের অনুগ্রহে আশ্রয় পেয়েছে, প্রাণে বেঁচে আছে তাদের দেশে যা ঘটছে তা গণহত্যাই বলা যায়।
গত মার্চ মাসে পাক সরকার সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থকদের ধ্বংস করার আদেশ দেন এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ফলে দু’লক্ষের বেশী নাগরিককে খুন করা হয়। লক্ষাধীক যুবতী নারীকে পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সৈন্য শিবিরে জোর করে নেয়া হয়।
বলা হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ শুনুন নিউইয়র্কের টনি-ক্লিফটন লিখেছেন “আমি দেখেছি শিশুদেরে [হয়েছে] চাবুক মেরে মানুষের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে। চোখের সামনে ছােট ছােট ছেলে মেয়েকে খুন হতে দেখে ও যুবতী মেয়েদের উপর জোর করে যৌন নির্যাতন ধর্ষণ দেখে বাংলাদেশের লােক বােবা হয়ে গেছে। প্রতিবাদ করার শক্তি নাই বর্বর পাক সেনা সঙ্গীন উচিয়ে ধরেছে। আর পালা করে পাকিস্তানী সৈন্য নারীদের উপর পাশবিক যৌন ধর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে!” নিউইয়র্ক টাইমসের “সিডনি শ্যান বারগ” লিখেছেন ইয়াহিয়ার আদেশে ছাত্র, বুদ্ধিজীবি , অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসকদের খুন করা হয়। তাহার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কিনা তাহাও তলিয়ে দেখা হয় নাই।
বিশ্বব্যাংকের একজন অফিসার একটি সহর দেখে বলেছেন জনসংখ্যা চল্লিশ হাজার থেকে পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছে। শতকরা আশীটী বাড়ী, দোকান, ব্যাংক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। দৃশ্য দেখলে মনে হয় পারমাণবিক আক্রমণের পরের দিনের প্রভাত।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৪ আগস্ট ১৯৭১