You dont have javascript enabled! Please enable it! বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা - মার্চ ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা (মার্চ ‘৭১)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিলাতের পত্র-পত্রিকার অবদান ছিল অপরিসীম। বিলাতের প্রচার মাধ্যমকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তােলার জন্য প্রবাসী বাঙালীদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন কার্যক্রম। বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বিলাতের সাংবাদিকদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিলাতে প্রবাসীদের সমাবেশ, শােভাযাত্রা, নিউজ বুলেটিন ও পুস্তিকা প্রকাশ ইত্যাদি পদক্ষেপ উল্লেখযােগ্য। এ ছাড়া বিলাতের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ব্যাখ্যা ও অগ্রগতি অবহিত রাখার কার্যক্রমও বিলাতের সংবাদপত্রগুলাের উপর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সময়ে বৃটিশ এম, পি’দের বাংলাদেশ ও সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিলাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ ইস্যু বৃটিশ সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও গুরুত্ব প্রদানে সাহায্য করেছে। যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বি, বি, সি এর বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান, শ্যামল লােধ (প্রয়াত), কমল বােস, জনমত পত্রিকার সম্পাদক এ, টি, এম ওয়ালী আশরাফ (বাংলাদেশ সংসদে সাবেক এম, পি) এবং স্টিয়ারিং কমিটির আবদুর রউফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ একটি বিশেষ গ্রুপ লন্ডনের সাংবাদিকদের সাথে সাবক্ষণিক যােগাযােগ রক্ষা করতেন। এ ব্যাপারে বৃটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিংগ, পিটার হেজেলহা, বৃটিশ পত্রিকায় কর্মরত পাকিস্তানী সাংবাদিক এনথনি মাসকারেনহাস, কলিম সিদ্দিকী এবং ভারতীয় সাংবাদিক ধরম পালসহ লন্ডনে কর্মরত বেশ কিছু সাংবাদিক সহযােগিতা করেন। | বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই বৃটিশ পত্র-পত্রিকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকারের অবহেলা ও একপেশে নীতির ফলে বাঙালীদের ক্ষোভ এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনার আভাস দিয়ে প্রতিবেদন এ করেছে। ১৯৭০ এর নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাসের পর তৎকালা” পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে পাকিস্তান সরকারের রিলিফ কার্যক্রমে ব্যর্থতা ও অবহে বিষয়ে বৃটিশ পত্র-পত্রিকায় বিরূপ সমালােচনা হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, “, প্রলংকরী জলােচ্ছ্বাসের পর উপকূলীয় অঞ্চলে পাকিস্তান সরকারের সাহায্য পােহ বৃটিশ সাহায্য জাহাজ পৌঁছেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের এই মহাবিপদে পাকিস্তানের ইয়াহিয়া সরকারের চরম অবহেলা বাঙালীদের মধ্যে বিরূপ প্রাতা রের সাহায্য পৌছার পূর্বে এই মহাবিপদের দিনে ধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি।

করেছিল এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এমনি সময়ে লন্ডন থেকে প্রকাশিত দি গার্ডিয়ান পত্রিকার কলামিস্ট পাকিস্তানী সাংবাদিক কলিম সিদ্দীকী ১৯৭০ সানের ২৪ নভেম্বরের সংখ্যায় “Independence fever in Pakistan” শিরােনামে একটি বাস্তবমুখী কলাম প্রকাশ করেন। উক্ত কলামে কালানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বক্তব্যের উল্লেখ করে বাঙালীদের স্বাধীনতার প্রতি ঝুঁকে পড়ার বাস্তব চিত্র তুরে ধরা হয়। পাকিস্তানী নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কলিম সিদ্দিকী বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সাহসের সাথে প্রকাশ করে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের কলাম লিখার জন্য কলিম সিদ্দীকি পাকিস্তান হাই কমিশন এবং পাকিস্তানী প্রবাসীদের ভর্ৎসনার পাত্র হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কলিম সিদ্দিকীর ভবিষ্যৎ বাণীই সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের সকল অবহেলা ও নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের তাজা অভিজ্ঞতার আলােকে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঙালীদের রায় মূলত কলিম সিদ্দিকীর “স্বাধীনতার আভাস বা ইংগিত হিসাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ ইং সনের ৭ ডিসেম্বরের দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘Ivory tower power” শিরােনামে এক সাব এডিটরিয়েল কলামে পিটার প্রেসটন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কঠিন বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করেন। গণতান্ত্রিক রায়কে উপযুক্ত মূল্যায়ন করা না হলে বা বাঙালীদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে উপেক্ষা করা হলে পাকিস্তানে একটা সাংঘাতিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে বলে উক্ত উপসম্পাদকীয়কে উল্লেখ করা হয়। পিটার প্রেসটন উক্ত উপসম্পাদকীয়ের এক স্থানে উল্লেখ করেন যে, the cry of Bengal sounds like a united cry of hunger and deprivation” কিন্তু ইতিহাসের নির্মম সত্য এই যে, যা পিটার প্রেসটনের কাছে। পরিষ্কার ছিল তা পাকিস্তানের শাসকদের বােধগম্য হয় নি। এই “United cry” কে। চ্ছিন্নতাবাদী পাকিস্তানের শত্রুদের গন্ডগােল আখ্যায়িত করে পাকিস্তানের শাসকরা দিবান্দ্রিাতে বিভাের ছিলেন। | ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী ড্রামা বাংলাদেশের সকলের ততে রয়েছে। বিলাতের পত্র-পত্রিকা ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চের ঘটনাবলী ” গুরুত্ব সহকারে পরিবেশন করে। পাকিস্তানের সামরিক নেতাদের একটু ভুলে যে শপথয় হতে পারে তা পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাতে পাকিস্তানের সক শাসিকদের কোন উপলব্ধি বা শুভবুদ্ধি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়নি। ২৫ মার্চের কালাে গত সংঘটিত হওয়ার পর সময়ের ব্যবধান ও ২৬ মার্চ ঢাকার সাথে বিশ্বের সকল বন্ধ থাকায় ২৭ মার্চ বিলাতের সকল পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনা ” লাভ করে। বিলাতের রক্ষণশীল পত্রিকা হিসাবে পরিচিত ‘দি টাইমস’ পত্রিকার গম এবং তৎসঙ্গে একই দিনে প্রকাশিত “War clouds over Pakistan”

রাত্রি যথারীতি সংঘটিত হওয়ার পর সময় শিরােনাম লাভ করে শিরােনাম এবং নামের সম্পাদকীয় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন অবদান  রেখেছে। একই দিনে লন্ডনের আর একটি রক্ষণশীল পত্রিকা দি টেলিগ afoche Calella “Jinnah’s dream of unity dissolves শিরােনামে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর বিবরণ পেশ করেন। গণতান্ত্রিক ও উদার “দি গার্ডিয়ান” ২৭ মার্চে “The tragedy in Pakistan” শিরােনামে একটি সম্পাদন প্রকাশ করেন। এই সম্পাদকীয়তে বলা হয় যে, The immediate outcome tal be a bloody reaffirmation of the east’s worst suspicious of the west’s intenstions… All of Pakistan’s leading politicians have contributed to the slow-burning fuse on this tragedy. The pity is that President Yahya Khan could not see his way to accept Bengal separate identity and to crystallise it in some blood saving form.” বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘােষণার অব্যবহিত পরে অর্থাৎ ২৭ ও ২৮ মার্চের বিলাতের সংবাদপত্রসমূহে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘােষণার খবর প্রাধান্য লাভ করে। ২৫ মার্চের কালাে রাত্রে বাংলাদেশে যে গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা ঘটেছে তা তখনাে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়নি। ২৭ ও ২৮ মার্চের খবরা-খবর ভারতের দিল্লী থেকে পাঠানাে খবরের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়। ঢাকায় ২৫ মার্চ রাত্র থেকে সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকায় এবং সাংবাদিকদের হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আবদ্ধ করে রাখায় ঢাকা থেকে কোন সাংবাদিক কোন খবর পরিবেশন করতে পারেনি। পূর্ব পাকিস্তানে’ গৃহযুদ্ধ, তুমুল যুদ্ধ চলছে, পাকিস্তানী ট্যাংক বিদ্রোহীদের দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি খবরা-খবর ইতােমধ্যে প্রকাশিত হলেও প্রকৃত অবস্থা তখনাে অন্ধকারে ছিল। ২৮ মার্চে সানডে টাইমসে ডেভিড হােলডেন “The second flood in East Pakistan” শিরােনামে এক বিশ্লেষণাত্মক দীর্ঘ প্রবন্ধে বাংলাদেশে ভয়াবহ অবস্থার কথা বিস্তারিত আলােচনা করেন এবং পাকিস্তানের পুনঃ একত্রীকরণের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে সংঘটিত জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রকাশ শুরু হয় ২৯ মার্চ থেকে।

২৯ মার্চ দি গার্ডিয়ান পত্রিকায়। পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত সাংবাদিক মার্টিন এ্যাডনি তিনটি পৃথক রিপাের্ট প্রকাশ করেন। তার প্রতিবেদনগুলাের শিরােনাম ছিল ঃ (১) Curfew eased as army moPP + rebellion () Rocket attack on the campus 47 (0) Troops Use shot first tactics” উপরােক্ত তিনটি প্রতিবেদনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যা প্রাথমিক রিপাের্ট প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজনমত স্তম্ভিত হয়ে যায়। মার্টিন এ্যাডনি অশJI” সাংবাদিকদের সাথে তৎকালীন হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আবদ্ধ থেকে ২৪ ঘন্টা থেকে বের হয়ে যেতে সক্ষম হন। পাকিস্তান সামরিক জান্তা ২৫ মার্চের কালাে ” ঘণ্টা পর সকল বিদেশী সাংবাদিকদের দেশ থেকে বের করে দেয় হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আবদ্ধ অবস্থায় থেকে তিনি যতটুকু উপলব্ধি করেছেন এবং খবরা-খবর বছিলেন তার ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল উপরােক্ত তিনটি প্রতিবেদন। মার্টিন এ্যাডনি এর এক স্থানে লিখেছেন যে, “Dacca was still burning when I and or foreign journalists left it nearly 24 hours after the Army an its military assault on an almost unarmed population” | ২৮ মার্চ লন্ডন থেকে প্রকাশিত রবিবারের পত্রিকা “দি অবজারভার’ এ ‘পূর্ববঙ্গ’ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, পূর্ববঙ্গে সামরিক বল প্রয়ােগ করে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বরং এই বল। প্রয়ােগ দেশটিকে গৃহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী’ ঘােষণা করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান মারাত্মক ভুল করেছে বলেও সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়। ২৯ মার্চ ‘দি টাইম্‌স’ পত্রিকায় কলকাতা থেকে তাদের প্রতিনিধি পিটার হেজেলহার্সট প্রেরিত এক সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানে বল প্রয়ােগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক বাহিনীকেও পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আল্লাহ পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে বলে মন্তব্য করেন। দি টাইম্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের এক অংশে বলা। “Thanks Allah, Pakistan is at last saved, he (Bhutto) said, as the tanks and guns rolled into Bengal. But the dream of Mr. Jinnah, the first Governor-General of Pakistan, of a Country united by the bond of Islam has vanished into thin air. Mr. Bhutto’s new Pakistan will be kept together with rifle and bayonets.”

লন্ডন থেকে প্রকাশিত বৈকালিক দৈনিক ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকা এসােসিয়েটেড প্রেসের ফটো সাংবাদিক মাইকেল লরেন্স এর বরাতে “The Pakistan Death horror” শিরােনামে এক পূর্ণ পাতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মাইকেল লরেন্স ও অন্যান্য বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে ঢাকায় আবদ্ধ থেকে বেরিয়ে যেতে সমর্থ হন এবং কিছু হক নােট ও গােপনে তােলা কিছু ছবি নিয়ে যেতে সমর্থ হন। ২৯ মার্চ তারিখ থেকে। লাদেশে সংঘটিত প্রকৃত তথ্য বিশ্ববাসী জানতে শুরু করে। বাংলাদেশের ঘটনাবলী। ব কাছে তুলে ধরার ব্যাপারে বৃটিশ অপর এক সাংবাদিক সাইমন ড্রিংগ বিশেষ ভূমিকা। “রেছেন। তিনিও অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হােটেলে আবদ্ধ * পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর সালিক যখন ২৬ মার্চ (শুক্রবার) বিকাল ৫-৩০ মিঃ ৯ ৩০ জন সাংবাদিককে জোর করে হােটেল থেকে এয়ারপাের্টে নিয়ে যান তখন ” হােটেলে আত্মগােপন করে থাকেন। ২৫ মার্চের কালাে রাত্রির ২৪ ঘন্টা পরে। ‘রের মতাে সান্ধ্য আইন শিথিল করা হয় তখন ড্রিংগ গােপনে ঢাকার বিভিন্ন অংশ। বিদেশী প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক সায়মন ড্রিংগ হােটেলে আত্মগােপন যে প্রথম বারের মতাে সান্ধ ঘরে দেখেন এবং পরবতী সুযােগে ঢাকা থেকে ব্যাংককে চলে যান। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ব্যাংকক থেকে লন্ডনে প্রেরণ করেন এবং তা দি ডেইলী টেলিকায় পত্রিকায় “Tanks crush revolt in Pakistan” শিরােনামে প্রকাশিত হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পুলিশ লাইন ও পুরানাে ঢাকার হিন্দু প্রধান এলাকাসহ ঢাকায় সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন। সায়মন ড্রিংগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার হওয়ার খবর চুড়ান্তভাবে জানা যায়। ইতােপূবে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন ভিন্নধর্মী খবর পরিবেশন করা হয়েছিল। সায়মন ড্রিংগের প্রাথমিক রিপাের্টে জানা যায়। যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা আক্রমণের জন্য ১ ব্যাটেলিয়ন আমর্ড, ১ ব্যাটেলিয়ন আর্টিলারী এবং ১ ব্যাটেলিয়ন ইনফ্যান্ট্রি (সর্বমােট ৩ ব্যাটেলিয়ন) সৈন্য ব্যবহার করেছে। সায়মন ড্রিংগ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, “In the name of God and a united Pakistan, Dhaka is today a crushed and frightened city. After 24 hours of ruthless, cold blooded shelling by the Pakistan army, as many as 7000 people are dead, large areas have been levelled…”

| দি টাইমস পত্রিকা ৩০ মার্চ এসােসিয়েটেড প্রেসের ফটো সাংবাদিক মাইকেল লরেন্সের বরাত দিয়ে “At Dhaka University the burning bodies of students still lay in dormitory beds… A mass grave had been hastily covered…” শিরােনামে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রথম পাতায় হেড লাইন। প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকায় সামরিককর্তাদের চক্ষুকে ফাকি দিয়ে যে কয়জন সাংবাদিক ঢাকার ধ্বংসলীলা দেখার সুযােগ করে নিয়েছিলেন মিঃ লরেন্স তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন। দি টাইম্‌স ছাড়াও ইভিনিং স্ট্যাণ্ডার্ডসহ অন্যান্য পত্রিকা মাইকেল লরেন্সর প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ প্রকাশ করে এবং তার তােলা ঢাকার ছবি ছাপিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা বিশ্ব বিবেকে কাছে তুলে ধরে। তার প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, “Touring the son burning areas of fighting on Saturday and Sunday, it was obvious that the city had been taken without warning: | বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘােষণার পর বিশ্বজনমতের যে এক অংশ স্বাধীনতা ঘােষ বাঙালীদের বাড়াবাড়ি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মনে করেছিলেন সে অংশ ও ২ ৩ খবরা-খবরে স্বাধীনতা ঘােষণার যৌক্তিকতাকে স্বীকার করতে বাধ্য ২ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত এ পত্রিকার ভূমিকা বিশেষ অবদান রেখেছে। ঢাকা থেকে প্রত্যাগত বৃটিশ সাংবাদিকদের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ প্রকাশ বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত চিত্র আংশিকভাবে হলেও বৃটিশ জশন রেছিলেন সে অংশ ও ২৯ এবং ৩০ গুতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত এ কয়েকদিনের দশার বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পর বৃটিশ জনমনে বিরাট পতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ২৮ ও ২৯ মার্চ এবং এপ্রিলের প্রথম দিকে লন্ডন থেকে প্রকাশিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক পত্রিকার সম্পাদকীয়সমূহে উক্ত প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটে । উপরােক্ত সম্পাদকীয়সমূহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের কর্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত নির্দেশ করে মন্তব্য করা হয়। সুদুর লন্ডন থেকে সাংবাদিকরা যে ভবিষ্যতবাণী করতে সমর্থ হয়েছিলেন বা পাকিস্তান সংকটে যে বাস্তব সমাধান চিন্তা করতে পেরেছিলেন তা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের পক্ষে চিন্তা করা সম্ভব হয়নি।

২৮ মার্চ, ১৯৭১ইং তারিখে ‘সানডে টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ‘The victim শিরােনামে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলা হয় যে, “What ever happens, the old Pakistan is dead. The rulers are trying to deny that fact by arms, but the attempt cannot be other than tragic folly.” লন্ডন থেকে প্রকাশিত রক্ষণশীল এই পত্রিকায় ২৫ মার্চের কালাে রাতের ঘটনার পর তিন দিনের মধ্যে উপরােক্ত মন্তব্য কি পরিমাণ বাস্তব ছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছিল। ‘দি সানডে টেলিগ্রাফে’ উপরােক্ত সম্পাদকীয়তে বায়াফ্রার গৃহযুদ্ধ এবং ভিয়েতনামে আমেরিকার বর্বরতাকে উল্লেখ করে পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধকে আরাে ভয়াবহ ও ব্যতিক্রমধর্মী বলে আখ্যয়িত করা হয়। ‘দি সানডে টেলিগ্রাফের মন্তব্যকে অনুধাবন করে অর্থাৎ পুরানাে পাকিস্তানের যে মৃত্যু ঘটেছে তাকে মেনে নিয়ে পাকিস্তানের শাসক গােষ্ঠী যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতেন তা হলে হয়তাে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এত রক্তপাত ঘটাতাে না। ২৯ মার্চ ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় The watching Neighbours’ শিরােনামের এক। সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আর একটি বিশেষ দিক বিশ্ব জনমতের কাছে তুলে ধরা হয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মতামতকে পদদলিত করে একটি জনগােষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিভাবে গ্রহণ করতে পারে তার আভাস উক্ত সম্পাদকীয়তে দেয়া হয়। সম্পাদকীয়-এর এক অংশে উল্লেখ করা হয় যে, *”Undeniably all the emotions of the partition of 1947 are Tevived by the dispute that is now being fought over. And in this context India’s involvement can begin with the natural Bengali ympathies of such a politically volatile city as Calcutta. There is much encouragement also for champions of anti Pakistani mument to get into action.” বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ভারত এবং চীন ভাবে মূল্যায়ন করবেন তা সম্পাদকীয়তে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশেষ করে লাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ২৯ মার্চে রক্ষণশীল পত্রিকা দি স পত্রিকা যে মন্তব্য করেছিল তা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে রূপ লাভ

করেছিল। একথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, ১৯৪৭ সনে ভারত বিভক্তিকরণ ভারতে বহু নেতা মেনে নিতে পারেননি এবং শক্তিশালী পাকিস্তানও অনেকের কাম্য চিন এমতাবস্থায়, পাকিস্তানের এক অংশ অস্ত্রের বলে বলীয়ান হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ তা নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রক্রিয়ায় ভারত নিপ থাকবেন এটা আশা করা (পাকিস্তান প অবাস্তব তা যুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার চতুর্থ দিনেই ‘দি টাইমস পত্রিকার সম্পাদকী দেয়া হয়েছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে, পাকিস্তান তখন সকল যুক্তি জনমতকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়। | ‘দি টাইমসের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালােচনা করা হয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের রূপ লাভ করে তখন চীন বিপ্লবীদের সমর্থন দান করলে বাংলাদেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গও ভারতের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলেও উক্ত সম্পাদকীয়তে সন্দেহ পােষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও যে ভারতের সমূহ বিপদ রয়েছে তা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতীয় নেতাদের অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ থেকে প্রমাণিত। হয় যে, ভারতের নেতারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী রূপ লাভের বিপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ ছিলেন। ২৯ মার্চ রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদক পিটার প্রেস্টন প্রেরীত এক প্রতিবেদনে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে একজন নির্বোধ সৈনিক আক্ষায়িত করে পূর্ববঙ্গে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তাকে দায়ী করেন। প্রতিবেদনের একটি অংশে তিনি লিখেন— “For who else would allow a national election to find a leader, chat to that leader openly for three weeks of wheelerdealing, then within minutes and wihout any fundamental change of situation, accuse him of treason’ and order in the machine gunners? It is the act of a mindless sergeant major.”  ৩১ মার্চ লন্ডনে থেকে প্রকাশিত উদারপন্থি “দি গার্ডিয়ান” পত্রিকায় পূর্ববঙ্গ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, ঢাকায় জঘন্যতম। হত্যাকান্ড মানব জাতি ও মানবতা বিরােধী অপরাধ। এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানাের ব্যাপারে কারােই ইতস্ততঃ করা উচিৎ নয়। সম্পাদকীয় মন্তব্যের এক স্থানে উল্পে। 24 “….Henceforth, the country must be regarded as a particularly brutal and insensitive military dictatorship elected political leadership in prison, its majority obliterated by decree…. The fate of Dacca is an arrogan against humanity and human aspirations, no one shou mealy-mouth by.”

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন