ভারত-বাংলাদেশ মেত্রী চুক্তি
অনুচ্ছেদ এক
চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষ স্ব স্ব দেশের জনগণ যে আদর্শের জন্যে একযােগে সংগ্রাম এবং স্বার্থ ত্যাগ করছেন, সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মর্যাদার সঙ্গে ঘােষণা করছেন যে, উভয় দেশ এবং তথাকার জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও মৈত্রী বজায় থাকবে। একে অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষে উল্লেখিত নীতিমালার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক সমতা ও সম্মানজনক নীতিসমূহের ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যেকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সুপ্রতিবেশীসুলভ সার্বিক সহযােগিতার সম্পর্কের আরাে উন্নয়ন জোরদার করবে।
অনুচ্ছেদ দুই
জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি, সমতার নীতিতে আস্থাশীল থাকার আদর্শে পরিচালিত হয়ে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ সর্ব প্রকারের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের নিন্দা করছে এবং তাকে চূড়ান্তভাবে ও সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্যে প্রচেষ্টা চালানাের ব্যাপারে তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা পুনরুল্লেখ করছে। চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষ উপরােক্ত অভীষ্ট সিদ্ধির জন্যে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযােগিতা করার এবং উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবিরােধী সংগ্রামে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন দান করবে।
অনুচ্ছেদ তিন
বিশ্বের উত্তেজনা প্রশমন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব। ও স্বাধীনতা মজবুত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে জোটনিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের অবস্থার পুনরুল্লেখ করছে।
অনুচ্ছেদ চার
উভয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী নিয়ে । চুক্তিকারী উভয় পক্ষ সকল স্তরে বৈঠক ও মতবিনিময়ের জন্যে নিয়মিত যােগাযােগ রক্ষা করবে।
চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধাজনক ও সর্বাত্বক সহযােগিতা শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করবে। উভয় দেশের ক্ষমতা ও পারস্পরিক সুবিধানীতি ভিত্তিক বাণিজ্য, পরিবহন ও যােগাযােগের ক্ষেত্রে সহযােগিতা প্রসারিত করবে।
বন্যানিয়ন্ত্রণ, নদী অববাহিকার উন্নয়ন এবং জলবিদ্যুৎ শক্তি ও সেচব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা ও যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষ অভিন্ন মত পােষণ করে।
চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয় পক্ষ শিল্পকলা, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করবে।
দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান গুরুত্বপুর্ণ সম্পর্ক অনুযায়ী চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে ঘােষণা করছে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনাে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না বা অংশ নেবে না। অন্যের উপর আক্রমণ থেকেও নিবৃত্ত থাকবে এবং তাদের এলাকায় এমন কোনাে কাজ করতে দেবে।
যাতে চুক্তিকারী কোনাে পক্ষের ক্ষতি হতে পারে বা তার কোনাে পক্ষের নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কোনাে এক পক্ষের বিরুদ্ধে তৃতীয় কোন পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে চুক্তিকারী প্রত্যেকে এতদোল্লেখিত তৃতীয় পক্ষকে যে কোনাে প্রকার সাহায্য দানে বিরত থাকবে। তা ছাড়া যে কোন পক্ষ আক্রান্ত হলে অথবা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সেই আশঙ্কা নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে যথাযথ সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে উভয়পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে আলােচনায় মিলিত হয়ে নিজেদের দেশের শক্তি এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে।
চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ ঘােষণা করছে, এই চুক্তির পক্ষে অসামঞ্জস্য হতে পারে এমন গােপন বা প্রকাশ্য এক বা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের কেউই। কোনাে অঙ্গীকার করবে না।
এই চুক্তি পঁচিশ বছরের মেয়াদের জন্যে স্বাক্ষরিত হলাে। চুক্তিকারী উভয় পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানাে যেতে পারে। অত্র চুক্তি সই করার দিন থেকে কার্যকর হবে।
এই চুক্তির কোনাে একটি বা একাধিক অনুচ্ছেদের বাস্তব অর্থ করার সময় চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোনাে মতপার্থক্য দেখা দিলে তা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বােঝাপড়ার মনােভাবের দ্বারা শান্তিপূর্ণ আলােচনায় নিষ্পত্তি করতে হবে।
১. ১৯ মার্চ ১৯৭২ ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৮ মার্চ ১৯৯৭ এর মেয়াদ শেষ হয় এবং কোন পক্ষই তা নবায়নের উদ্যোগ নেয়নি।
সূত্র : বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-১৯৭৫ – হালিমদাদ খান