You dont have javascript enabled! Please enable it!

জেনারেল নিয়াজির শেষ মিনতি

জঙ্গীশাহীর অত্যাচার জর্জরীত ঢাকা হাজার হাজার নরনারীর রক্ত লাঞ্ছিত ঢাকা-মানবতার কবরভূমি ঢাকা আজ গণতন্ত্রী শক্তির পদভারে কম্পমান। পাক সেনাপতি লে: জেনারেল নিয়াজি দিশেহারা। তার মুখে নেই যুদ্ধের আকাশচুম্বী স্পর্ধা। তিনি চাচ্ছেন অস্ত্র সম্বরণ। স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন জেনারেল মানেকশ। অস্ত্র। সম্বরণের সঙ্গে থাকা চাই আত্মসমর্পণ। নইলে এ ফাঁদে পা দেবেনা ভারত। উত্তরের অপেক্ষা করছেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে আরম্ভ হবে প্রচণ্ড আক্রমণ। জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী চূর্ন বিচিৰ্ন করে ফেলবে ইসলামাকাদের শক্তিমত্তার পীঠস্থান। কিসের আশায় লড়বেন জেনারল নিয়াজি? ডাঃ মালিক ছেড়েছেন গবর্ণরগিরি। তার সঙ্গ নিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল। অবরুদ্ধ পাক সৈন্যরা দিতে পারেনি তাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। নিজেরাই যেখানে ছত্রভঙ্গ কি করে তারা রক্ষা করবে অপরের নিরাপত্তা। যুদ্ধমুক্ত হােটেল কন্টিন্যান্টাল এখন হতভাগাদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু সৈন্যদের আশ্রয় কোথায়? সামনে জওয়ান এবং মুক্তি যােদ্ধাদের সঙ্গীন আকাশ ভারতীয় জঙ্গী বিমান। আঙ্গুলে গােনা পরমায়ুর কটা দিন নিয়ে ধুকছিলেন লেঃ জেনারেল নিয়াজি। হয়ত এখনও তার মনে আছে শেষরক্ষার গােপন সাধ।
তিনি হয়ত ভাবছেন-মার্কিন সপ্তম নৌবহর ঢুকেছে বঙ্গোপসাগরে। তাঁদের শয়তানি পাঁয়তারায় ভড়কে যাবেন নয়াদিল্লী। নিঃসর্ত অস্ত্রসম্বরণে তারা দেবেন সম্মতি। ইয়াহিয়ার পশুশক্তি শেষ চিহ্ন থেকে যাবে ঢাকায়। সঙ্গে সুরু হবে চীনা এবং মার্কিন মুরুব্বীদের জল ঘােলা করার পালা। জওয়ানদের নিক্ষিপ্ত গােলার ছিটানাে বালুতে যদি ঝাল্লা না হয়ে থাকে নিয়াজির দৃষ্টি তবে তিনি তাকান বঙ্গোপসাগরের দিকে। দেখবেন মার্কিন নৌবহরের পিছু পিছু আসছে সােভিয়েট নৌবহর। ভয় দেখিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের সাড়ে বাষটি কোটি নরনারীকে টুটি চেপে চেপে ধরেছে জওয়ানেরা। পিঠে লাথি মারছে মুক্তিবাহিনী। সত্যের ন্যায় দণ্ড নেমে আসতে দেরী নেই। বিক্ষুব্ধ মহাসমূদ্রে উত্তাল তরঙ্গে এক গাছি তৃণ ধরে হয়তাে বাঁচতে চাচ্ছেন নিয়াজি। এ সুযােগ পাবে না শয়তানের দল।
নিঃসর্ত অস্ত্রসম্বরণের অর্থ কি? যুদ্ধমান পক্ষ দুটির যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। তারপর কি হবে? বিজয়ী ভারতীয় বাহিনীর এবং মুক্তিযােদ্ধাদের লৌহ বেষ্টনী কাটিয়ে পাকিস্তানে সদলে গাড়ি জমাবেন নিয়াজি? ঝাঁপিয়ে পড়বেন পশ্চিমে রণাঙ্গণে? হনন করবেন জওয়ানদের? তাঁদের এই সুযােগ এনে দেবে চীন এবং আমেরিকা? এত বেকুব নয় ভারত। বহু পাক শয়তানি দেখেছে সে। বহু ঠকেছে এবং শিকেছে। তারই পরিণত ইসলামবাদী জঙ্গীশাহীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রত্যাঘাত। ঢাকা বিজয়ের সদর দরজায় এসে কেন ছাড়ব খাচার পাখী? এত রক্তপাত বৃথা যাবে? অসম্ভব। পাক সৈন্যদল চুড়ান্ত উচ্ছেদ ছাড়া কখনই কোষবদ্ধ হবে না ভারতের শানিত অসি। কাল হরণের সুযােগ পাবে না দুশমনের দল। অস্ত্রসম্বরণ সাময়িক। যদি নিয়াজির আত্মসমর্পণের সুবুদ্ধি আসে ভাল কথা। নইলে চুড়ান্ত আঘাত অনিবার্য। জওয়ানের পায়ের নীচে ঢাকা কাঁপছে। যথাসময়ে আত্মসমর্পন না ঘটলে তার ধুলিশয্যা অনিবার্য। কেই মুছতে পারবে না
দেয়ালের এই স্পষ্ট লিখন। নিয়াজি সাবধান। চাতুরীর সময় অতিক্রান্ত। আত্মসমর্পণ কর কিম্বা ধ্বংস হও। সংহার মূর্তি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে জওয়ান এবং মুক্তিবাহিনী। ওদের হুঙ্কারে ডুবে যাবে তােমর শেষ আর্তনাদ।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!