বাংলাদেশের ছয় মাসের ঘটনা
বাংলাদেশে গত ৬ মাসের যে সকল বড় বড় ঘটনা ঘটিয়াছে সেগুলি নিম্নোক্তরূপ :
মার্চ ২৫ :- পাকিস্তানের সামরিক শাসক চক্র কর্তৃক বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা, লুণ্ঠন অগ্নিকাণ্ড নারীধর্ষণ আরম্ভ ও সামরিক আইন জারি, হাজার হাজার লােক হত্যা।
মার্চ ৩১ :- পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য বন্ধ করার জন্য আমেরিকার নিউইয়র্ক টাইমস” কর্তৃক দাবী। ভারতীয় লােকসভা এবং রাজ্যসভায় পূর্ববঙ্গবাসীদের প্রতি সহানুভূতিজ্ঞাপন ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দান।
এপ্রিল ৪ :- ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এ আই-সি-সি অধিবেশনে ঘােষণা করেন বাংলাদেশে পাকিস্তানী জুলুমের ব্যাপারে ভারত নীরব দর্শক হইয়া থাকিতে পারেনা।
বাংলাদেশে নরহত্যা বন্ধ করার জন্য সােভিয়েট প্রেসিডেন্ট কমরেড পদগর্নি কর্তৃক জেনারেল এহিয়া খানকে অনুরােধ।
এপ্রিল ৭:- ভারতীয় রাজ্যসভাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবী জ্ঞাপন।
এপ্রিল ৮ :- দিল্লীস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের কুটনৈতিক কে, এম-সাহাবুদ্দিন ও আমজাদুল হক পাকিস্তানের চাকুরীতে ইস্তিফা দিয়া বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য জানান এবং ভারতে রাজনীতিক আতিথ্য কামনা করেন।
এপ্রিল ১২ :- চীনের “পিপুলসডেইলী” এহিয়া খাঁর প্রতি সমর্থন জানায়। এপ্রিল ১৪:- মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবীর সমর্থন জানান।
এপ্রিল ১৫:- এই তারিখে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট জনাব তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করিয়া বাংলাদেশের গবর্নমেন্ট গঠিত হয়।
এপ্রিল ১৮ :- চীনের রাষ্ট্রনায়ক মাও সে তুং জেনারেল এহিয়া খানকে সমর্থন করার আশ্বাস দেন।
কলিকাতাস্থ পাক দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জনাব হাসন [হােসেন আলী সহ সকল কর্মচারী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। | মে ১:- আমেরিকার সিনেটার ফুলব্রাইট ঘােষণা করেন বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয় আমেরিকা সরকার গােপন করিতেছেন।
মে ৫:- মি. জুলফিকার আলী ভুট্টো দাবী করেন যে ৩০ শে জুনের মধ্যে বেসরকারী প্রতিনিধিদের হাতে পাকিস্তানের শাসন ভার সমঝাইয়া দিতে হইবে।
মে ১৪ :- বটিশ পার্লামেন্ট দাবী জানায় পৰ্ব্ববঙ্গে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য অবিলম্বে গণহত্যা ও সংগ্রাম বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত।
মে ১৯ :- মুক্তিফৌজের নাম “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী” বলিয়া ঘােষণা করা হয়।
মে ২২:- মধ্যস্থতার মারফতে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের জন্য খান আব্দুল গফুর (গাফফার] খানের প্রস্তাব পাক শাসক দল কর্তৃক নাকচ। | জুন ১:- বাংলাদেশের নির্বাচিত এক প্রতিনিধি দল কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য ভারত সরকারকে অনুরােধ।
জুন ৬ :- বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘােষণা করেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং পাক সেনাবাহিনী বাংলাদেশ হইতে সরাইয়া নেওয়ার পর জঙ্গী ডিক্টেটরের সঙ্গে আপােষের আলাপ হইতে পারে। অন্যথায় আপােষ নাই। | জুন ৭ :- পাকিস্তান শাসক চক্র হইতে ঘােষণা করা হয় ১০০ টাকার ও ৫০০ টাকার নােট অবৈধ হইয়া গেল।
জুন ১৮ :- বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানায় যে পাকিস্তানকে বর্তমান কোন ঋণ বা অনুদান দেওয়া হইবেনা।
জুন ২৮ :- জঙ্গী ডিক্টেটর এহিয়া খান ঘােষণা করেন পাকিস্তানের জন্য শাসন তন্ত্র রচনার কাজ সত্বরই আরম্ভ হইবে।
জুলাই ২:- বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ এহিয়া খানের ঘােষিত পরিকল্পনা নাকচ করেন। জুলাই ২৯ :- এহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেন। জুলাই ২০:- এহিয়া খান ঘােষণা করেন সত্বরই সামরিক আদালতে মুজিবুর রহমানের বিচার আরম্ভ হইবে।
জুলাই ৩০ :- কলিকাতা হইতে প্রকাশিত তথ্য জানান হয় যে আজ পর্যন্ত ভারতে ৭০ লক্ষ শরণার্থী আগমন করিয়াছে।।
আগষ্ট ১:- ভারত পাকিস্তান সীমান্তে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়ােগের জন্য রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের প্রস্তাব ভারত প্রতাখ্যান করে।
আগষ্ট ২:- বৃটিশের ১৩০ জন এম-পি. শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবী জানাইয়া প্রস্তাব করেন।
আগষ্ট ৫:- রাষ্ট্রসংঘের ও আমেরিকার পাকিস্তানী দূতাবাসের সকল বাঙালী কর্মচারী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করিয়া পাকিস্তান সরকারের চাকুরী ত্যাগ করেন।
আগষ্ট ৬ :- ভারতীয় সংসদের ৪৬৭ জন সদস্য শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দাবী করিয়া রাষ্ট্রসংঘের সচিব প্রধানের নিকট আবেদন করেন।
আগষ্ট ৯ :- বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে দিল্লীতে প্রায় ১০ লক্ষ লােকের সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। আগষ্ট ১১:- ভারত সােভিয়েট বন্ধুত্ব চুক্তিতে বাংলাদেশের সমস্যার রাজনীতিক সমাধান দাবী করা হয়। আগষ্ট ১২:- জনসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে দিল্লীতে কয়েক লক্ষ লােকের সমাবেশ।
আগষ্ট ১৬ :- আমেরিকার সিনেটর মিঃ কেনেডী পাকিস্তান সরকারকে পাইকারী গণহত্যাকারী বলিয়া ঘােষণা করেন।
আগষ্ট ২২:- চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশের গরিলা বাহিনী ৮ খানা জাহাজ ডুবাইয়া দেয়।
সেপ্টেম্বর ৭ :- মিঃ ভুট্টো ঘােষণা করেন তাহার পিপুল[পপলস]পার্টি সামরিক সরকারের প্রস্তুত করা শাসনতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানাইবে না। | সেপ্টেম্বর ৯ :- বাংলাদেশে মুক্তি সংগ্রাম তীব্রভাবে চালাইয়া হানাদার বিতাড়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ৫টি প্রধান রাজনীতিক দলের সংযুক্ত দল গঠন।
সেপ্টেম্বর ১৫:- সােভিয়েট রাষ্ট্রপতি মি. পদগর্ণি অবিলম্বে বাংলাদেশের রাজনীতিক সমাধানের জন্য জেনারেল এহিয়া খানকে আহ্বান জানান।
সেপ্টেম্বর ২৫:- বাংলাদেশের ৬টি মুক্তাঞ্চল হইতে গেরিলা বাহিনী কর্তৃক হানাদার পাঠানদের উপর তীব্র আক্রমণ আরম্ভ হয়।
সূত্র: আজাদ, ২৭ অক্টোবর ১৯৭১