You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.03 | বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা এপ্রিল ৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা (এপ্রিল ‘৭১)

টেনের মধ্যমপন্থী পত্রিকা দি গার্ডিয়ান’ ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ ইং তারিখে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর “A time to speak out” শিরােনামে এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে এশিয়ার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আখ্যায়িত করে বলা হয় যে, “The East Pakistan crisis is not what it was, even a few days ago. Then it was a disastrous, bloodied mess: now it begins to stain the political map of Asia” Stiftca tacts মন্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নেই বরং তা আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে। উক্ত সম্পাদকীয়তে আরাে বলা হয় যে, পাকিস্তানের ৭০,০০০ সৈন্যের পক্ষে শহরে আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী, ছাত্র ও যুবকদের হত্যা করা সম্ভব হলেও ৭৫ মিলিয়ন (সাড়ে সাত কোটি) জনগণকে পদানত করা সম্ভব হবে । যে জাতীয় ঐক্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে হত্যাযজ্ঞ চালানাে হচ্ছে সে জাতীয় ঐক্যের যে চিরতরে মৃত্যু ঘটেছে তা উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয় যে, “That a junta of western generals and wild western foot soliders, have ripped apart this mandate in the cause of a national unity which is now, certainly dead for ever. Atrocities can not yoke two lands together.” ৩ এপ্রিলে প্রকাশিত দি গার্ডিয়ানের উপরােক্ত সম্পাদকীয় মন্তব্যে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা । হয়েছিল তা প্রবাসী বাঙালীদের কাছে অত্যন্ত বাস্তব মনে হলেও পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তা উপলব্ধি করতে পারেনি। নির্যাতন, সন্ত্রাস ও হত্যা পাকিস্তানের দুই অংশকে একত্রিত করতে পারেনি। উক্ত সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানের নৃংশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা এবং ভালাদের ন্যায্য দাবির সমর্থনে বিশ্বজনমত বিশেষ করে পাকিস্তানের বিবেকসম্পন্ন। “কে এখনই সােচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানাে হয়। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের অপপ্রচার সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লন্ডন থেকে ‘ বিলাতের পত্রপত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রভাবিত। করেছে। সংঘটিত রক্তপাতের খবর ও আপ্রল মাসের প্রথম সপ্তাহে বিলাতের সকল পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। মক্তপাতের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। রবিবারের সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলাে।

সপ্তাহের সংগৃহিত সকল খবরের সমন্বয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর ব ও সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশ করে। ৪ এপ্রিল দি সানডে টেলিগ্রাফ’ প লােশাকের “Pakistan’s path to blood shed” এবং কলিন স্মীথর p. bainboo stick Army” শিরােনামে দুটো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যথাক্রমে কলিকাতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যশাের শহর থেকে পাঠানাে হয় । লােশাক মার্চ মাসের শেষের দিকে ইয়াহিয়া-শেখ মুজিব আলােচনা চলাকালে ঢাকা করছিলেন এবং ঘটনাপ্রবাহ কি ভাবে একটি যুদ্ধের দিকে মােড় নিচ্ছিল তা অব করছিলেন। প্রহসনমূলক আলােচনার নাটক, বাঙালীদের অসহযােগ আন্দোলন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও নিরস্ত্র বাঙালীদের জাতীয়তাবাদী চেতনার অভিব্যক্তি ইত্যাদি বিষয়সমূহ পর্যালােচনা করে পাকিস্তানে একটি বড় ধরনের রক্তপাতের সূচনা হয়েছে বলে ডেভিড লােশক মন্তব্য করেন। তার প্রবন্ধ উল্লেখ করেন যে, ২৫ মার্চ রাতের আক্রমণ বাঙালীদের কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হলেও তা প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিত আক্রমণ ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। পাকিস্তান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ১১ দিন যাবৎ শীর্ষ আলােচনা ও প্রতিদিনই অগ্রগতির খবর পরিবেশন করায় বাঙালীরা এধরনের আক্রমণের কথা চিন্তা করতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, In addition, the army had a carefullylaid contingency plan. Its intelligence network had thoroughly infiltrated the Awami League. The Army had lists of hundreds of key party workers to round up. It had a schedule of targets in Dacca. Thus it was only a matter of hours before the Army was able to eliminate physically the essence of the Awamy League.” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রথম দিকে পাকিস্তানের সুসজ্জিত সেনাবাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞের অভিযানে শহর ভিত্তিক সাফল্য অর্জন করলেও সারা দেশের বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ইতােমধ্যে স্থানে স্থানে প্রতিরােধ ও প্রতিশােধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী বেসামরিক নাগরিক ও সেনাবাহিনীর সহযােগী ব্যক্তিদের যর চ9থামসহ বিভিন্ন শহরে বাঙালি মুক্তিযােদ্ধারা হত্যা করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ডেভিড লােশাক বামপন্থি শক্তি অস্ত্র জোগাড় করে এই পরিস্থিতিতে একা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানাের উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে রক্তপাত আরাে বৃক্ষ করবে বলেও তার প্রতিবেদনে আশংকা প্রকাশ করেন। ‘দি সানডে টেলিগ্রাফে’ অপর এক প্রতিবেদনে কলিন স্মীথ অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ‘গলার মােকাবেলায় নিরস্ত্র বাঙালি মুক্তিযােদ্ধাদের অসম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের মূল্যায়ন করেন। তিনি ২৫ মার্চের পরবর্তী সময়ে মুক্তিযােদ্ধারা স্থানে পানারক আতরােধ গড়ে তুলছে তা গেরিলা যুদ্ধ শুরু হওয়ার অন্তবর্তকিালীন ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অবিশ্বাস্য হলেও বাঙালীরা যে প্রথমে বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রতিরােধ রচনা করেছিলেন তার উল্লেখ কর। civilian volunteers of anything more than এর উল্লেখ করতে গিয়ে প্রতিবেদনের এক অংশে বলা হয় যে, “Few of the volunteers of the Bengali National Liberation Army-have ing more than single-barrelled shotguns. Most have sharpened bamboo sticks.” কলিন স্মীথ সে সময়ে ( বের পরিস্থিতি ও বাঙালীদের প্রতিরােধ সংগ্রামের বিস্তারিত বিবরণ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি খণ্ড যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেন। বাঙালীদের সাহসের প্রশংসা করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, “Undoubtedly the Bengalis, the despised clerking box wallas, the same people the London skin-heads were beating up in the East End, have put up a much stiffer resistance than the worrior Punjabis and Beluchis expected.” কলিন শ্মীথের উপরােক্ত মন্তব্য থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, বিদেশী সাংবাদিকদের দৃষ্টিতে বাঙালীরা কেরানীকূল বাক্সওয়ালা-তাদের পক্ষে যুদ্ধ করা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। প্রতিবেদনে সে সময় কালে (১৯৭০-৭১) লন্ডনে মাথা কামনাে (skinhead) কিছু উচ্ছংখল যুবক পূর্ব লন্ডনে বাঙালীদের উপর যে আক্রমণ পরিচালনা করেছিল তার উল্লেখ রয়েছে।

এ সকল যুবকরা এক পাওয়েলের (এম, পি) বর্ণবাদী আদর্শের অনুসারী হিসাবে বিদেশীদের উপর আক্রমণ চালাতাে। লন্ডনে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালীরা সবচেয়ে নিরীহ প্রকৃতির মানুষ হিসাবে পরিচিত থাকায় তাদেরকে উক্ত বর্ণবাদী আক্রমণের টার্গেট করা হতাে। কলিন স্মীথ উদাহরণ হিসেবে এ ধরনের নিরীহ বাঙালীরাও যে বাধ্য হয়ে অস্ত্র ধরেছে এবং সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্কীন হেডদের কথা উল্লেখ করেছেন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত রবিবারের অপর একটি পত্রিকা ‘দি সানডে টাইমস’ ৪ এপ্রিল, The slaughter in East Pakistan” শিরােনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে সত্যায়িত করে বলা হয় যে, “By now the picture is a little more clear and a great deal more gruesome. whough first hand reports from Dacca itself and from some of the major towns have come in to confirm that what is appening is far worse than what might have been expected in a war of East Pakistanis resisting the forces of the central ment in their demand for independence.” সম্পাদকীয়তে বিবদমান। “কস্তান সেনাবাহিনী বনাম মুক্তিযােদ্ধা, বাঙালী ও অবাঙালী, সেনাবাহিনীর সহযােগী যােদ্ধাদের সহযােগী এবং সাম্প্রদায়িক প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রক্তপাত দিন দিন বনাম মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগী বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করা হয়। উভয় পক্ষের অনমনীয় মনােভাব ও , শান্তিপূর্ণ পথ পরিহারের ফলে সংকট আরাে জটিল হবে এবং আলােচনার আর কোন পথই খােলা থাকবে না বলেও সম্পাদকীয়তে আশংকা প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ মন্তব্য উল্লেখ করা হয় যে, . “At some point the dialogue between the Government and the leaders of East Pakistan must be resumed. The sooner the better, indging by the horrors of the past few days. 96 কিছুদিনের হত্যাযজ্ঞ দেখে দি সানডে টাইমস যে সংলাপের প্রত্যাশা করেছিলেন তা বাস্তবে রূপলাভ করেনি। বরং এক সাগর রক্ত পাড় হয়ে বাঙালীরা তাদের ইন্সিত লক্ষ্য স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিল।

৬ এপ্রিল ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় পূর্ব বঙ্গে’ হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউমের পার্লামেন্টে প্রদত্ত বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। শ্রমিক দলীয় এম. পি. ব্রুস ডগলাস-ম্যান, ফ্রাংকজ্যাড, নাইজেল ফিচার এবং লিবারেল পার্টির এম, পি, জন পারডাে ‘পূর্ববঙ্গে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে বৃটিশ সরকারকে হস্তক্ষেপের জন্য এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাব ১৬০ জনের বেশি এম, পি, সমর্থন করেন। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতেই স্যার আলেক ডগলাস-হিউম পার্লামেন্টকে জানান যে, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যা আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে পূর্ববঙ্গে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে। কোন মন্তব্য না করায় শ্রমিকদলীয় এম, পি, ডেনীস হীলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমালােচনা করে বৃটিশ সরকারকে পাকিস্তান সরকারের উপর শান্তি স্থাপনের জন্য চাপ প্রয়ােগের অনুরােধ করেন। স্যার আলেক ডগলাস-হিউমের বক্তব্যে ‘পূর্ববঙ্গের গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন না করায় সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেন Sir Alec Douglas-Home had the opportunity to declare Britain’s support for democracy in East Pakistan. He wasted it. The Presideut Yahya Khan did not want Shaikh Mujib to assume the powers that his people had voted him. So the President reached for his gun. What is happening in East Pakistan is unjustified military oppression. Until Sir Alec can bring himself to say so he should stop making statement.” এপ্রিল মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহব্যাপী বিলাতে পত্র-পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের খবর পরিবেশন অব্যাহত থাকে। লন্ডন যে প্রকাশিত দি গার্ডিয়ান, পত্রিকায় ৭ এপ্রিল তারিখে মার্টিন উলাকোট “Refugees flee murder in East Pakistan” শিরােনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রতিবেদনে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে কলিকাতার অবতরণকারী ১১৯ জন রােপিয়ান ও আমেরিকান শরণার্থীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও সাক্ষাৎকারের বিবরণ দেয়া হয়। কলিকাতা থেকে প্রেরিত উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, উল্লেখিত ১১৯ জন বিদেশী নাগরিকের মধ্যে ৩৩ জন বৃটিশ নাগরিক, তাদের অভিজ্ঞতার বিবরণ প্রদান করেন। বিপার্টের এক অংশে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বর্ণনা করে উল্লেখ করা হয় যে, Chittagong, e second city of East Pakistan, is shattered wrek after two weeks of fighting, killing and looting, with bodies still lying in the streets and a large arca burnt out, refugees from the port city said here today. 199 Europeans and Americans, including 33 British, gave horrifing accounts of killing and atrocities by both sides and by criminal elements. বিদেশী যে সকল ব্যক্তি আটক পড়েছিল তাদেরকে উদ্ধার করে ‘Clan McNair’ নামক কার্গো জাহাজ কলিকাতা পাের্টে নিয়ে যায়।

বিদেশীদের বিবরণীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রাথমিক দিকের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করা যায় যে, চট্টগ্রামে উভয় পক্ষেই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ চলে। শরণার্থীদের মতে চট্টগ্রাম শহর তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ দখলে ছিল। বিবরণীতে বলা হয় যে, “All agreed that Chittagong was now firmly under army control although, as one said, with much of its puplation gone and with no services, it is now a dead city.” লন্ডন থেকে ৭ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় পিটার হেজেলহার্ট অপর এক প্রতিবেদনে কলিকাতায় আগত শরণার্থীদের বরাত দিয়ে “British refugees from Chittagong flee of murder by both sides” নামে অনুরূপ বিবরণ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনের একটি অংশে উল্লেখ করা হয় যে, ‘The Pakistan Army has embarked on a programme of genocide and troops are moving through the city’s streets. gunning down every Bengali they see.” বিদেশী নাগরিকদের উপরােক্ত মন্তব্য থেকে স্পষ্ট অনুমান করা যায় যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালীদের উপর কি পরিমাণ বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছিল। বিলাতের বাঙালীরা এ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে সকল অভিযােগ থাপন করেছিল তা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর প্রকাশের মাধ্যমে আস্তে আস্তে প্রমাণিত হয় এবং বাঙালীদের ইস্যুর সমর্থনে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি হয়। ১১ এপ্রিল তারিখে “দি সানডে টাইমস” নিকোলাস টমালিন বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত মদিনাজপুর থেকে প্রেরিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে যে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছিল “তারিত বিবরণ উক্ত রিপাের্টে প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশেষ করে জপুরের অবস্থা আলােচনা করতে গিয়ে মিঃ টমালিন উল্লেখ করেন যে, “By the Time these  words are in print the town of Dinajpur in Free Bangladesh  will almost certainly be overwhelmed by West Pakistani troops and Sgt-Major Abdur Rab, its Chief Defender will probably  be dead” উক্ত প্রতিবেদনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মে প্রদত্ত সামরিক নির্দেশ উল্লেখ করে বলা হয় যে, বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার পূর্ব সিদ্ধান্ত সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ উক্ত নিদেশ থেকে পাওয়া যায়। রেডিওতে। প্রচারিত নির্দেশে বলা হয় যে, “Official orders from President Yahya Khan’s high command that opposition be crushed by slaughtering indiscriminately destroying indiscriminately and above all, by killing all military, civil and intellectual leaders, উপরােক্ত রেডিও নির্দেশ থেকে আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা যে, পাকিস্তান বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য নির্বিচারে হত্যা, ধ্বংস ও নির্যাতন পরিচালনা করেছিল। মিঃ টমালিন প্রতিবেদনের এক অংশে তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ । করেন যে “We have seen the massacres with our own eyes and that radio message appears to prove the deliberate intention.” | মিঃ টমালিন উক্ত প্রতিবেদনে পাকিস্তান কর্তৃক প্রচারিত মিথ্যা রটনা বিরুদ্ধে কিছু তথ্য পরিবেশন করেন।

ইতােপূর্বে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা অপপ্রচার চালায় যে, দিনাজপুর শহরে ভারতীয় সৈন্য ও ভারতীয় অস্ত্র দিয়ে বাঙালীদের সমর্থন দেয়া হচ্ছে। এই অপপ্রচারের প্রতিবাদ করে মিঃ টমালিন উল্লেখ করেন যে, তিনি যখন দিনাজপুরসহ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তখন তিনি বাঙালী মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে পুলিশ ও বিডিআর এর ব্যবহৃত হালকা রাইফেল দেখতে পান। ছয় ডিভিশন ভারতীয় সৈন্যের সীমান্তে অবস্থানের পাকিস্তানী অপপ্রচারকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি উল্লেখ করেন যে, “As for Pakistani reports that six Indian divistions are threatening the border, these are nonsense.” মিঃ টমালিন বাঙালীদের শৌর্য ও বীরত্ব সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করে সার্জেন্ট মেজর আব্দুর রবের বীরত্বের বিবরণ প্রদান করেন। স্বাধীনতার জন্য একাগ্রতা, জাতীয়তাবােধের প্রেরণা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিশােধ গ্রহণের শপথে বলীয়ান বাঙালি যুবকদের স্তব্ধ করা সম্ভব হবে না বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। সার্জেন্ট মেজর রবের মতাে বীর মুক্তিযােদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে না বলেও প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা ও তার ফলে সৃষ্ণ পারাহাততে সীমান্ত শরণার্থীদের ভিড় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন এপ্রিল মাসের তৃতা চতুথ সপ্তাহে বিলাতের পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১২ এপ্রিল তারিখে ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় “Border area under Pakistani pressure”  শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের পিছু হটার বিবরণ প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনের সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক বাংলাদেশের নেতা শেখ সজিবর রহমানের একটি ছবি ছাপানাে হয়। ২৫ মার্চের কালাে রাত্রিতে ৩২ নং ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়ার পথে করাচী বিমান বন্দরে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রকাশ করা হয়। এর ফলে প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা পরিলক্ষিত হয়। ইতােপূর্বে শেখ মুজিবের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রবাসীদের মধ্যে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল তা এই ছবি প্রকাশের পর পরিষ্কার হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে শেখ মুজিবের আত্মগােপনের খবরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং প্রবাসীদের মধ্যে যে আশার সঞ্চার করেছিল তা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়। 

‘দি টাইমস’ পত্রিকায় ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল তারিখে এসােসিয়েটেড প্রেসের সংবাদদাতা ডেনিস নিলড (Dennis Neeld) এর বরাত দিয়ে যথাক্রমে “Thousands still fleeing frightened Dacca” 47: “Dacca city of fear” FICTTRICT 1 প্রতিবেদনে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের ঢাকার অবস্থা এবং দেশত্যাগের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়। ডেনিস নিড পাকিস্তান সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে ভারত সীমান্ত দিয়ে ঢাকায় গিয়ে সব কিছু দেখে ঢাকা থেকে গােপনে উপরােক্ত প্রতিবেদনসমূহ প্রেরণ করেন। ১৩ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিঃ নিলড কূটনৈতিক এক সূত্র উল্লেখপূর্বক শুধুমাত্র ঢাকা শহরে দুই সপ্তাহে ৬০০০ জনের মৃত্যুর হিসাব প্রদান করেন। প্রতিবেদনে আরাে বলা হয় যে, ঢাকা শহরকে খুব ভীত সন্ত্রম্ভ একটি আত্মসমর্পণকারী শহর। বলে মনে হয়। ঢাকা শহরের তখনকার পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয় ”The crack of rifle shots still punctuates the night as troops round up Awami League officials, intellectuals and other prominant Bengalis. This is gestapo rule, one western diplomate commented. The army has committed mass murder.” 417313 বাড়িঘর ছেড়ে যে যে অবস্থায় পারছে ঢাকা ত্যাগ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১৭ এপ্রিল ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় “East Bengal rebel Hg, falls after jet rad” শিরােনামে প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে একটি প্রতিবেদন ও একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সীমান্ত শহর কুষ্টিয়া দখলের বিবরণ এবং শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়। কুষ্টিয়া দখলকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেট বিমান কিভাবে নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় বােমাবর্ষণ করে তার “ম আতবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের পিছু হটার সাথে সাথে যায় শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয়তে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নে ভারতীয় সরকারী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতােমধ্যে ১০০,০০০ শরণার্থীর ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রমের একটি হিসাব প্রদান করে বলা হয় যে, “Offier . “Officials in Calcuttad India so far. Makeorder and the resugees are Government. এ reported that 100.000 refugees mps have been set up on the border and the refug being provided with food paid for by Government.  সম্পাদকীয়তে এ    হারে শরণার্থী ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম কর তক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে তার স্থায়ী সমাধানে শান্তির প্রতি হুমকি হবে বলে আশাংকা করা হয়। মেহেরপুরের (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত) কাছাকাছি কোন এক স্থান cor.. এপ্রিলে মার্টিন ওলাকোট (Martin Woollacott) প্রেরিত একটি প্রতিবেদনে “Bangladesh troops flee into India” শিরােনামে ১৯ এপ্রিল ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এই প্রতিবেদনে সীমান্ত শহর চূড়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর কিভাবে | পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হস্তগত হয়েছিল তার বিবরণ প্রকাশ করা হয়। এ অঞ্চলে প্রতিরােধকারী মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানীদের অভিযান ছিল সর্বাত্মক। সীমান্ত থেকে | ৩০০ গজ দূরে অবস্থিত মেহেরপুরের একটি গ্রামে বাংলাদেশের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘােষণার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎপরতা এত অঞ্চলে বহুগুণ | বৃদ্ধি পায়। ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতা ঘােষণা হওয়ার পরের দিন বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারা মেহেরপুর থেকে পিছু হটে সীমান্তে আশ্রয় গ্রহণ করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন লেখার দিনে (১৮ এপ্রিল) প্রায় বিনা বাধায় পাকিস্তান বাহিনী মেহেরপুর দখল করে নেয়। পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের জঙ্গী বিমানের সহযােগিতায় মুক্তিযােদ্ধাদের সৃষ্ঠ প্রাথমিক প্রতিরােধ ভেঙে পড়ে এবং বাঙালি বেসামরিক জনগণের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও আক্রোশ আরাে বৃদ্ধি পায়। নিরীহ জনগণ পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জীবনের ভয়ে হাজার হাজারে সীমান্তের অপর পারে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ইতােমধ্যে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী ১০০,০০০ শরণার্থীর সাথে প্রতি মুহূর্তে হাজারাে শরণার্থী যােগ হয়ে সমস্যা আরাে তীব্রতর আকারে ধারণ করে। এই পর্যায়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ থেকে দৃষ্টি পরিবর্তিত হয়ে বিশ্বজনমতের দৃষ্টি শরণার্থী শিবিরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একটি নতুন প্রেক্ষপট সৃষ্টি হয়। | ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকা ১৪ এপ্রিল “Rhetoric and Reality” শিরােনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। তিন সপ্তাহ ব্যাপী রক্তপাতের মাধ্যমে পাকিস্তান পারই অবস্থায় উপনীত হয়েছে তার মূল্যায়ন করা হয় এই সম্পাদকীয়তে। আপাতত প সেনা বাহিনী বিজয়ী মনে হলেও বাংলাদেশের সুদূর প্রসারী সংগ্রাম এবং হত অবিশ্বাস ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিকে কাটিয়ে উঠা যে পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব  Reality” শিরােনামে একটি র মাধ্যমে পাকিস্তান পরিস্থিতি কোন কায়তে। আপাতত পাকিস্তানের র সংগ্রাম এবং হত্যাকাণ্ডের ফলে গানের পক্ষে সম্ভব হবে না তাও।

সম্পাদকীয়তে সন্দেহ করা হয়। ইয়াহিয়া খানের রণনীতি ভুল হিসাবের ফসল উল্লেখ করে বলা হয় যে, বাঙালীদের মাথা কেটে (হত্যা করে) জাতীয়তাবাদী চেতনার ধ্বংস করা যে অসম্ভব তা ইয়াহিয়া খান ধারণা করেনি। সম্পাদকীয় এর এক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে বায়ফ্রা এর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে তুলনা করা সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করা হয় যে, ‘The Bangladesh affair is not a second Biafra or the fruits of more interminable wrangling hetween Delhi and Rawalpindi. It rose simply when a well conducted, peaceful elections produced a result the army could not stand.

১৬ এপ্রিল লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রগতিশীল সাপ্তাহিক ‘নিউ ষ্ট্যাটসম্যান’ পত্রিকায় একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় “The blood of Bangladesh” প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়ের শুরুতে মন্তব্য করা হয় যে, If blood is the price of a people’s right to Independence. Bangladesh has over paid, দীর্ঘ সম্পাদকীয়তে। বাংলাদেশের জনগণের আত্মাহুতি ও নির্যাতনের বিবরণ উল্লেখ করে এই যুদ্ধকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়। এই সংগ্রামে তৃতীয় বিশ্বকে বাংলাদেশের পক্ষে আরাে সােচ্চার হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে তাগিদ দেয়া হয়। সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জিওপলিটিকেল কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে। বায়াফ্রার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে তুলনা না করার জন্য উল্লেখ করা হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির সময়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা সমালােচনা করে উল্লেখ করা হয় যে, Pakistan was a state created from above for reasons of Political expediency. So the lesson in simple, if a hard one that such structures cannot survive. How much human misery must be endured before that fact is accepted. উপরােক্ত সম্পাদকীয় ছাড়াও ১৬ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে সিলেটের অভ্যন্তর থেকে ডেভিড লােশাক (David Loshak) কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ “Slaughter goes on as East Pakistan fights for | life” শিরােনামে দি সানডে টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়। এই সংবাদে মুক্তিযুদ্ধে উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি, মুক্তিফৌজের মরণপণ সংগ্রাম এবং সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের কথা। বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। দি সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একই দিনে সায়মন ড্রিংগ প্রেরিত অপর এক সংবাদ ‘Sheikh’s supporters failed to prepare for amed resistance” শিরােনামে প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রথম যে বৃটিশ সাংবাদিক কলিন শীথ কলকাতা থেকে ঢাকায় গিয়ে সরজমিনে প্রত্যক্ষ করে প্রত্যাবর্তন করে কলকাতা থেকে সংবাদ প্রেরণ করেন তা ‘দি অবজারভার পত্রিকায় ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। এই সংবাদে পাকিস্তানী সেন্যদের বর্বরতা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরােধ সংগ্রামের বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে স্থান। লাভ করে।

ডেভিড লােশাক এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন যে, “I am s now on President Yahya will hold his Eastern province force and that his rule will be harassed by continual re however, ill organised and futile it may be. The Bengalis never froget or forgive the happenings of the past few w উপরােক্ত মন্তব্য থেকে স্পষ্টভাবেই মুক্তিযােদ্ধাদের দৃঢ়তা ও ইয়াহিয়া খানের ব সম্পর্কে অনুমান করা যায়। ১৮ এপ্রিল ‘দি সানডে টাইমস’ পত্রিকায় প্রম “Pakistan: A time to speak out” শিরােনামে সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশে সং মর্মান্তিক ও জঘন্য ঘটনাবলীর উল্লেখ করে বৃটিশ সরকারকে এখনই সােচ্চার হওয়ার সময় হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সম্পাদকীয়তে এক অংশে উল্লেখ করা হয় যে , time has come, it is indeed overdue, for the British Government publicily to express its disgust, in for stronger terms than it has yet done, at the course of events in East Pakistan” | ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ২০ এপ্রিল প্রকাশিত এক সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহকর্মীদের বিচারের জন্য ইসলামাবাদে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের খবর পরিবেশন করা হয়। সংবাদে শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায়িত করে তাকে ভারতের সাথে পাকিস্তান বিরােধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযােগ অভিযুক্ত করা হয়। ২৪ এপ্রিল “দি টাইমস” পত্রিকায় পশ্চিমবংগের নক্সাল পন্থীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে “সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র” বলে আখ্যায়িত করে মুক্তি সংগ্রামের বিরােধিতা করছে বলে এক খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের উগ্র মাওপন্থী নেতা মােহাম্মদ তােয়াহাও পাকিস্তানের শাসক ইয়াহিয়া খানের বিরােধিতা পরিহার করেছেন বলেও উক্ত খবরে উল্লেখ করা হয়। উক্ত খবরে বিলাতে অবস্থানরত তােয়াহা পন্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, বিলাত প্রবাসী চীনপন্থী কমিউনিষ্ট নেতারা ইতােমধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞের বিবরণ সাপ্তাহিক ‘নিউজ উইক’ পত্রিকায় ২৬ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত হয়। উক্ত বিবরণের সাথে করাচী বিমান বন্দরে বন্দী অবস্থায় গৃহীত শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপানাে হয়। 

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন