You dont have javascript enabled! Please enable it!

কভেন্ট্রি সম্মেলন ও স্টিয়ারিং কমিটি

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বিলাতে বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন ও কর্মসূচী প্রণয়নের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া প্রবাসী বাঙালীদের এক গৌরবের ইতিহাস। প্রতি শহরে ও এলাকায় স্ব-স্ব উদ্যোগে সংগ্রাম কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালীরা তাদের দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববােধ ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিল। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ও পাকিস্তানীদের জঘন্য গণহত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রত্যেক বাঙালী অত্যন্ত ভাবপ্রবণ ও বিক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই কোন পরিকল্পনা ও বৃহত্তর যােগাযােগের তােয়াক্কা না করে প্রায় প্রত্যেক শহরেই একাধিক সংগ্রাম কমিটি গড়ে উঠেছিল । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একস্থানে একাধিক সংগঠন কোন প্রতিযােগিতা বা বিরােধের ফলে আত্মপ্রকাশ করেনি বরং দেশের দুর্দিনে সামান্য হলেও অবদান রাখার মহৎ উদ্দেশ্যেই গড়ে উঠেছিল। তবে প্রতিযােগিতা বা বিরােধের কারণে লন্ডনসহ কয়েকটি বড় শহরে বহু সংগ্রাম পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে। যার ফলে পরবর্তিতে সংগ্রামের কর্মসূচী গ্রহণে অহেতুক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন ছিল বিলাতে বাংলাদেশ সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু। লন্ডন শহরে বেশ কয়েকটি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ও ব্যক্তির প্রতিযােগিতার ফলশ্রুতিতে  গউস খানের নেতৃত্বে পরিচালিত যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনে “কাউন্সিল ফর লিবারেশন অব বাংলাদেশ” নামে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় । মিনহাজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন লন্ডন আওয়ামী লীগ এবং বি, এইচ, তালুকদারের নেতৃত্বে পরিচালিত ওভারসীজ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আরাে দু’টি সংগ্রাম পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে। এমনিভাবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পন্থী ন্যাপ, অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ পন্থী ন্যাপ ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলাে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করে। পেশাভিত্তিক সংগঠন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাক্তার সমিতি ও মহিলা সমিতি হতােমধ্যে বহু কর্মসূচী এককভাবে বা যৌথভাবে যােগাযােগের মাধ্যমে গ্রহণ করেছিল। রাজনীতির সাথে জড়িত নন এমন বহু সমাজসেবী ব্যক্তিরাও এলাকা ভিত্তিক বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস সমিতি, বাংলাদেশ যুব সংঘ, বাংলাদেশ সারভাইভাল কমিটি, বাংলাদেশ রিলিফ কমিটি, বাংলাদেশ গণ সংহতি, (মৌলভীবাজার) জনসেবা সমিতি ইত্যাদি নামে বহু কমিটি গঠন করে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ শুরু করে।

এমনও দেখা গিয়েছে যে, একই ঠিকানায় দুই কমিটি কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ ৫৮ ” বারউইক স্ট্রীট, লন্ডন ডব্লিউ-১ এর ঠিকানায় কাউন্সিল ফর দি পিপলস রিপাবালিক অব বাংলাদেশ” “লন্ডন এ্যাকশন কমিটি নামে দুইটি সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশের পক্ষে ভয় করেছে। লন্ডন ছাড়াও বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টার ও ব্র্যাডফোর্ডে এভাবে বহু স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম কমিটি আত্মপ্রকাশ করে।  স্বতঃস্ফূর্তভাবে এত কমিটি আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে আত্মসচেতনতা, দেশপ্রেম ও প্রত্যয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও বিলাতের সংগ্রামকে একটি সনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করা ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বেশ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়। এই বিভ্রাটের। ফলে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের পক্ষে যােগ দিয়েও কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছিলেন না। তাই মধ্য এপ্রিলেই সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও কর্মীরা উপলব্ধি করলেন যে, সকল সংগ্রাম কমিটিকে সমন্বয় সাধনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা প্রয়ােজন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে পরামর্শক্রমে কভেন্ট্রি নামক একটি ছােট শহরে ইতােমধ্যে গড়ে ওঠা সকল সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কভেন্ট্রি সম্মেলন বিলাতের বাঙালীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের এক মাইল ফলক। এত দ্রুত গড়ে ওঠা সংগ্রাম পরিষদগুলােকে সমন্বয় করার জন্য একটি। কেন্দ্রীয় সংগঠন গঠন কঠিন বিষয় হলেও কভেন্ট্রি সম্মেলনের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছিল। বিলাত প্রবাসী বাঙালীরা কোন একক রাজনৈতিক সংগঠনকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত। করতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই উক্ত সম্মেলনটিকে অরাজনৈতিক ও সার্বজনীন চরিত্র দেয়ার উদ্দেশ্যে বিলাতে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অংগনে বিশিষ্ট মহিলা মিসেস লুলু বিলকিস বানুকে সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য অনুরােধ করা হয়। তিনি কোন রাজনৈতিক দল বা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন না। উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি। হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি ইতােমধ্যে মুজিবনগর সরকারের বৈদেশিক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়ােগ লাভ করেছিলেন। নিয়ােগপত্রটি মুজিবনগর সরকার সিলেটবাসী লন্ডনে বসবাসকারী সমাজকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতা। আবদুর রকিবের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। সম্মেলনে তিনি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিয়ােগপত্রটি পাঠ করে শােনান। কভেন্ট্রি সম্মেলনে বিলাতের প্রায় সকল শহরের সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিরা যােগদান করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, গউস খান, মিনহাজ উদ্দিন, আজিজুল হক ভূঁইয়া, শেখ আবদুল মান্নান, মহিলা পােতর পক্ষে মিসেস জেবুন্নেসা বখত ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আহ্বায়ক খন্দকার ‘মাশাররফ হােসেন (লেখক) প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। কভেন্ট্রির এই প্রতিনিধি সম্মেলনে নিম্নলিখিত প্রস্তাবাবলি গৃহীত হয়। . (ক) গ্রেট বৃটেনে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল এবং এই নামকরণ হবে “Action Committee for the People’s Republic of Bangladesh in U.K.

শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হল এবং

ক উক্ত কমিটির নাম হবে “Steering Committee of the Action Commi উক্ত কমিটিকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সর্বক্ষমতার সম্পূর্ণ অধিকার দেয়া হল ।

(খ) অদ্যকার সভায় পাঁচজন সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন

 (গ) এই সভায় আরও সিদ্ধান্ত হলাে যে, “Steering Committee” কে । প্রয়ােজনবােধে আরাে সদস্য বাড়াবার ক্ষমতা দেয়া হলাে।

(ঘ) এই কমিটির যে পাঁচজন সদস্য মনােনয়ন দান করা হলাে তারা হলেন?

(১) আজিজুল হক ভুইয়া (২) কবীর চৌধুরী (3) মনােয়ার হােসেন (৪) শেখ আবদুল মান্নান (৫) শামসুর রহমান।

(ঙ) এই পাঁচজনের প্রথম সভার অধিবেশন অদ্যকার সভার সভানেত্রী লুলু বিলকিস বানুর আহ্বানে অনুষ্ঠিত হবে এবং এ সভায় একজন আহ্বায়ক নিযুক্ত করা হবে।

(চ) বর্তমানে গ্রেট বৃটেনে যত কমিটি আছে সে সকল কমিটি এই কমিটির শাখা রূপে কাজ করবে।

উক্ত সভায় আরাে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বালাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল সমিতি স্টিয়ারিং কমিটির সকল কর্মকান্ডে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।  কভেন্ট্রি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মােতাবেক স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় আজিজুল হক ভূঁইয়াকে ষ্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক মনােনয়ন করা হয়। বৃটেনের বাঙালীদের সকল সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য পূর্ব লন্ডনের ১১ নং গােরিং স্ট্রীটে “ষ্টিয়ারিং কমিটি ফর দি লিবারেশন অব বাংলাদেশ” এর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি অফিস স্থাপন করা হয়। লন্ডন প্রবাসীদের বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের বাঙালীদের সহযােগিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উক্ত অফিসটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালী প্রবাসীদের সকল কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। | কেন্দ্রীয় কমিটির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটি নিম্নলিখিত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে ঃ (ক) বিলাতে গড়ে ওঠা সংগ্রাম কমিটিসমূহের সমন্বয় সাধন করা। (খ) দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত মুক্তিযােদ্ধাদের মানসিক শক্তি ও অন্যান্য সামগ্রী যােগান দান এবং বাংলাদেশের নির্যাতিত জনগণকে সাহায্য প্রেরণ । (গ) দখলদার পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বিদেশে কার্যক্রম গ্রহণ করা। (খ) বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত সৃষ্টি করার জন্য বিদেশে সভা ও সমাবেশ আ০ করা। (ঙ) বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে বক্তব্য পেশ ও প্রচার কার্য পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি প্রেরণ করা। (চ) বিভিন্ন সংগ্রাম কা সংগৃহিত অর্থের সমন্বয় সাধন ও হিসাব সংরক্ষণ করা।

উক্ত কমিটির আহবায়ক আজিজুল হক ভূঁইয়া কমিটির কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে আরিচালনার উদ্দেশ্যে বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন । টিয়ারিং কমিটির অপর সক্রিয় সদস্য শেখ আবদুল মান্নান বৃটিশ সিভিল সার্ভিসে চাকরিরত ছিলেন। চাকরিরত থাকা সত্ত্বেও শেখ আবদুল মান্নান সংগ্রামের সকল কর্মকাণ্ডের প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছেন। শামসুর রহমান পূর্ব লন্ডনের অধিবাসী ছিলেন এবং তিনি কমিটির কার্যক্রমে উল্লেখযােগ্য অবদান রেখেছেন। কবির চৌধুরী এবং মনােয়ার হােসেন লন্ডনের বাইরে বসবাস করার ফলে আন্দোলনের সকল কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকতে পারতেন না। কোন অজ্ঞাত কারণে পরবর্তীকালে ষ্টিয়ারিং কমিটির সদস্যপদ থেকে মনােয়ার হােসেনের নাম বাদ পড়ে যায়। | ষ্টিয়ারিং কমিটির অফিস স্থাপনের পর সংগ্রামের কর্মসূচী এবং বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ষ্টিয়ারিং কমিটিতে কয়েকজন সার্বক্ষণিক কর্মী নিয়ােজিত হন। তাদের মধ্যে শিল্পী আবদুর রউফ, মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং শামসুল আলম চৌধুরীর নাম বিশেষ উল্লেখযােগ্য । শিল্পী আবদুর রউফ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় তথ্য ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপ-পরিচালক ছিলেন এবং পরবর্তিকালে তিনি বাংলাদেশে জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডি এফ পি) ও অর্কাইভের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিল্পী হিসেবে আবদুর রউফের উপর দায়িত্ব ছিল ষ্টিয়ারিং কমিটির প্রচার, আঁকা-জোকা, লিফলেট লেখা ও প্রকাশ করা। জনাব রউফ ষ্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, গণসংস্কৃতি সংসদ ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির বিভিন্ন প্রচারপত্র ও পােষ্টার তৈরি ও প্রকাশনায় সহযােগিতা করেছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী পি আই এ এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পি, আই, এ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের আন্দোলনে যােগদান করেন এবং ষ্টিয়ারিং কমিটিতে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়ােজিত হন। শামসুল আলম চৌধুরী বার এট ল’ পড়ার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। তিনি ষ্টিয়ারিং কমিটি এবং বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক প্রতিনিধি বিচারপতি চৌধুরীকে সাহায্য করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়ােজিত ছিলেন। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক প্রতিনিধির অফিস হিসেবে ১১ নং গােরিং স্ট্রীটস্থ অফিসটিকেই ব্যবহার করতেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের বৈদেশিক প্রতিনিধি ও ষ্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে যুগপথভাবে এই অফিসে বসে কাজ করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষে প্রচার এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিশ্বজনমত স্টর জন্য বিলাতের অন্যান্য সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি স্টিয়ারিং কমিটিও সমাবেশ, হাত্রা এবং লবিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া ষ্টিয়রিং কমিটি মুজিবনগর “মর সাথে যােগাযােগ রক্ষা এবং বিলাতের আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন, নির্দেশ জারি এবং পরামর্শ প্রদানের দায়িত্ব পালন করে। মুজিবনগর থেকে প্রেরিত প্রতিনিধিদের দেশে প্রেরণ এবং যােগাযােগ স্থাপন করার ব্যাপারেও ষ্টিয়ারিং কমিটি দায়িত্ব পালন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে বিলাতের বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত রাখার উদ্দেশ্যে ষ্টিয়ারিং কমিটি ইংরেজী ভাষায় “বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষায় সংবাদ পরিক্রমা” নামে দু’টি সংবাদ সাময়িকী প্রকাশ করে। উ পত্রিকাসমূহ বাংলাদেশ সরকারের এবং ষ্টিয়ারিং কমিটির মুখপত্র হিসেবে বিলাতে বাঙালীদের কাছে খবরাখবর পরিবেশন করে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!