বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৩রা সেপ্টেম্বর, সোমবার, ১৭ই ভাদ্র, ১৩৮০
জাতীয় বেতন স্কেলের সব কটি গ্রেড কার্যকর হোক
গত পরশুদিন মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশকৃত চারটি গ্রেডকে অনুমোদন করা হয়েছে। এই চারটি গ্রেড হল দশ, নয়, আট ও সাত। উল্লেখিত এ গ্রেড গুলোর মধ্যে বর্তমানে চতুর্থ, তৃতীয় ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা পড়বে। গত শনিবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্ৰেড চারটির অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেছেন। গত পহেলা জুলাই থেকেই এ গ্রেড গুলোকে কার্যকর করা হবে। পরবর্তীকালে বাকি ছয়টি গ্রেডকেও প্রয়োগের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হবে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে স্বল্প বেতনভুক অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনতিবিলম্বে জাতীয় বেতন স্কেল চালু করার অনুরোধ করেছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শ্রেণীর নিম্ন বেতনভুক কর্মচারী বেতন স্কেল চালু করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। এ ব্যাপারে তাদের কিছু কিছু সংশোধনের দাবি আমরা পত্র-পত্রিকায় মাধ্যমে জেনেছি। বঙ্গবন্ধু সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং অবিলম্বে নতুন বেতন স্কেল চালু করা হবে বলেও দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। স্বল্প বেতনভুক মানুষের জন্য চারটি গ্রেট চালু করার উল্লেখিত এ নির্দেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই আশ্বাসের বাস্তবায়নেই আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বাকি ৬টি গ্রেডও অবিলম্বে চালু হবে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আমরা তাতে আশাবাদী। তবু আমরা সরকারকে অনুরোধ করব অনতিবিলম্বে বাকি ৬টি গ্রেডও যেন চালু করা হয়।
নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশ যখন ঘোষণা করা হয় তখনও আমরা আমাদের সুস্পষ্ট অভিমত পেশ করেছিলাম। আমরা সেদিনের মতো আজও বলতে চাই-নতুন বেতন স্কেলে একটি সমতা বা সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। এটাকে আমরা প্রগতিশীল বেতন স্কেল বলে উল্লেখ করেছি। কিন্তু বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের অতি মূল্যের সঙ্গে নতুন বেতন স্কেলের কোন সমতা নেই। দেশের অবিন্যস্ত পঙ্গু অর্থনীতির কারণে চাহিদা পূরণে এ বেতন স্কেল অক্ষম হলেও তা গ্রহণীয় হতো যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতো। আমরা তাই অনুরোধ করব -যত দ্রুত সম্ভব জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হোক। মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা হোক। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির প্রতি সহৃদয় হয়ে কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল মেনে নিয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন।
ইদি আমিনঃ আবার খবর
উগান্ডার ইদি আমিন আবার খবরের বিষয়বস্তু হয়েছেন। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে যে, মিঃ ইদি আমিন প্যালেস্টাইনী মুক্তি সংস্থার জনৈক নেতাকে বলেছেন, তিনি চান যে, বর্তমান সপ্তাহে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিতব্য জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন এ যোগদান করতে যাবেন তখন যেন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সংস্থার কর্মীরা তাকে পাহারা দেন।
ইদি আমিন আজকের দুনিয়ায় এক আজব রাষ্ট্রনেতা -আজব মানুষ। এককালের কৃষ্ণকায় আফ্রিকার বুকে তিনি যেনো সাবেকী আমলের এক খেয়ালী রাজা। অদ্ভুত অদ্ভুত কথাবার্তা তাঁর। আজব আর বিচিত্র তাঁর বায়না। এর আগে কানাডায় কমনওয়েলথের প্রধান মন্ত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠান কালে তিনি একবার বৃটেনের রানীর কাছে একখানা বিশেষ রাজকীয় বিমান ও রাজকীয় বাহিনীর প্রহরা চেয়েছিলেন। আর একবার কমনওয়েলথের সেক্রেটারি কাছে চেয়েছিলেন ১৩ নম্বরের জুতো।
বস্তুতঃ ১৯৭০ সালে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সহযোগিতায় ডঃ মিল্টন ওবেটেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইদি আমিন উগান্ডার গদি দখল করেন এবং সে থেকে বিভিন্ন কাজকর্মে তিনি নিজেকে একজন শক্তিধর রাজা বলেই প্রমাণিত করতে তৎপর। গতবছর উগান্ডা থেকে এশীয়দের বিতাড়িত করে ইদি আমিন নিজ দেশের জাতীয়তাবাদী তরুণ সমাজের কাছে বিশেষভাবে প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন এবং সেই প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠার বলেই এখন তিনি নিজের খেয়াল-খুশি মতো যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে উগান্ডার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর অংশ কিন্তু এখনো ওবেটের প্রভাবাধীনে। শোনা যায় ডঃ ওবেটে ওই এলাকায় ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আর সম্ভবত সেই ভয়ে ইদি আমিন কানাডা যাবার সময় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান ও রক্ষী এবং এখন আলজিয়ার্সে যাবার সময় ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরদের পাহারায় থাকতে চান।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক