You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.18 | নিক্সন কি গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চান? | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

নিক্সন কি গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চান?

খবরে দেখছি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসন এখন এই দাবী তুলেছেন যে, “ভারত যেন বিজীত পূর্ব পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরে আসে।” তাঁর বকলমে হােয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারী মিঃ রােনাল্ড জীগলার বলেছেন, “আমরা বিদেশের মাটি থেকে বিদেশী সৈন্যের অপসারণ চাই।” ব্যাপারটা কি গায়ে পড়ে ঝগড়া করার মত নয়? অনেকটা সেই ঈশপের গল্পের নেকড়ের মতাে যে ভেড়াটিকে খাবার জন্যে তার বাবার দোষ। আবিষ্কার করেছিল।
প্রেসিডেন্ট নিকসন এখন কি করবেন? ভারত আমেরিকার নির্দেশে বাংলাদেশে সৈন্য পাঠায়নি, কাজেই আমেরিকার নির্দেশে সেই সৈন্য প্রত্যাহার করবে না। আর হােয়াইট হাউসের উপদেশেরও প্রয়ােজন নেই। কারণ মিঃ জীগলারের বকলমে ভারতের প্রতি মার্কিনী উপদেশ বর্ষণের আগেই প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী লােকসভায় ঘােষণা করেছেন যে, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রয়ােজনের চেয়ে একদিনও বেশি থাকবে না। সেই প্রয়ােজনের চেয়ে একদিনও বেশি থাকবে না। সেই প্রয়ােজনের নিয়ামক হচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন সরকার, হােয়াইট হাউস নয়। সেটা কি হােয়াইট হাউস জানে না? ভালাে করেই জানে। কিন্তু তাতে কী? দুর্ধর্ষ সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে ল্যাজে-গােবরে হবার পর ঝগড়া করার জন্যে তার একটা অজুহাত প্রয়ােজন ছিল এবং ভারতকে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে উপদেশ দিয়ে সেই অজুহাত সে সৃষ্টি করেছে। এরপর প্রেসিডেন্ট নিকসন কি করবেন? আরাে একটা নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে পাঠাবেন? না কি তার ফোজকে?
কিন্তু তার আগে আমরা হােয়াইট হাউসের কর্তৃপক্ষকে একটা পরামর্শ দেওয়া আবশ্যক মনে করি। তারা ভিয়েৎনাম থেকে অবিলম্বে তাদের পাততাড়ি সম্পূর্ণ গুটিয়ে আনুন। কারণ হা মিঃ জীগলারের মতাে আমরাও মনে করি বিদেশের মাটিতে বিদেশী সৈন্যের অবৈধ অবস্থানের কোনাে অধিকার নেই। ভিয়েত্রাম আমেরিকার দেশী সৈন্য নয়। কাজেই ঐ দেশে এক মুহূর্ত ও থাকার অধিকার তার নেই। কেবল ভিয়েৎনাম থেকে সরে আসার পরেই ‘ওয়াশিংটন ভারতকে উপদেশ দেবার অধিকার অর্জন করতে পারে। তা-ও কি পারে? সেহিসেবী ক্রোধের উন্মত্ততায় ওয়াশিংটন ভুলে গেছে যে, ভারত বাংলাদেশে সৈন্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অনুরােধে এবং এই বাহিনীর পেছনে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের শুভেচ্ছা আছে। কিন্তু নিজস্ব কয়েকজন দালাল ছাড়া ভিয়েৎনামে মার্কিন সৈন্য অবাঞ্ছিত। এই কথাটা যেন মিঃ নিকসন আর কছুি বলবার আগে মনে রাখেন।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১