You dont have javascript enabled! Please enable it!

পত্রিকা সম্পাদকের উপর অত্যাচার

পাকসেনাদের নির্মম পরিহাস সিলেট অগনিত লােককে গুলি করে হত্যা- নারীদের উপর চরম লাঞ্ছনা সিলেট শহরের একটী আবাসিক স্কুলে পাকসেনার একটী জেলখানা তথা একটা আমােদ-ভবন খুলেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে একটা সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সেই স্কুলটাতে বহু মেয়েকে নিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের উপর রােজই অকথ্য অত্যাচার চালানাে হচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীর এক বিবরণে প্রকাশ। উক্ত প্রত্যক্ষদর্শীকে পাক সেনারা সিলেট শহর থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং সেই স্কুল ভবনটীতে বন্দী করে রাখে। বন্দীদের অমানুষীক প্রহার করা হয় এবং তাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করানাে হয়। কাউকে দিয়ে ইট বা জিনিষপত্র বওয়ানাে, অথবা ঘাস বাছানাে ইত্যাদি কাজ করানাে হচ্ছে। এই সংবাদে প্রত্যক্ষদর্শীকেও এই ধরণের কাজ করানাে হয়। ২৩ তারিখ মদন মােহন কলেজের মন্নান নামে একটী ছাত্র এক সংগে বেশি ইট বইতে না পারায় তাকে বেদম প্রহার করা হয়। প্রহার চলতে থাকলে মন্নান সরে যেতে চেষ্টা করে। এখন একটা সৈন্য তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে স্টেনগানের নলটি ঢুকিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সামনেই গুলি ছুঁড়ে হত্যা করে। ঐ দিনই স্কুল প্রাঙ্গণে ৪ জন হিন্দু ও ৯ জন মুসলমান সাধারণ লােককে দেশদ্রোহীতার অপরাধে কোর্ট মার্শালে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২৩ তারিখ রাত্রি প্রায় ২ ঘটিকায় উক্ত স্কুল প্রাঙ্গণে ৬ টী ট্রাক বােঝাই পাকসৈন্যদের মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়। সবশুদ্ধ প্রায় ৬০/৭০ টা মৃতদেহ হবে বলে তিনি বলেন। শবদেহ গুলির ৮ টীকে নামিয়ে মাটিতে বিছানাে হয় এবং সৈন্যরা সমবেতভাবে সেলুট প্রদান করে। রাত্রিতেই শবদেহগুলি সরিয়ে নেয়া হয়।
এই সকল বীভৎস দৃশ্যে প্রত্যক্ষদর্শী বিমূঢ় হয়ে পড়েন। তিনি “যুগভেরী” সম্পাদক আমিনুর রসিদ, ও অধ্যাপক ফখরুল করিমকে স্কুল প্রাঙ্গণে ঘাস বাছাই করতে দেখতে পান।
২৫ তারিখ জনৈক বিহারীর সহায়তায় তিনি সেই বন্দীদশা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং শেষ পর্যন্ত করিমগঞ্জ এসে উপস্থিত হন।
তিনি আরাে বলেন যে শহরের কে এল হুদার ছেলে বাচ্চু সৈন্যদের সংগে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কোন কোন বাসায় অত্যাচার করতে হবে সেটা তিনি নিজে দেখে এসেছেন। হাফেজ খাঁ নামে এক ব্যক্তিও লুঠতরাজে নেতৃত্ব কচ্ছেন।
পিসিআইবি নামধারী সাদা পােষাকে বহু সংখ্যক পশ্চিমা লােক সরকারের পক্ষে সমর্থন সংগ্রহের জন্য জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে প্রলােভন দিয়ে চলেছে। তাদের কথায় সায় না দিলে অমানুষিক অত্যাচার ও হত্যা করতেও তারা কসুর কচ্ছে না।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!