পাক হানাদার ও বেইমানদের সায়েস্তায় মুক্তিফৌজের প্রস্তুতি
“লক্ষাধিক জোওয়ান সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষ করে অতিশীঘই বাংলাদেশ অভ্যন্তরে হানাদার পাকবাহিনীর সাথে। লড়াইয়ে বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়িবে। শতাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে এসব মুক্তি সেনারা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ শেষ করবে এবং স্বৈরতন্ত্রী হানাদার ও স্বদেশী বেইমানদের খতম করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েই প্রবল উদ্দীপনায় মুক্তিবাহিনী এগিয়ে যাবে।”
শ্রীহট্ট কাছাড় সীমান্তে বাংলাদেশের কোন একস্থানে আওয়ামী লীগের সারাবাংলার নব নিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক জনাব মীজানুর রহমান এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় এবং সভাপতি বঙ্গবন্ধু মজিবুর কারাগারে অন্তরীণ থাকায় মীজানুর সাহেবের উপরই বাংলাদেশের সাংগঠনিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। শ্রীহট্ট জেলায় মুক্তিসেনাদের প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে তাদের উদ্দেশ্যে জনাব রহমান বলেন “বাঙালীরা আজ এক দুর্যোগের সম্মুখীন। অত্যাচারিত নিপীড়িত অবহেলিত লাঞ্ছিত বাঙালী স্বাধীনতা লাভ করবেই। তবে তার জন্য আত্মত্যাগ ও প্রভূত ক্ষতি স্বীকার করিতেই হবে। বৃটিশ ভারতে মুক্তিপাগল বাঙালী পলাশীর প্রান্তর থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বীর বিক্রমে সংগ্রাম করেছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, শ্রীহট্ট বরিশাল প্রভৃতিই সেদিন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান। আজও তা। তবে পার্থক্য শুধু এই সেদিন ছিল বৃটিশের বিরুদ্ধে আর আজ হচ্ছে বেইমান ও হানাদার সৈন্যদের বিরুদ্ধে। সেদিন ছিল সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আর আজ সাড়ে সাত কোটী বাঙালীর শােষণ মুক্তির সংগ্রাম।”
সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন ভারতের জনসাধারণ বাংলাদেশের সহায়তায় নিস্বার্থ ভাবে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞ। কাছাড়বাসী বাঙালী মুসলমানদের একাংশ ভুল বুঝাবুঝির ফলে বাংলাদেশের সংগ্রামে সুনজরে দেখছেন না বলে জনাব রহমান দুঃখ করে বলেন “বাঙালী হয়ে অপর বাঙালী ভাইয়ের দুঃখে তাদের কি ন্যূনতম সহানুভূতিও নেই? তাদের কাছে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটী বাঙালীর আবেদন তারা যেন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবিকতার খাতিরে আমাদের পাশে দাঁড়ান। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। বাঙালী হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করবেই। কারণ এসংগ্রাম শুধু বাঙালীর নয় সমগ্র পৃথিবীর গণতন্ত্রবাদী মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম।”
সূত্র: আজাদ, ২৩ জুন ১৯৭১