ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার
এ পর্যন্ত যারা ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের জীবনী লিখেছেন তাদের সবারই মত যে, ভাষাশহীদ জব্বারের বংশের প্রাচীন পরিচিতি বা ঠিকুজি পাওয়া যায়নি। যেটুকু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাতে দেখা যায়, আবদুল জব্বারের পিতামহের নাম ছিল হামেদ আলী শেখ। এই হামেদ আলী শেখ থেকে আমরা যদি ধরি তবে উঠে আসে যে, ব্রিটিশ ভারতে এবং অবিভক্তবঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানাধীন লংগাইর গ্রামের শেখ বাড়িতে বাস করতেন এক মধ্যবিত্ত কৃষক। তাঁর নাম জানা যায়নি। তিনি আবদুল জব্বারের পিতামহ হামেদ আলীর পিতা। অর্থাৎ আবদুল জব্বারের প্রােদাদা। উনবিংশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার তখনকার ময়মনসিংহ জেলায় রেলপথ স্থাপনের জন্য ভূমি হুকুম দখল শুরু করে। এই হুকুম দখলে হামেদ আলীর পিতার মােট কৃষিভূমির প্রায় পুরােটাই ব্রিটিশ সরকারের হুকুম দখলে চলে যায়। গফরগাঁও থানার মহাখালী রেল স্টেশনের দক্ষিণ দিক থেকে সীলা নদীর পাড় পর্যন্ত হামেদ আলী শেখের পিতার প্রায় ৯ দশমিক ৫০ একর জমি হুকুম দখলের আওতায় পড়ে যায়। হঠাৎ নিজেদের। অধিকাশ কৃষিজমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় কৃষি প্রধান পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েন। ভাগ্য অন্বেষণে পরিবারের কেউ কেউ গফরগাঁও ছেড়ে আসাম, বার্মা চলে যান। কেউ কেউ লংগাইরাই থেকে যান।
ছড়াকার আখতার হুসেন তাঁর ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থে আবদুল জব্বারের বংশগতির এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন।
আবদুল জব্বারের জীবনসম্পৃক্ত ঘটনাক্রম পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই যে, তাঁর পুরাে পরিবার এবং ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের জীবনও ন্যূনতম নিরাপত্তার সন্ধানে সর্বদা ব্যাপৃত থেকেছে। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হওয়ায় তাকে সেই নিরাপত্তা-ভাবনা আরও বেশি করে উদ্বেল করেছে। তাঁর সাংসারিক জীবনেও তার প্রভাব অনুপস্থিত থাকবার সুযােগ পায়নি। আবদুল জব্বারের মাত্র তিন বছরের সংসার ও দাম্পত্যজীবন নিরাপত্তা ভাবনায় অস্থির ও আর্থিক অনটনে পর্যদস্ত থাকলেও, একেবারেই অনতিদীর্ঘ সেই জীবনকে চরম হতাশার শিকার করতে পারেনি। সংগ্রামে রণেভঙ্গে না দেয়াই হয়ে উঠেছে জব্বারের জীবনের মূলমন্ত্র।
সূত্র : ভাষাশহিদ আবদুল জব্বার, আখতার হােসেন, বাংলা একাডেমি