You dont have javascript enabled! Please enable it!

জয়তু বাংলাদেশ
শ্রীগােলকের গােস্বামী, (গােবিন্দপুর, কামরূপ)

নয়মাসের অসহনীয় নির্যাতন (বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রের নিরাসক্ত মনােবৃত্তি সত্ত্বেও) অতিক্রম করিয়া স্বাধীনতা লাভে কৃতকার্য হ’ল সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশবাসী। এই মুক্তির সংগ্রাম, অসাম্প্রদায়িক প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্ম ভাবীযুগের ইতিহাস নিশ্চয় শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবে। উপনিবেশবাদের কবর রচনায় ভারতের সাহায্য এবং সােভিয়েট রাশিয়ার নৈতিক সমর্থন নিশ্চয় উল্লেখযােগ্য। এক্ষেত্রে মুক্তি আন্দোলন তথা বিশ্বের প্রগতির শ্লোগান দানে পাৰ্গত মার্কিন প্রেসিডেন্টের আচরণ অতি নীচতার পরিচায়ক।
বিশ্বের বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভারতীয় গণতন্ত্রের অধিবাসী হিসাবে আমরা আমাদের প্রতিবেশী ভাইসকল শােষণ মুক্ত হইয়া এক প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র গঠনে উদ্বুদ্ধ হওয়াতে অত্যন্ত আনন্দ পাইয়াছি। এখানে আমি নবারুণের রক্তিম আলােতে আলােকিত বাংলাদেশ আমাদের রাষ্ট্রের ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করিতে সমর্থ হইবে তাকে আলােচনা করিতে চেষ্টা করিব। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক আদর্শ গঠিত দলগুলিকে বানচাল করিয়াছে। ভারত কিন্তু সাম্প্রদায়িক পার্টিগুলি বন্ধ করেন নাই কারণ ভারত গণতন্ত্রী পন্থায় স্বকীয় চিন্তাধারা এবং আদর্শকে সম্মান করে। যদি কোন দল দেশের অখণ্ডতার ওপর আঘাত হানে তবে অবশ্যই তাকে বাধা প্রদান করা হয়। বিশাল রাষ্ট্র ভারত। এখানে অনেক ভাষা, ও ধর্মের লােক বাস করেন। সেইজন্য সময়ান্তরে দুই একটা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সংঘটিত হইয়া থাকে। আমরা যদি বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এক ভারতীয় মহাজাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হইতে পারি তবে বড় সুখের কথা হবে। কবি গুরু সেই আহ্বান আমাদের জানাইয়া গেছে ‘শুচি করি মন ভারত ভূমিকে প্রগতির দিকে অগ্রসর করিতে। বাংলাদেশের গঠনে আমাদের রাষ্ট্রের পুরাে ভূখণ্ড হইতে এক শত্রুভাবাপন্ন দেশ বিনষ্ট হইয়া ভ্ৰাতৃভাবাপন্ন দেশের আবির্ভাব হইয়া এক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তা এবং অনেক সমস্যা হইতে ভারত বর্ষ মুক্ত হইল।
১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তানের সংঘর্ষের ব্রহ্মপুত্র জলপথ বন্ধ হওয়াতে আসামের পরিবহন ব্যবস্থা দুৰ্বল হইয়া যায়। আসামের রপ্তানি এবং আমদানীকৃত জিনিসের পরিবহন ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পাইতে থাকে। ভারতের আবশ্যকীয় পাট এবং নিউজ প্রিন্ট অন্যদেশ হইতে আমদানী করতে হইয়াছিল। তদনুরূপ বাংলাদেশের জন্য আবশ্যকীয় কয়লা অন্য রাষ্ট্র হইতে আমদানী করতে হইয়াছিল। এখন দুইদেশ পারস্পরিক উন্নতির জন্য কাজ করিতে পারিলে এবং আমাদের উভয় দেশ আর্থিকক্ষেত্রে প্রগতি লাভ করিবে। মমাটের উপর এই পূৰ্বাঞ্চলের অর্থনীতিতে বাংলাদেশ প্রভূত প্রভাব বিস্তার করিবে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক ঐতিহ্য বরাবরই আছে। সােনা ফুটানাে শ্যামল ভূখণ্ড, স্রোতস্বিনী বিধৌত নিম্নভূমি, পাহাড় সবকিছুর মাঝে রহিয়াছে সাহিত্যের সম্ভার। পদ্মার পাড়ে সৃষ্টি হইয়াছে অনেক মহৎ সৃষ্টি। কবি নজরুল ইসলামের কবিতা কে অস্বীকার করবেন? সেইদেশের সাহিত্য এদেশের সাহিত্যকে, এদেশের সাহিত্য সেদেশের সাহিত্যকে উদ্বুদ্ধ করবে। পদ্মার বুকের মাঝিদের প্রাণখােলা গান ভারতীয়দের মনে দোলা দিবে। আসামের বরগীত, লােকগীত পদ্মার কুলু সংগীত ধ্বনির সাথে ঝংকৃত হবে।
এখন আমরা চাই দুইদেশের প্রগতি ও সম্প্রীতি। আমাদের সম্প্রীতি এবং একাত্মবােধ বিশ্বের হিংসার কারণ হউক—যাকে কল্পনা করে নিক্সন চাইছিলেন বাংলার ওপর পাকিস্তানী মিলিটারী শাসকের অত্যাচারের স্থায়িত্ব এবং ভারতের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে ভারতের প্রগতি ব্যাহত করা।

সূত্র: আজাদ, ৫ জানুয়ারি, ১৯৭২

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!