সিলেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় করিমগঞ্জে আগমন
৫ই মার্চ-পূর্ব বাংলার বিয়ানীবাজার থানার অন্তর্গত কাঁকুড়া গ্রামের রফিকুল হক নামক এক ব্যক্তি সিলেট শহরের কাজীর বাজারে গত শুক্রবার বেলা প্রায় পৌনে পাঁচ ঘটিকায় পাকী সৈন্যদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়। পর পর দুইটি গুলি তাহার বা হাতের সন্ধি স্থলে লাগে। এই জখম অবস্থাতেই সে সূতারকান্দি দিয়া ভারতে আসিতে সক্ষম হয়। স্থানীয় হাসপাতালে তাহার হাত হইতে গুলি বাহির করা হয়। বর্তমানে তাহাকে চিকিৎসাধীন রাখা হইয়াছে।
বিবরণে প্রকাশ ব্যবসা উপলক্ষ্যে তাহার পাওনা টাকা আনার জন্য সে সিলেট কাজিরবাজারে যায়। কিন্তু শহরের অবস্থা অত্যন্ত শােচনীয় হইয়া পড়ায় তাহার পক্ষে শহর পরিভ্রমণ করা সম্ভব হয় নাই। একমাত্র কাজির বাজারেই যে কত লােককে হত্যা করা হইয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। শ্রীহক বলেন, পাক সৈন্যরা গাড়ী করিয়া শহরে ইতস্ততঃ টহল দিয়া ফিরিতেছে এবং যখন তখন যত্রতত্র গুলি করিয়া ফিরিতেছে। দোকান পাট সব বন্ধ আছে। ভয়ে কেহ বাড়ীর দরজা খুলিতেছেন না। অনিবার্য কারণে কেহ যদি সামান্য বাড়ীর বাহির হন তাহা হইলেই গুলি করিয়া হত্যা করা হইতেছে।
কারফিউ তােলা অবস্থায় তিনি বিশেষ কারণে একটু ঘরের বাহির হন এবং ঠিক সেই সময়েই পাঞ্জাবী সৈন্যরা আসিয়া উপস্থিত হয়। একটী সৈন্য তাহাকে ডাকিয়া নিকটে যাইতে বলে এবং সে অগ্রসর হইতে থাকিলে হঠাৎ গুলি চালাইয়া তাহারা চলিয়া যায়। পরদিন শ্রীহক অতি কষ্টে একটা নৌকা সংগ্রহ করিয়া শহর পরিত্যাগ করেন এবং চুড়খাই হাসপাতালে চলিয়া আসেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা সম্ভব না হওয়ায় তিনি ভারতে চলিয়া আসিতে বাধ্য হন।
তিনি আরাে বলেন, সিলেট সুরমা নদীর পুলের দুই দিকে কামান বসানাে হইয়াছে। এবং সৈন্যরা যদৃচ্ছভাবে লুঠতরাজ চালাইয়াছে। শহরের জীবিত বাসিন্দারা যে যেদিকে সম্ভব পলাইয়া প্রাণ রক্ষা করিতেছে। তবে মুক্তিযােদ্ধারা চারিদিকে হইতে সিলেটের দিকে অগ্রসর হইতেছে বলিয়াও তিনি জানান।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৭ এপ্রিল ১৯৭১