You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.11 | কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন প্রচেষ্টা - সংগ্রামের নোটবুক

কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন প্রচেষ্টা

কভেন্ট্রি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মােতাবেক স্টিয়ারিং কমিটি বিলাতের বাঙালীদের সংগঠিত সংগ্রাম কমিটি সমূহকে সমন্বয় সাধন করে একটি কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ৩০ জুলাই স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে কিছু বাঙালী নেতার এক আনুষ্ঠানিক সভায় কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে একটি কনভেনশন কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। উক্ত সভায় বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগ্রাম কমিটি সমূহের ৪টি বৃহৎ জোন থেকে ৪ জন এবং ষ্টিয়ারিং কমিটি থেকে ২ জন প্রতিনিধি নিয়ে ৬ জনের একটি কনভেনশন কমিটি গঠনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।  ৩০ জুলাই আনুষ্ঠানিক সভার আলােচনার প্রেক্ষাপটে ৬ আগস্ট তারিখে ষ্টিয়ারিং কমিটির এক সভা উপরােক্ত বিষয়ে আলােচনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মিলিত হন এবং একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠনের উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। এই মর্মে অনুমােদন লাভের জন্য ষ্টিয়ারিং কমিটির শেখ আবদুল মান্নান, শাসসুর রহমান ও কবির চৌধুরী। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেন। ফলপ্রসূ আলােচনার প্রেক্ষাপটে ষ্টিয়ারিং কমিটি ১২ আগস্ট পুনরায় মিলিত হয়ে পূর্ব প্রস্তাব মােতাবেক শেখ আবদুল মান্নান ও আজিজুল হক ভূইয়াকে ষ্টিয়ারিং কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে কনভেনশন কমিটিতে মনােনয়ন দান করা হয়। এই সভায় ষ্টিয়ারিং কমিটির শেখ আবদুল মান্নান, শামসুর রহমান ও আজিজুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।  বিলাতের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। যথা ঃ (ক) সাউথ ইংল্যান্ড, (খ) মিডল্যান্ড; (গ) ল্যাংকেশায়ার এবং (ঘ) ইয়র্কশায়ার ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। ৩০ জুলাইয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত মােতাবেক চারটি অঞ্চল থেকে গউস খান (লন্ডন), আবুদল মতিন (ম্যানচেষ্টার), আরব আলী (ট্রাটফোর্ড আপন এ্যাভন) এবং এ এম তরফদারকে কনভেনশন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  এই অন্তর্ভুক্তি উল্লেখিত অঞ্চলগুলােতে গড়ে ওঠা নেতৃত্ব থেকে কোন নীতিমালার ওতে মনােনীত করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে সংগ্রামের মকাণ্ডে যারা অগ্রগামী পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাদের মধ্য থেকে কনভেনশন কমিটিতে ইক্ত করা হয়। এই অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অবশ্য পরবর্তিকালে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এ পর্যন্ত তো ছয়জন ছাড়াও কেন্দ্রীয় পরিষদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে সাহায্য করার জন্য কনভেনশন 

উক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। কেন্দ্রীয় সগ্রাম পরিষদের কর্মকর্তা ও কার্যকরী কমিটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য ব্যারিষ্টার আমীন, ব্যারিষ্টার ফেরদৌস, ডাক্তার হারুন, ডাক্তার সিরাজদৌল্লা ও গনেশ চন্দ্র দে-কে সদস্য করে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সকল প্রকার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিধি প্রেরণের বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক মুখপাত্র বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পরামর্শ মােতাবেক ৭ নভেম্বর-এ অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্থগিত করা হয়। যে সকল ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মনােনয়নে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য কনভেনশন কমিটি প্রচেষ্টা চালান। ইতিমধ্যে মাস গড়িয়ে ডিসেম্বর এসে গেলে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মােড় ত্বরিৎ গতিতে ইতিবাচক পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় এবং বিলাতের আন্দোলনে সমন্বয় করার যে তাগিদ ছিল তার প্রয়ােজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ২৪ মার্চে কভেন্ট্রি সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা তা আর কখনাে বাস্তবায়িত হয় নি।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন