বরিশালের চিঠি
বাংলাদেশের বরিশাল জেলা চাউল উৎপাদন প্রধান কেন্দ্র। চাউল, শাক সবজী, মাছ, দুধ বরিশালের মত বাংলাদেশের আর কোথাও এত সুলভ ছিল না। সেই বরিশাল ধ্বংসস্তুপে পরিণত। বরিশালের শক্তি উৎপাদন জল সরবরাহ কেন্দ্র, পুলিশ ব্যারাক, আদালত, পােষ্ট অফিস, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রভৃতি অগ্নি ভস্মে বিলীন। সমগ্র বরিশাল জেলায় প্রশাসন যন্ত্র বিকল, এ জেলায় প্রায় দুই হাজার নরনারী পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যের বুলেটে নিহত, বরিশালে পাকসৈন্য প্রবেশ করিয়াই তৈল ডিপাে, ঝালকাঠির খাদ্য ভাণ্ডার জ্বালাইয়া দিয়াছে। ফিরােজ ও ভাণ্ডারীর শস্য গােদাম পাকিস্তানী দস্যু কৰ্ত্তক লুণ্ঠিত হইয়াছে। তাহারা বরিশাল, ফিরােজপুর, মাথাবাড়ী ও ভাণ্ডারীতে বােমাবর্ষণ করিয়া বহু নিরীহ নাগরিককে হত্যা করিয়াছে। তাহারা আওয়ামীলীগের এম, পি, এ মিঃ সারীগার সাহেবকে হত্যা করিয়াছে। তাহার বাড়ী জ্বালাইয়াছে। তিনি মাথবারীয়া (মঠবাড়িয়া] নির্বাচন চক্র হইতে বিপুল ভােটাধিক্যে জয়ী হইয়াছেন। | বরিশালের অতিরিক্ত ডেপুটী কমিশনার ও সাবজজকে গুলি করিয়া পাকসৈন্য হত্যা করিয়াছে। এম, পিকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে, মুসলীম লীগ সমর্থক এক কোর্ট সাবইনস্পেকটারকে এম, পি, রূপে প্রমােশন দেওয়া হইয়াছে। পাকিস্তানী পাটুয়াখালীতে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংক লুঠ করিয়াছে ও তাহার ম্যানেজারকে হত্যা করিয়াছে। প্রায় ১০,০০০ হাজার যুবতী নারীর উপর পাকসৈন্য পাশবিক অত্যাচার করিয়াছে। তন্মধ্যে প্রায় ৫০০ শতাধিক নারী পাকদস্যুদের হাত হইতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করিয়াছে। একমাত্র আটঘর কুরী গ্রাম হইতে পাঞ্জাবী সৈন্য ২৫০ নারীকে ধরিয়া নিয়া গিয়াছে।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৯ জুন ১৯৭১