You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ গণতন্ত্রেরই জয়সূচক
শ্রী গৌরী শংকর ভট্টাচার্যের মন্তব্য –

গৌহাটি ২৩ শে ডিসেম্বর-কামরূপ জিলার বড়খলা গাঁওসভা আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় ২১ শে ডিসেম্বর তারিখে ভাষণ দান কালে আসাম আইনসভার বিরােধী দলপতি শ্রীগৌরী শংকর ভট্টাচাৰ্য্য বলেন—আমরা ঐক্য এবং জাতীয় সংহতির জন্য বহু চেষ্টিত ছিলাম। আমাদের মধ্যে একতা এবং সংহতি অক্ষুন্ন থাকায় আমাদের এই দেশ-আক্রমণকারী পাকজঙ্গীশাহীকে আমরা স্তব্ধ করিয়া দিয়াছি। আমাদের সকলের একতার বল দেখিয়া সারা বিশ্বের চমক লাগিয়াছে যুদ্ধে আমরা গৌরবের সহিত বিজয়ী হইয়াছি। সর্বাবস্থায় আমরা একতাবদ্ধ দেশও সমাজ গঠনের কাজ করিয়া যাইতে থাকিলে এ দেশবাসীদের সামূহিক অগ্রগতি অনিবার্য।
পূৰ্ব্বাপাকিস্তানকে সেচ্ছাচারীভাবে পাক শাসনগােষ্ঠী নানাভাবে নির্যাতন করায়, তাহাদের দাবীদাওয়া পদদলিত করায় পূর্বপাকিস্তানবাসী জনগণ একতাবদ্ধ হইয়া নানাভাবে সংগ্রাম করিয়া তাহাদের মাতৃভূমি হইতে পাকিস্তানী জগদ্দল শীলাকে নস্যাৎ করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করিয়াছে ; স্বৈরতন্ত্রী পাকজঙ্গীচক্রকে বিদায় দিয়া তাহারা ধর্মনিরপেক্ষ গণরাজ্য গঠন করিয়াছেন।
আমাদের একতা ও প্রগতিতে ঈর্ষাপরায়ণ হইয়া শত্রুরা এদেশে গুপ্তচর ও নাশকতাকারী প্রেরণ করিয়া এদেশের ক্ষতি করিতে ত্রুটি করিবে না। কাজেই এদের সম্পর্কে সকলেরই সচেতন থাকা উচিত।
শ্রীভট্টাচার্য্য এদেশবাসীকে খাদ্যে আত্মনির্ভর হওয়ার এবং দেশের শিল্পসম্ভার বাড়াইয়া তােলার জন্য বিশেষ মনােযােগী হইতে অনুরােধ জানান। পল্লী অঞ্চলকে উন্নত না করিলে দশের উন্নতি হয় না ইহা তিনি সকলকে স্মরণ করাইয়া দেন।
আসাম সংহতি পরিষদের সেক্রেটারী শীঈশ্বর প্রসাদ চৌধুরী তাহার বক্তৃতায় সকলকে দেশের সংহতি ও বুনিয়াদী সংস্কৃতি বিষয়ে মনােযােগী হইতে অনুরােধ জানান। ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন জাতীয় পতাকার মর্যাদার ও জাতীয় সম্মানের দিক লক্ষ্য রাখিয়া যুব সমাজকে গঠনমূলক কাজ করিতে হইবে। জাতীয় মহান নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করা এবং জাতীয় চরিত্রের উন্নতিতে কাজ করা ছাত্রদের অন্যতম কর্তব্য।
উক্ত জনসভায় ডা. রফিক চৌধুরী, শ্রীজয়দত্ত বুজরবরুয়া প্রভৃতি দেশবাসীদের একতা ও পল্লীর উন্নতি সম্পর্কে বক্তৃতা দেন।

আসামের দুইজন মন্ত্রীর সিলেট সফর
আসাম মন্ত্রীসভার সরবরাহ ও বাণিজ্য মন্ত্রী শ্রীরমেশ চন্দ্র বরুয়া ও পুনর্বাসন দপ্তরের রাজ্যমন্ত্রী শ্রীসাধন রঞ্জন সরকার গত ২৩ শে ডিসেম্বর শিলং থেকে বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলা সফর করে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য শ্রীপ্রদোষ চৌধুরী আসাম সরকারের বিশেষ সেক্রেটারী শ্রীবি, কে, ভূইয়া ও প্রচার যুগ্ম-অধিকর্তা শ্রীজী, দাশ। | শ্রীহট্ট জেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ভি, কে, কৃষ্ণরাও ও আরাে কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারদের সঙ্গে সাক্ষাত ও আলাপ আলােচনার পর তারা ভারতীয় জোয়ানদের শিবির পরিদর্শন করে জোয়ানদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী অর্পণ করেন। এর পর জেলার অসামরিক শাসক মিঃ ফরিদ গাজী, এম-এন-এ, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার ও স্থানীয় নেতাদের সাথে বিশেষ করে সরবরাহ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন ইত্যাদি জরুরী সমস্যা নিয়ে আলাপ আলােচনা করেন।
আলাপ-আলােচনান্তে মন্ত্রীদ্বয় ও সহগামীরা শ্রীহট্টের বিখ্যাত তীর্থস্থান পীর শাহজালালের দরগা দর্শন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
প্রসঙ্গতঃ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য যে, এই ভ্রমণকারী দলকে স্থানীয় বেসামরিক অধিবাসী, মুক্তিযােদ্ধা ও ভারতীয় সৈনিকরা আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।

সূত্র: আজাদ, ৫ জানুয়ারি ১৯৭২

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!