বিলাতে পত্র পত্রিকার ভূমিকা জুলাই ৭১
জুলাই দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় বৃটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিক দলীয় সদস্য আর্থার উলীর নেতৃত্বে প্রেরিত বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দলের ভারতে শরণার্থী শিবির এবং বাংলাদেশের কিছু এলাকা পরিদর্শনের খবর প্রকাশ হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্য টোবী মাসেল প্রদত্ত বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিচারে হত্যা, ধ্বংস ও নশংসতার বিবরণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই দিনে দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ অপর এক সংবাদ প্রতিবেদনে কানাডা কতৃক পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ লাইসেন্স বাতিলের খবর প্রকাশিত হয়। এর ফলে পাকিস্তানী জাহাজ ‘পদ্মা’ মন্ট্রিয়েলের বন্দর থেকে খালি ফিরে গিয়েছে বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়। ২ জুলাই ‘দি টাইমস্’ পত্রিকায় বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দলের সদস্য রেজিনাল্ড প্রেন্টিস, এম, পি, এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে সৃষ্ট সমস্যা নিরসন শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন। একই দিনে ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রতিনিধি দলের নেতা আর্থার বটমলী এমপির বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তিনি মন্তব্য করেন যে, পূর্ববঙ্গ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার পরিণতির জন্য দায়ী হবেন। পূর্ব বঙ্গে আরও একটি ভিয়েতনাম সৃষ্টি হওয়ার আশংকার কথাও তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন। পূর্ববঙ্গ সফরের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে মিঃ বটমূলী বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অনুষ্ঠিত গণহত্যাকে বিশ্বের একটি চরম লজ্জাজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেন। ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা ৩ জুলাই তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল কমাণ্ডের প্রধান জেনারেল ফরমান আলী খানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন বৃটিশ সাংবাদিক মিস্ ক্লেয়ার হােলিংওয়ার্থ। জেনারেল খান সাক্ষাৎকারে সীমিতভাবে হলেও বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর অস্তিত্ব স্বীকার করে মুক্তিবাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য হত্যা, ধ্বংস ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। ৫ জুলাই ‘দি টাইমস্ একা গন্ধিী পীস ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ভারতের সর্বশ্রদ্ধেয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণের এক বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে মিঃ নারায়ণ মন্তব্য করেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এমন এক পর্যায় এসেছে যখন কার্যকরী ব্যবস্থা’ গ্রহণ এখন প্রয়ােজন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তযােদ্ধাদের জন্য ভারী সমরাস্ত্র পর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য সকল মহলের কাছে আবেদন “ম। ৬ জুলাই ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ঢাকা থেকে মিস ক্লেয়ার হােলিংয়ার্থের
একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নাজক পরিস্থিতির উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয় যে, ইয়াহিয়া খান যদি অতি আপােষ রফা না করেন তা হলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে তা কেউ রুখতে, প্রতিবেদনে আরাে বলা হয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এদেশের জনগণ সমর্থন করে বিধায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন শুধু সময়ের ব্যাপার। লাই দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় “Pakistan’s only way out” শিরােনামে মন্তব্যে বলা হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে পূর্বকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এতদঅঞ্চলে শান্তি পুনঃস্থাপন করা যায়। সম্পাদকীয়তে আরাে উন্ন, হয় যে, পূর্ববঙ্গে’ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচার কারাে ক গ্রহণযােগ্য হতে পারে না এবং এর কোন ভবিষ্যত নেই। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয় “It is unacceptable also to the International community, both on grounds of morality and because it most gravely endangers world peace and stability. Nor can one believe that this misguided policy of President Yahya’s would be acceptable to him or to the people of West Pakistan if they would realistically and honestly consider both the depressing results achieved so far and the prospects of continued blood shed increasing chaos and final disaster in the future.” একই দিনে দি টাইমসূ’ পত্রিকায় ফ্রান্স কর্তৃক পাকিস্তানের জন্য সামরিক অস্ত্র সরবরাহ নিষিদ্ধ এবং তৎসংক্রান্ত সকল চুক্তি বাতিলের খবর প্রচারিত হয়। উপরােক্ত সম্পাদকীয় এবং সংবাদ প্রতিবেদন প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল প্রেরণা ও উৎসাহের সৃষ্টি করে এবং ধীরে ধীরে পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকা ৮ জুলাই ” needed for refugees” শিরােনামে এক সংবাদ সমীক্ষা প্রকাশ করে। সংবাদে ভারতের অভ্যন্তরে শরণার্থীদের সংখ্যা ৬০ লক্ষের উর্ধ্বে হবে বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র ষ্ট্যানলি রাইট বলেন যে, এই বিশাল জনগােষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন পাউণ্ড ষ্টার্লিং এর সমপরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হবে। ৯ জুলাই ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বেনাপােল সীমান্ত এলাকা থেকে মিসেস ক্লেয়ার হােলিংওয়ার্থের প্রেরিত এক সংবাদ প্রতিবেদন “War spirit grows on trigger happy Pakistan border” শিরােনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ভারত সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ও যুদ্ধ প্রস্তুতি আবহাওয়ার কথা উল্লেখ করে শান্তি রক্ষা জন্য জাতিসংঘ শান্তি বাহিনীর উপস্থিতির প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়।
১১ জুলাই বৃটেনের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক “দি সানডে টাইমস্ পত্রিকায় “A regime 5 thugs and bigots” শিরােনামে মুরে সায়েল (Mury Sayle) একটি দীর্ঘ প্রতিবেল” প্রকাশ করেন। প্রতিবে অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ও হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাড়ি নির্যাতনের সীমা অতর্কিত প্রতিবেদক বাংরাদেশের অভ্যন্তরে খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা ও বেনাপােল ভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বাংলাদেশের জনগণের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও অত্যাচারের এক করুণ চিত্র এই দীর্ঘ প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। বর্বর সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা ধিকৃত হিটলার মুসুলিনীর অত্যাচার ও নের সীমা অতিক্রম করেছে বলে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয় যে, The pacification methods used on the North-West frontier by British Army a long ago, burning villages and gunning down inhabitants are bad enough when imported into heavily lated and peaceful place like East Pakistan. The roduction of the political methods of Hitler and Mussolini the British Arm even less defensible.” দি টাইমস্ পত্রিকা ১৪ জুলাই বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক একটি রিপাের্ট প্রকাশ করে। ১৩ জুলাই দি নিউইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকা বিশ্বব্যাংকের এই গােপন বিপাের্টটি প্রকাশ করে, যা ১৪ জুলাই লন্ডন থেকে পুনঃ প্রকাশ করা হয়। ব্যাংক কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধি হেন্দ্রিক ভেনডার হেইজেন (Hendrick Vander Heijden) বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চলের যশাের, খুলনা, কুষ্টিয়া চালনা ও মংলা পাের্ট এবং তৎসংলগ্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন (৩ জুন থেকে ৬ জুন, ‘৭১) করে ব্যাংকে যে গােপন রিপাের্ট। পেশ করেন তা প্রকাশিত হয়। রিপাের্টে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তান কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা ও ধ্বংসের বিবরণ দেয়া হয়। রিপাের্টের এক অংশে কুষ্টিয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয় যে, Ninety percent of the houses, shops, banks and other buildings were totally destroyed. The city looked like a Second world war Germam town having undergone strategic bombing attacks. People were sitting around dazed. When we moved around, every one Hed. It was like the morning after a nuclear attack” এমনিভাবে অন্যান্য এলাকার ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ উপরােক্ত রিপাের্ট উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাংক ও দাতা দেশসমূহ যে পাকিস্তানকে সাহায্য দান স্থগিত করেছিল তার জন্য উপরােক্ত রিপাের্টটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। ১৪ জুলাই ‘দি টাইমস্ পত্রিকায় ‘The terror that perpetuates terror” রােনামে এক সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয় যে, বৃটিশ মেন্টারী প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন ও বিশ্ব ব্যাংক মিশনের রিপাের্ট থেকে এটা স্পষ্ট যে, “তান সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়ােগ ও ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাসের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গকে তাদের এল রেখেছে। উপরােক্ত তথ্যাদি থেকে এখন প্রমাণিত হচ্ছে যে, পাকিস্তান সরকার এ এ সব তথ্যাদি সরবরাহ করেছে তা সব ভুল। পূর্ববঙ্গের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে যে সন্ত্রাস ও শক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা যাবে সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়। ফাইনান্সিয়াল টাইমস্ পত্রিকায় ১৯ জুলাই বৃটিশ সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল এ গহীত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক প্রেসিডেন্ট খান রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক আদালতে করা হবে বলে জানান। তিনি আরাে বলেন যে, ভারত পূর্ব বঙ্গের’ ব্যাপারে যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করবেন এবং সে ক্ষেতে পাকিস্তান বন্ধুহীন থাকবে না। লন্ডনে অনুষ্ঠিত আমেরিয়ার বার এসােসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২০ জুলাই ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় অর্ধপষ্ঠান বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি খােলা চিঠি” প্রকাশ করে। খােলা চিঠিতে পাকিস্তান সেনাবাটি কর্তৃক বাংলাদেশে পরিচালিত গণহত্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় যে, পাকিস্তানের সামরিক সরকার জাতিসংঘের জেনােসাইড কনভেনশন’ এর দ্বিতীয় ধারার ক খ ও গ উপধারা লংঘন করেছে। তাই আইনজীবী হিসাবে আইনভঙ্গকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদেরকে সােচ্চার হওয়ার জন্য আবেদন জানানাে হয়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অবহিত করে নিম্নোক্ত দাবিসমূহের প্রতি আমেরিকার আইনজীবীদের সক্রিয় সমর্থন কামনা করা হয়। “খােলা চিঠিতে যে সকল দাবি উত্থাপন করা হয় তার মধ্যে (ক) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান; (খ) পাকিস্তানকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করা; (গ) গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবের মুক্তি এবং (ঘ) জেনােসাইড কনভেনশন লংঘন ও বিশ্বশান্তি বিপন্ন করার ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন দাবিসমূহ উল্লেখযােগ্য। ২৩ জুলাই ‘দি টাইমস্ পত্রিকায় তাদের সংবাদদাতা প্রেরিত এক সংবাদে গেরিলা মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ২০,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হওয়ার দাবি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সংবাদদাতার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপরােক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চল কমান্ডের অন্যান্য কমান্ডারদের সাথে সাক্ষাৎ করেও সংবাদদাতা উল্লেখিত তথ্যের সমর্থন পান বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
২৫ জুলাই ‘সানডে টাইমস্’ পত্রিকায় পিটার গীল প্রেরিত সংবাদ “Still no end to Bengal Pight” শিরােনামে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত শরণার্থীদের দুঃখ দুদশম কথা বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়। প্রাণের ভয়ে সর্বস্ব হারিয়ে, লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলমান শরণার্থীদের অব্যাহত আগমন এবং শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ অবস্থার কথাও সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২৫ জুলাই ‘দি অবজাভার প অপর এক খবরে চীনের নীতি সমর্থক মাওপন্থী ভারতের নক্সালপন্থীদের এক বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে ধনিক শ্রেণীর আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করে পাকিস্তানকে সমর্থনের কথা প্রকাশিতহয়। নক্সালপন্থী এই গ্রুপের নেতা অসীম চ্যাটার্জীর সাথে রী পার্টির চেয়ারম্যান চারু মজুমদারের এ বিষয়ে মতভেদের কথাও সংবাদ সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়। ২৮ জুলাই ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় “The plight of Bengal” শিরােনামে একটি কীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয় যে, ভারতের অভ্যন্তরে দেশের শরণার্থী সমস্যা এতই প্রকট হয়েছে যার ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কক ও ভীত শরণার্থীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হবেন নতুবা পাকিস্তানের ঘােষণা করতে বাধ্য হবেন। সম্পাদকীয়তে আশংকা করা হয় যে, শুধুমাত্র টনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানাে বা যুদ্ধের সম্ভাবনা পরিহার করা সম্ভব হবে না। সমস্যা সমাধানের কয়েকটি পদক্ষেপের সুপারিশ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয় যে, “It may be that nothing, no diplomatic intervention, can roverse this humaliting and disastrous side. But a few dramatic gestures would help. First the release of Sheikh Mujibur Rahman and his installation in Dhaka. Secondly, concerted action by the Security Council. Thirdly, clear warning to Yahya that he will remain, economically and moraly, beyond the pall until his Punjabi troops fly home to the Punjab.” ৩০ জুলাই দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় এ্যাকশন বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়ােজিত ১ আগষ্টের ট্রাফেলগার স্কোয়ারের জনসমাবেশে যােগদানের আবেদন জানিয়ে পূর্ব বঙ্গে গণহত্যা” শিরােনামে অর্ধপৃষ্ঠা ব্যাপী একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। সিনেটর ইউজিন ম্যাকার্থী এর বাংলাদেশকে সমর্থন দানের খবর প্রচারিত হয়। ৩১ জুলাই ‘দি টাইমস্ পত্রিকায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে এক সংবাদ সমীক্ষায় বলা হয় যে, যে সকল দেশ পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদান স্থগিত করেছে। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দূরভিসন্ধিমূলক আচরণ করছে বলে ইয়াহিয়া খান অভিযােগ করেছেন। উক্ত সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘােষণার হুমকি প্রদান করেন। একই দিনে “দি ইকনমিষ্ট” পত্রিকায় “Time is running out” শিরােনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। মুক্তযুদ্ধ ও ভারতে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলােচনা করা হয় এবং তার ভয়াবহ পরিণতির আশংকার কথা উল্লেখ করা হয়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন