পূর্ব বাংলার সংগ্রামে ত্রিপুরাবাসীর একাত্মবােধ
আগরতলা, ২ এপ্রিল শয়তান ইয়াহিয়া ফৌজি শাসনের ও বাংলাদেশে নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে এবং বাংলার জনযুদ্ধের সমর্থনে আজ ত্রিপুরা বন্ধ পালন করা হয়। কোথাও আজ দোকানপাট খােলা হয়নি। অফিস-আদালত সব স্তব্ধ, বাস ও অন্যান্য যানবাহনের চাকাও আজ ঘােরেনি। শুধু দেখা গেছে ওপারের খবর সংগ্রহের জন্য জনগণকে ছুটাছুটি করতে। সর্বাত্মক বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য ছাত্র ফেডারেশন, সারা ভারত ছাত্র ফেডারেশন ও মটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ত্রিপুরার সিংহ সরকার সরকারি কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিত হতে নতুবা শাস্তি ভােগ করতে হবে এই ধরনের সার্কুলার জারি করলেও কর্মচারীরা সম্পূর্ণ তা উপেক্ষা করে বন্ধে সামিল হন।
জনসভা
আজ স্থানীয় শিশু উদ্যানে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির ডাকে কম. চিত্ত চন্দের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রধান বক্তা কম, নৃপেন চক্রবর্তী ইয়াহিয়ার এই পৈশাচিক নরহত্যার প্রতি তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভারত সরকারকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার দাবি জানান। তিনি ত্রিপুরা বাসীকে বাংলার জনগণের সমর্থনে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। কম. চক্রবর্তী চীনের নীরবতার ও রাশিয়া পাকিস্তানের ব্যাপারে যে ঘটকালি করার চেষ্টা করছে তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভার অন্যতম বক্তা নােয়াখালী জেলার আওয়ামী লীগের কর্মসচিব ও ইত্তেফাক পত্রিকার রিপাের্টার মােঃ মুস্তফা হােসেন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইয়াহিয়ার ফৌজি শাসনের এক মর্মন্তুদ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলার জয় অবশ্যম্ভাবী।
কাঞ্চন বাড়ি
বিগত ২৭ মার্চ পূর্ব বাংলার উপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে নরহত্যা যজ্ঞ আরম্ভ করিয়াছেন তাহার প্রতিবাদে স্থানীয় কাঞ্চন বাড়ি বাজারে এক মিছিল হয়। এই মিছিলের আহ্বান দেয় ছাত্র ফেডারেশন ও যুব ফেডারেশনের পক্ষ হইতে।
কমলপুর
২৯ মার্চ পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনগণের সমর্থনে ও স্বৈরাচারী ইয়াহিয়া খানের ব্যাপক গণহত্যার প্রতিবাদে, গত ২৭ মার্চ কমলপুরের হাজার হাজার ছাত্র, কৃষক ও নাগরিকের এক (বিক্ষোভ) মিছিল কুমীঘাট সীমানা পর্যন্ত যায় এবং সেখানে এক জনসভায় পূর্ব বাংলার মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঐ দিন বেলা ২টার সময় মাণিক ভাণ্ডার একাদশ শ্রেণীর ছাত্রগণ এক বিক্ষোভ মিছিল করে।
সূত্র: দেশের ডাক
০৯ এপ্রিল, ১৯৭১
২৬ চৈত্র, ১৩৭৭