You dont have javascript enabled! Please enable it!

অক্টোবর মাসের তৎপরতা

অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাস থেকে আর একটি উল্লেখযােগ্য পক্ষত্যাগ (defection)-এর ঘটনা ঘটে। লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের কাউন্সিলর বাঙালি কূটনীতিবিদ রেজাউল করিম ৭ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তান সরকারের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তি বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের সকর শান্তিপ্রিয় গণতানিত সরকার ও জনগণকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থনের আবেদন জানান। রেজাউল করিম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ঘােষণা করেন এবং লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনে যােগদান করেন। একই দিনে (৭ অক্টোবর, ১৯৭১ ইং) পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর একমাত্র পুত্র রাশেদ সােহরাওয়ার্দী লন্ডনে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইতােপূর্বে পাকিস্তান সরকারের অপপ্রচারের অংশ হিসেবে, শহীদ সােহরাওয়ার্দীর এক নিকট বংশধরকে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক বিবৃতি প্রদান করা হয়েছিল। রাশেদ সােহরাওয়ার্দী তার বক্তব্যে তাদের পরিবারের অন্য এক সদস্যের বক্তব্যকে তার পিতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করে বলেন যে তার পিতার আদর্শের পথ ধরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে, “I have no doubt in my mind that the brave freedom fighters will succeed in achieving full Independence by ejecting the invading army.” রাশেদ সােহরাওয়ার্দীর বিবৃতিটি বাংলাদেশ মিশনের প্রেস এবং পাবলিসিটি ডিভিশন থেকেও প্রচার করা হয়। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে বৃটিশ লেবার পাটির বাৎসরিক সম্মেলন ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে এবং বাইরে লেবার পাটি ইতােপূর্বে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালাে সমর্থন করে আসছে। এই দলের এমিপ পিটার শাের, জন ষ্টোনহাউজ, ব্রুস ডগলাস ম্যান, ইয়ান মিকার্ডোসহ বহু পার্লামেন্ট সদস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে আসছিলেন। লেবার পার্টির সকল সদস্যকে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্দোলনের পশ থেকে লেবার পাটি সম্মেলনে প্রচারকার্য পরিচালনার জন্য স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়” আজিজুল হক ভুইয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ব্রাইটনে গমন করে ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল সম্মেলনের উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে লাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন পুস্তিকা ও প্রচারপত্র বিলি করেন এবং মালনের বাইরে একটি সভার আয়ােজন করেন। সম্মেলনে পাকিস্তান’ ইস্যু আলােচনার জন্য স্থান লাভ করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের পক্ষে ইতিবাচক প্রস্তাবাবলী গহীত হয়। ইতােপূর্বে বৃটিশ লেবার পাটির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি (NEC)-এ গৃহীত ৮ জুন, ১৯৭১ ইং তারিখের প্রস্তাব অনুমােদন ও আলােচনার জন্য সম্মেলনে পেশ করা হয় । সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তা ‘পাকিস্তান সংকটের পটভূমি, বাংলাদেশে গণহত্যা এবং বাংলাদেশের জনগণের দুর্দশার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন। বক্তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘পাকিস্তান সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন এবং এই সংকট সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেন। সম্মেলনে সর্বসম্মত এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবের এক অংশে বলা হয় যে, “Conference expresses its horror and concern at the terrible human tragedy now taking place in Bengal. It belives that the Pakistan Government must take full responsibility for the terrible suffering endured by the people of East Bengal and conference condemns the Government of Pakistan for its total unjustified use of Military force against the people and democratically elected leaders of East Bengal.” | ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত লেবার পার্টি সম্মেলনের প্রস্তাবে শরণার্থী সমস্যা, পাকিস্তানের সাহায্য প্রদান বন্ধ রাখাসহ রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়সমূহ স্থান পায়। পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয় যে, “Without a satisfactory political solution, long term aid to Pakistan would mean sudsidising a discredited military regime. Conference, therefore, urges all countries and in particular the members of the Pakistan Aid Consortium to wtihhold all but urgent humanitarian aid until a satisfactory political solution has been agreed to by the people of East | Bengal” এছাড়া পাকিস্তান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পূর্বশর্ত হিসেবে পূর্ববঙ্গ থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবর রহমানসহ বাঙালি নেতাদের মুক্তিদানকে উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয় যে, বিশ্বশান্তি রক্ষার খাতিরে পাকিস্তান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হওয়া বাঞ্ছনীয়। ১০ অক্টোবর লন্ডনের এক হােটেলের হলরুমে যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে। এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আবদুল মান্নান এবং প্রধান অতিথি ২সাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আবদুস সামাদ এম. এন. অ.।

তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যােগ দিয়ে প্রত্যাবর্তনের পথে লন্ডনে যাত্রা বিরতি করেন। সমাবেশে যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতি গউস খান মানপত্র পাঠ করে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৃটিশ এম, পি, পিটার শশার, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পা তৈয়বুর রহমান ও সিরাজুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। প্রধান অতিথির ভাষণে আবদুস সামাদ জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের সাথে মতবিনিময় করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাস্তবতাকে তলে ধরার বিষয়ে সমাবেশকে অবহিত করেন। ১২ অক্টোবর বৃটেনের লিবারেল পার্টির যন সংগঠন “ইয়ং লিবারেল্স” বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে একপত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি। জানানাের জন্য দাবি করেন। অক্টোবর মাসে সরকার দলীয় বৃটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কনজারভেটিভ পার্টিরও মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকের রক্ষণশীল মনােবৃত্তি পরিবর্তন করে পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ইস্যুর প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল মনােবৃত্তি গ্রহণ করে। তাই লেবার পার্টি সম্মেলনের অনুরূপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রচার কার্য পরিচালনার জন্য ষ্টিয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে জাকারিয়া চৌধুরী ও সুরাইয়া খানম, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) ও আবদুল হাই এবং বার্মিংহাম সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে জগলুল পাশা, জহুর আলী ও ইসমাইল আজাদ সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল কনজারভেটিভ সম্মেলনে। প্রেরণ করা হয়। প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যােগদানকারী ডেলিগেট ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিভিন্ন পুস্তিকা ও প্রচারপত্র বিলি করেন। অক্টোবর মাসের গােড়ার দিকে ইউনাইটেড এ্যাকশনবাংলাদেশ’ (United Action Bangladesh) নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্যে সাহায্য সংগ্রহের জন্য একটি রিলিফ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করে। ১২ অক্টোবর ইউনাইটেড এ্যাকশন-বাংলাদেশ’ এর বিজ্ঞপ্তিতে একটি আবেদন প্রচার করা হয়। আবেদনপত্রে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলাের করুণ কাহিনী ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণ তুলে ধরে তাদের রক্ষার জন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানে রিলিফ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করে সাহায্য সংগ্রহের জন্য আহবান জানান হয়। এই ফান্ড পরিচালনার জন্য স্টেপনির বিশপ রেভারেন্ড ট্রেভার হাডলস্টন, লেডী গিফোর্ড, বৃটিশ এমপি রিচার্ড ক্রসম্যান এবং এসআই আজিজকে নিয়ে একটি ট্রাষ্ট বাের্ড গঠন করা হয় এবং ন্যাশনাল ওয়েষ্ট মিনিষ্টার ব্যাকের ৪৩ নং কিংগসওয়ে শাখায় (AC. No-01533118) একাট একাউন্ট খােলা হয়। ইতােপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী অন্যতম দল বিলাতের আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের ফলে বিলাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দলের প্রাধান্য ছিল সামান্য। এ অবস্থা নিরসনের জন্য সফরত বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও ভ্ৰমামাণ দূত এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল সামাদ (এম, এন, এ) এ মাসে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

মুজিবনগর সরকারের যে সক নেতা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারকার্য পরিচালনার জন্য এ পর্যন্ত বিলাত ভ্রমণ করেছেন তা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের এ দুর্বলতাকে লক্ষ্য করেছেন এবং তার অবসানের বলেছেন। বিলাতের আওয়ামী লীগের মধ্যে যে তিনটি বিবদমান গ্রুপের অস্তিত্ব ছিল তার। তিটির নেতৃত্বে ছিলেন সিলেট থেকে আগত নেতা গউস খান, মিনজাহ উদ্দিন ও বি, এইচ তালুকদার। আবদুস সামাদ সিলেটের অধিবাসী হওয়ায় বিলাতের আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব তার উপর প্রদান করা হয়। প্রথমিক পদক্ষেপ হিসাবে তিনি সকল গ্রুপকে একত্রিত করে লন্ডনের একটি অস্থায়ী কমিটি গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এতদউদ্দেশ্যে ১৩ অক্টোবর সকল গ্রুপের নেতা ও কর্মী সমন্বয়ে এক কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুস সামাদ (এম, এন, এ)। তিনি লন্ডন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার উপর গুরুত্ব আরােপ করে বক্তব্য রাখেন। উক্ত কর্মী সমাবেশে সকলের পরামর্শ মােতাবেক নিম্নরূপভাবে একটি অস্থায়ী লন্ডন কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান, সহ-সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল মিয়া, মােহাম্মদ ইসহাক, সাধারণ সম্পাদক মােহাম্মদ আবুল বশর, সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ। শরিফ, জনসংযােগ সম্পাদক জিলুল হক, সামাজিক সম্পাদক মিম্বর আলী, শ্রম সম্পাদক শাহ সিরাজুল হক, বহিরাগত সম্পর্কিত সম্পাদক আবদুর রকীব, মহিলা সম্পাদক হেলেন তালুকদার, দফতর সম্পাদক এম এ হাকিম, কোষাধ্যক্ষ-মজির উদ্দিন, কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গউস খান, বিএইচ তালুকদার, শামসুর রহমান, তৈয়বুর রহমান, মােহাম্মদ একরাম হােসেন এবং মঈন উদ্দিনের নাম উল্লেখযােগ্য। বিলাতের বিবদমান তিনটি গ্রুপের লন্ডনে অবস্থানরত প্রভাবশালী নেতাদের সকলকেই উক্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পূর্ববর্তী কমিটিসমূহ (যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, ওভারসীজ আওয়ামী লীগ ও লন্ডন আওয়ামী লীগ) সম্পূর্ণবাবে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। অতএব আবদুস সামাদের একত্রিকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য স্থাপিত হয়নি।  বিলাতের বিভিন্ন শহরের বাঙালীদেরকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক প্রযােজিত স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী আলেখ্য “অস্ত্র হাতে তুলে নাও” নৃত্যনাট্য ও দেশাত্মবােধক সঙ্গীত পরিবেশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

১৬ অক্টোবরে এমনি একটি অনুষ্ঠান ল্যাংকাশায়ার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাংলাদেশ এসােসিয়েশন ম্যাঞ্চেস্টারের ফ্রি ট্রেড হলে আয়ােজন করে। বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদের শিল্পীবৃন্দ উক্ত “নুষ্ঠান পরিবেশনা করেন এবং নৃত্য নাট্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রবাসীদের মনে মূর্ত করে তােলেন। ১৭ অক্টোবর গ্রেটবৃটেনস্থ মহিলা সমিতির উদ্যোগে ২১ নং পেমব্রীজ গার্ডেন্সে “লশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফেরাত এবং দখলদার বাহিনীর  বাংলাদেশের মুক্তির জন্য এক মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ মাহফিলে সভানেত্রী জেবুন্নেছা বখত, সাধারণ সম্পাদিকা আনােয়ারা জাহান, মুন্নী শাহজাহান, জেবুন্নেছা খায়ের সহ মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ ও কর্মী বােনেরা উপস্থিত ছিলেন । দিনে (১৭ অক্টোবর) ওয়েল্স এর পেনাৰ্থ শহরে—“গ্লোবাল এন্ড সােসাল ইস্যজ” এ উদ্যোগে বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতির উপর এক আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্রুপের নেতা মি, গ্রিফিথুস। ২৪ অক্টোবর লন্ডনে ১৭টি সংগ্রাম পরিষদ, প্রতিনিধি সভায় বৃহত্তর লন্ডন এলাকার কার্যক্রমকে সমন্বয় করার লক্ষে “ইউনাইটে। বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুস সামাদ .. সভায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে আহম্মদ হােসেন জোয়ারদারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন। করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভের ছয় সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় এই সংগঠনের তেমন কোন কর্মকান্ড পরিচালনার সুযােগ হয় নি। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বিলাতে সফরে যান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত শরণার্থী পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলােচনা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর প্রবাসীদের কাছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিসেস ইন্দিরা গান্ধী লন্ডন অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রবাসীদের দেশের জন্য উৎকণ্ঠা ও স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়তা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিলাতের বিভিন্ন সগ্রাম কমিটিসমূহ কার্যক্রম গ্রহণ করে।

২৯ অক্টোবরে স্টিয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সাহায্য ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং একটি পত্র হস্তান্তর করেন। উক্ত পত্রে। বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও্যার প্রত্যয় ঘােষণা করে বলা হয় যে, “We do fervently hope that as Prime Minister of the Country closest to our land, you will be pleased to take a forthright step and your Government will immediately recognise the government of the People’s Republic of Bangladesh.” লন্ডনে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সফর উপলক্ষে তার লন্ডন অবস্থানকালে ৩০ অক্টোবরে ষ্টিয়ারিং কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে হাইড-পার্ক স্পীকার্স কর্ণারে এক বিরাট সমাবেশ ও গণমিছিলের আয়ােজন করা হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক আজিজুল হক ভূঞা এবং প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও ষ্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ থেকে গউস খান (লন্ডন), কবির চৌধুরী। (ইয়র্কশায়ার), আবদুল মতিন (ম্যানচেষ্টার), জগলুল পাশা (বার্মিংহাম) এবং বি এ তালকুদার, রাষ্ট্রদূত এ মােমেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মিসেস জেবুন্নেছা বল বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে রেজাউল করিমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তাগণ বাংলা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের সমর্থন এবং উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতির ও ভারতের প্রধানমনন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যথাশ্রীঘ্র একতি দানের জন্য আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে এক বিরাট গণমিছিল হাইড-পার্ক স্পীকার্স কর্ণার থেকে শুরু করে ফ্রক টিস্থ ক্লারিজেস হােটেলের সম্মুখ দিয়ে হ্যানােভার স্কোয়ারে গিয়ে সমাপ্ত হয়। প্রসঙ্গত উলেখযােগ্য যে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে সফরকালে ক্লারিজেস হােটেলে অবস্থান করছিলেন। একই দিনে (৩০ অক্টোবর) ক্লাপহামের হেনরি থরনটন স্কুলে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বৃটেনে বসবাসকারী বাঙালি ছাত্রদের এক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় এই ছাত্র সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সম্মেলনের বিস্তারিত বিবরণ অধ্যায় একত্রিশ তে আলােচনা করা হয়েছে। প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদসমূহ ছাড়াও আরাে দু’টি আন্তর্জাতিক সংগঠন অক্টোবর মাসে লন্ডনে বাংলাদেশের পক্ষে কর্মকান্ড শুরু করে। তার মধ্যে সর্বদলীয় পালামেন্টারী সদস্যদের সমন্বয়ে “Justice for East Bengal” নামে একটি সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে “Bangladesh Freedom Movement Overseas” নামে অপর একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। শেষােক্ত কমিটির নেতৃত্ব প্রদান করেন মেথােডিটি চার্চের রেভারেণ্ড ডেভিড মেসন।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!