You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্চের শেষ সপ্তাহের তৎপরতা

দেশের জনগণের জন্য ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ যেমনি বিভীষিকাময় ও দুঃস্বপ্নের ছিল তেমনি বিলাত প্রবাসীদের মধ্যে ছিল উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া। দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মধ্যে যে আলােচনা চলছিল তা প্রবাসীরা খুব আগ্রহ সহকারে লক্ষ্য করছিল। প্রতিদিন অফিস বা কারখানার কাজ শেষ করে লন্ডনের বাঙালিরা ছুটে আসতেন পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে। ইতােপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তৎকালে প্রতিদিন বিকেলে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়ােজন করা হতাে। প্রবাসী বাঙালিরা দু’টো উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দূতাবাসের সামনে হাজির হতেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা এবং অপরটি হচ্ছে দেশে আলােচনার অগ্রগতি কতটুকু হচ্ছে তার সর্বশেষ খবর নেয়া। সকল প্রবাসী বাঙালি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল যে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক অনিবার্য সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে। একদিকে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী আর অন্য দিকে নিরস্ত্র বাঙালি। তাই সকল প্রবাসীদের চোখে মুখে উৎকণ্ঠা, অনিবার্য ভবিষ্যত ও দেশের আপনজনের নিরাপত্তার চিন্তা সকলকে আপুত করে রেখেছিল। ২০ মার্চ, ১৯৭১ ইং সন্ধ্যায় পাকিস্তান ছাত্রাবাসে প্রবাসী বাঙালিদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রথম অংশে সভাপতিত্ব করেন সামসুল আবেদীন এবং দ্বিতীয় অংশে সভাপতিত্ব করেন শেখ আবদুল মান্নান। পূর্ববঙ্গে সম্ভাব্য দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলনে যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের যথাযথ ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে এই সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসােসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ব্যক্তব্য রাখেন। পূর্ববঙ্গে সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সংগ্রামের ধারা সম্পর্কে বক্তাগণ মতামত ব্যক্ত করেন। বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দই তড়িগরি করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের বিষয়ে দ্বিমত পােষণ করেন এবং পরিশেষে এই সভায় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের প্রস্তাব আর কখনো বাস্তবায়িত হয় নি।

 ইতােপূর্বে ২১ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে বেঙ্গল স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি এক সভায় মিলিত হয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঘটনা প্রবাহ এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল যে বিলাতের প্রবাসীরা উপলব্ধি করছিলেন একটি অবিসম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামকে সমন্বয় সাধনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রয়ােজন। কিন্তু সেদিনের সভায় এই সংগ্রাম পরিষদের নামকরণের বিষয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় সর্বদলীয় কোন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। সভায় প্রগতিশীল ছাত্রনেতা জিয়াউদ্দিন মাহমুদ (বর্তমানে ব্যারিষ্টার) নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নাম “এ্যাকশন কমিটি ফর ইনডিপেন্ডেন্ট ইষ্ট বেঙ্গল” রাখার পক্ষে মত পােষণ করেন। সভায় সভাপতি বেঙ্গল স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটির মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু এ ব্যাপারে একটি সমঝােতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এই ঘটনার ক্রমধারার পরবর্তিকালে মুক্তিযুদ্ধ কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গােষ্ঠী মিলে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা সম্ভব হয় নি।  ২৫ মার্চের পূর্বে স্বাধীনতার জন্য একমাত্র ছাত্র সংগ্রাম পরিষদই সকল কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাই সিদ্ধান্ত ছিল যে, ছাত্র সংগ্রামের আহূত সভায় সকল দল ও গােষ্ঠীর প্রতিনিধি যােগদান করবেন এবং মতামত পেশ করতে পারবেন। ২১ মার্চের সভায় সর্বদলীয় কমিটি গঠন সম্ভব না হলেও নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করা হয়। এগুলাের মধ্যে ছিল ? (১) প্রবাসী প্রতিটি বাঙালির দেশে টাকা প্রেরণ বন্ধ রাখতে হবে। (২) পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। (৩) পাকিস্তানের দূতাবাসের সাথে সকল প্রকার সহযােগিতা এবং তাদের সকল নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করতে হবে। (৪) পাকিস্তান সরকারের স্কলারশীপসহ সকল প্রকার সুযােগ সুবিধা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এই সকল নির্দেশনামা লন্ডনে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘জনমতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাপ্তাহিক জনমত’ পত্রিকা পরবর্তি সপ্তাহ থেকে পাকিস্তান সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন (পি. আই. এ. সহ) প্রত্যাখ্যান করে নজির সৃষ্টি করেছিল। ২৬শে মার্চ সকাল থেকেই বি. বি. সি (বাংলা বিভাগ) ও অন্যান্য সূত্র থেকে অসমর্থিত খবর আসতে থাকে যে, ২৫ মার্চ গভীর রাত্রে ঢাকাসহ পূর্ববঙ্গে’ এক জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। এই দিনের সকালের পত্রিকা স্পষ্ট কোন তথ্য দিতে না পারলেও বৈকালিক পত্রিকা সমূহ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ প্রকাশ করে। এই সামরিক অভিযানে কত লােককে হত্যা করা হয়েছে, নেতারা কে কি অবস্থায় আছে, প্রবাসীদের আপনজনদের কার কি অবস্থা এই সকল প্রশ্ন ভেবে প্রবাসী বাঙালিরা এক বিরাট উৎকণ্ঠা ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে দিনটি অতিবাহিত করে।

রাজনৈতিক সচেতন ও স্বাধীনতাকামী প্রবাসীদের সবচাইতে বড় উৎকণ্ঠা ছিল স্বাধীনতা ঘােষণার বিষয়। আমরা তখনাে স্বাধীনতা ঘােষণার কোন স্পষ্ট খবর জানতে পারিনি। ২৬ মার্চের গভীর রাতে বি, বি, সি, বাংলা বিভাগের সূত্র থেকে জানতে পারা গেল যে, চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়াউর রহমান নামে এক সেনা অফিসার স্বাধীনতা ঘােষণা করেছে এবং ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই, পি, আর, পুলিশ ও আনসারসহ সকল জনগণকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে আহ্বান জানিয়েছে। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত উপরােক্ত স্বাধীনতার ঘােষণা ভারতের পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত শহর আগরতলা থেকে মনিটর করা হয় বলে সূত্র জানায়। সূত্র থেকে আরাে জানা যায় যে, চট্টগ্রাম রেডিও থেকে পূর্ববঙ্গের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সাথে আছেন। অপর দিকে ২৫ রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল বলেও বিভিন্ন অসমর্থিত খবর থেকে জানা গিয়েছিল। বিলাতের পত্রপত্রিকায় ২৭ মার্চে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের কথা ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কোন প্রকার পূর্ব ঘােষিত প্রােগ্রাম ছাড়াই হাজার হাজার লন্ডন প্রবাসী পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে হাজির হয়। বিক্ষুব্ধ বাঙালি জনতা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নিন্দা, ইয়াহিয়ার পতন কামনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে শ্লোগান তােলেন। নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করায় প্রবাসীদের মধ্যে যে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি। হয়েছিল তা চরম বিক্ষোভের রূপ লাভ করে। লন্ডন পুলিশ এই তীব্র বিক্ষোভকে আয়ত্তে আনার জন্য লন্ডন আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক ও পূর্ব লন্ডনের নেতা সিরাজুল হককে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। এই স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশ কোন সংগঠনের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হয় নি। তবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনে এতকাল সক্রিয় থাকায় ছাত্র সংগ্রামের নেতারা এই স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে নেতৃত্ব দেন। এই সমাবেশে (২৭ মার্চ, ১৯৭১) আওয়ামী লীগের সকল গ্রুপের নেতা কর্মীসহ সকল দল ও মতের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিক্রিয়া প্রকাশকালে সকল নেতারা ঐকমত্য প্রকাশ করেন যে, এর পর থেকে বাঙালিদের কোন বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে অনুষ্ঠান করার কোন অর্থই হয় না। এই মর্মে ২৮ মার্চ তারিখে (রােববার) পাকিস্তানীদের বর্বরতার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের সমর্থনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে পূর্ব লন্ডনের কথা ঘােষণা করা হয়।

এই ঘােষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনের সমাবেশের সমাপ্তি করে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান দূতাবাস তথা পাকিস্তান সরকারের সাথে লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। এই ঘটনার পর দীর্ঘ নয় মাস প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে বহু আন্দোলন, বহু সমাবেশ ও শােভাযাত্রা অনুষ্ঠিত করেছে কিন্তু ২৭ মার্চের পর পাকিস্তান দূতাবাসে বা সেই পথে বাঙালিদের শােভাযাত্রা আর কখনাে যায়নি। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ পূর্ব লন্ডনের উইন্ড মিল স্ট্রীটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে একাত্ম ঘােষণার লক্ষ্যে বাঙালিদের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের প্রকৃতি ছিল সর্বদলীয় । দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতা ঘােষণার প্রেক্ষাপটে অবাসাদের কর্তব্য সম্পর্কে জানার জন্য কোন প্রকার প্রচার ছাড়াই হাজার হাজার বাঙালি জনতা পূর্ব লন্ডনে সমবেত হয়। সভায় ছাত্র যুবক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সমবেত সকলকে মুক্তিযুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি ও সার্বিক সর্মথনের জন্য আহবান জানান। ২৭ মার্চ তারিখের পরবর্তিকালে লন্ডন আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর লন্ডন আগমন একটি উল্লেখযােগ্য ঘটনা। তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলন পরিত্যাগ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেন। এই পর্যায়ের ব্যক্তিত্বের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিনেই প্রতিবাদ ও পক্ষ পরিবর্তন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ২৭ মার্চের গার্ডিয়ানে বেঙ্গল স্টুডেন্ট এ্যাকশন কমিটি “Recognise Bangladesh” শিরােনামে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দানের আহ্বান জানান। ২৮ মার্চ তারিখে বেঙ্গল স্টুডেন্ট এ্যাকশন কমিটি স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে প্রচারকার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে “ফ্যাক্টসীট” নামে একটি প্রচারপত্র প্রথম প্রকাশ করেন। এই ফ্যাক্টসীট’ পরবর্তিকালে মুক্তিযুদ্ধের খবরা খবর দেশী বিদেশী পত্র পত্রিকা ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে প্রচার কার্যে বিশেষ অবদান রেখেছে। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে লন্ডনের পর বার্মিংহামের স্থান। স্বাধীনতা ঘােষণা ও ২৫ মার্চের কালাে রাত্রির প্রতিক্রিয়া লন্ডনের মতাে বার্মিংহামেও সৃষ্টি করেছে। এতদউপলক্ষে বার্মিংহামের স্মলহীথ পার্কে এক সমাবেশের আয়ােজন করা হয়। উক্ত সমাবেশে জগলুল পাশা, তােজাম্মেল হক, আজিজুল হক ভূইয়া প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন। স্মলহীথ পার্কের সমাবেশের এক পর্যায়ে পাকিস্তানীদের হাতে একজন বাঙালি ছুরিকাহত হন এবং এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১ জন পাকিস্তানী গ্রেফতার হয়।

২৮ মার্চ, ১৯৭১ সালে লন্ডন ও বার্মিংহামসহ বিলাতের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী বাঙালিরা সভা, সমাবেশ ও শােভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। এ সপ্তাহের প্রধান কর্মসূচী ছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দানের দাবিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সম্মুখে বাঙালি ছাত্রদের অনশন ধর্মঘট। ১০নং ডাইনিং স্ট্রিটের সামনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী মানিক (ব্যারিষ্টার) এবং আফরােজ আফগান চৌধুরী (বর্তমান হবিগঞ্জে আইনজীবী এবং বিএনপির নেতা) ২৯ মার্চ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। এই সময়ে বৃটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছিল। ১০নং ডাউনিং স্ট্রীট পার্লামেন্ট ভবনের কাছে অবস্থিত থাকায় পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে অনশন ধর্মঘটের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিল। পাকিস্তান ধ্বংস হউক” “ইয়াহিয়া খানের পতন হউক” “বাংলাদেশ-দীর্ঘজীবী হউক”, “এগিয়ে যাও মুক্তি সেনা” ইত্যাদি ইংরেজীতে লিখিত শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও পােষ্টারসহ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শত শত কর্মী অনশনকারীদের সাথে অবস্থান গ্রহণ করে। ২৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই অনশন ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে আন্দোলন দ্রুত সৃষ্টি হয়েছে তার সমন্বয় করার জন্য তখনাে কোন অফিস বা কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটের অনশন ধর্মঘট স্থানটি ২৮ থেকে ৩১ মার্চ এই চার দিন আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। সারাদিন শত শত বাঙালি ভিড় জমাতাে অনশন ধর্মঘট স্থানে। সন্ধ্যায় অফিস ও কলকারখানা ছুটির পর এ ভিড় বাড়তাে। শত শত বাঙালি জনতা ছুটে আসত অনশনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে। ২৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্রনেতারা ধর্ণা (লবিং) দেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। এই প্রাথমিক প্রচেষ্টায় প্রথমে গুটি কয়েক বৃটিশ এমপি অনশন ধর্মঘটকারী ছাত্রদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে ধর্মঘট স্থানে আসেন। তাদের মধ্যে পিটার শাের ও ডগলাস ম্যান এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এই সপ্তাহে বৃটিশ পত্র পত্রিকায় বাংলাদেশের সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের খবরাখবরের সাথে লন্ডনের বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া ও অনশন ধর্মঘট সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়।  ইতােমধ্যে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জেনেভা থেকে লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন। তিনি কয়েকজন ছাত্রনেতাকে সঙ্গে নিয়ে অনশন ধর্মঘট স্থানে এসে বাঙালিদের সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

অনশন ধর্মঘট চলার সময়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ প্রত্যহ অনশনকারীদের সামনে দিয়ে যাতায়াত করলেও কূটনৈতিক কারণে নিজে অনশনকারীদের দেখতে আসেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্মকর্তারা অনশনকারীদের খোঁজ খবর রাখতেন এবং সমবেদনা প্রকাশ করতেন। ৩১ মার্চ তারিখে অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের যখন চরম অবনতি হয় তখন বৃটিশ পার্লামেন্টে বিরােধী দলীয় প্রভাবশালী এমপি এবং উইলসন কেবিনেটের প্রাক্তন অর্থনৈতিক মন্ত্রী পিটার শাের এর অনুরােধ ও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অনশন ভঙ্গ করা হয়। পিটার শাের বাঙালিদের সংগ্রামের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালের নয় মাস লন্ডনে তিনি বাঙালিদের সাথে একাত্ম হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।  ২৮ মার্চ লন্ডনের ট্রাফেলগার স্কোয়ারে যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বিরাট জনসভা আয়ােজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের  সভাপতি গউস খান। বাৰ্ছিংহাম, মাঞ্চেষ্টার, লুটন সহ বিভিন্ন শহর থেকে বাঙালিরা সভায় যােগদান করে। বিভিন্ন বক্তা পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। সভাশেষে | ট্রাফেলগার স্কোয়ারে সভামঞ্চে সভার সভাপতি গউস খান বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এদিকে একই দিনে উত্তর লন্ডনস্থ হাইবারী হীলে অবস্থিত “পূর্ব-পাকিস্তান হাউজ” এ ছাত্র, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক সভায় মিলিত হন। ছাত্রদের গৃহিত কর্মসূচী পালনে কোন কোন রাজনৈতিক দলের অনিহা থাকলেও ছাত্রদের কর্মসূচীর প্রতি সহানুভূতি [প্রকাশের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করা হয়। একই দিনে সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের আর্টিলারী প্যাসেজে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের কর্মপন্থা তৈরীর জন্য পৃথক সভার আয়ােজন করে। পূর্ব পাকিস্তান হাউজে’ অনুষ্ঠিত সভায় শেখ আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে ৫ জনের প্রতিনিধি দল পূর্ব লন্ডনের আর্টিলারী প্যাসেজের সভায় প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । সভা শেষে ‘পূর্ব পাকিস্তান হাউজে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৯ মার্চ লন্ডনের পােলান্ড স্ট্রীটে অবস্থিত ‘মহাঋষি’ রেষ্টুরেন্টে বিভিন্ন শহরে এবং এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সংগ্রাম পরিষদ সমূহের সমন্বয় সাধনের লক্ষে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে এক সভার আয়ােজন করা হয়। সভায় বিভিন্ন শহর এবং এলাকার নেতৃবৃন্দ যােগদান করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি গউস খানের সভাপতিত্বে এই সভায় সর্বসম্মতভাবে “কাউন্সিল ফর দি পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ ইন হউ, কে.” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।

এই সংগঠনের সভাপতি নিয়ােজিত হন গউস খান এবং শেখ আবদুল মান্নান ও আবদুল হামিদকে যথাক্রমে সেক্রেটারী ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। সংগঠনের কার্যকরী কমিটিতে ১১ জন নির্বাচিত সদস্য এবং ব্রাডফোর্ড, শেফিল্ড, গ্লাসগাে, বাহিংহাম, ম্যাঞ্চেস্টার প্রভৃতি শহরের সংগ্রাম কমিটি থেকে ১০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচিত ১১ জন সদস্যের মধ্যে ব্যারিষ্টার শাখাওয়াত হােসেন, আমীর আলী ও সামসুল মাের্শেদ এর নাম উল্লেখযােগ্য। কাউন্সিলের কার্যালয়ের জন্য উইন্ডমিল স্ট্রীটে অবস্থিত ‘লাক্ষ্মেী’ রেষ্টুরেন্টের মালিক শওকত আলী রেষ্টুরেন্টের ২টি কক্ষ বিনাভাড়ায় প্রদান করেন। যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। ২৪ এপ্রিল কভেন্ট্রি সম্মেলনের মাধ্যমে “স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হওয়ার পর কাউন্সিল ফর দি পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ’ এর উদ্যোক্তারাই এই সংগঠন বিলুপ্ত করে দেন। ৩১ মার্চ ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক পত্রে পাকিস্তানের নাগরিক তারেক আলী, হামজা আলাভী, মােহাম্মদ আখতার ও নাছিম বাজওয়া পশ্চিম পাকিস্তান সােসালিষ্টদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের যৌক্তিক মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন জানান এবং এই পরিস্থিতির জন্য ভূট্টোকে দায়ী করেন। একই দিনে ‘দি গার্ডিয়ান’এ অপর এক পত্রে পাকিস্তানের নাগরিক। এয়ার কমােডর (অবঃ) মােহাম্মদ খান জানজুয়া, কর্ণেল (অবঃ) ইনায়েত হাসান ও ফরিদ জাফরি পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ট দলের দাবি মেনে নেয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্ধকে আহ্বান জানান। পরবর্তি কালে জানা যায়, বাংলাদেশকে সমর্থন জানানাের জন্য উপরােক্ত ব্যক্তিবর্গকে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও মওদুদী দেশদ্রোহী বলে আক্ষায়িত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে লন্ডন আন্দোলনের এক উল্লেখযােগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর লন্ডনে আন্দোলনে যােগদান। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলনে যােগদানের জন্য জেনেভায় অবস্থান করছিলেন। ২৫ মার্চের কালাে রাত্রে বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে মানবাধিকার যেভাবে লংঘন করা হয়েছে তার বর্ণনা। দিয়ে সম্মেলনে বক্তব্য রেখে বিচারপতি চৌধুরী সম্মেলন পরিত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জেনেভা থেকেই তিনি উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং লন্ডনে চলে আসেন। তিনি লন্ডনে এসে বালহাম এলাকায় উঠেন।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর লন্ডনে আগমন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ইতিবাচক মনােবৃত্তির খবর লন্ডনে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাক্তার সমিতির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাজ কর্মীরা তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে আন্দোলন জোরদার করার প্রয়ােজনীয়তার কথা বলেন। বিচারপতি চৌধুরী এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করে আন্দোলনে শরিক হওয়ার প্রত্যয় ঘােষণা করেন। বিলাতে অবস্থানরত বাঙালিদের মধ্যে তখন একতার অভাব ছিল। যে কয়টি রাজনৈতিক দল বিদ্যমান ছিল তাও প্রকৃতপক্ষে জনপ্রিয় নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। ইতােপূর্বে ২১ মার্চ তারিখে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রচেষ্টায় সফল হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগও নেতৃত্বের প্রশ্নে তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। এমতাবস্থায়, প্রবাসী বাঙালিদের সচেতন অংশ লন্ডন আন্দোলনের এই পর্যায়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সক্রিয় অংশ গ্রহণের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লন্ডনে এসেই তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং অতীত পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার সাথে যােগাযােগ স্থাপন করেন এবং বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে তা অবহিত করেন। তিনি ২৭ মার্চে প্রথমেই বৃটিশ পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান ইয়ান সাদারল্যান্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব নিকোলাস ব্যারিংটনের সাথে যােগাযােগ করেন। বৃটিশ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম মার্চের শেষ সপ্তাহে লন্ডনের বাইরে স্কটল্যান্ডে ছুটি যাপন করছিলেন। ছুটি যাপন শেষে লন্ডনে এসে স্যার আলেক ডগলাস হিউম এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ বিচারপতি চৌধুরীকে সাক্ষাত দান করেন এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে বিচারপতি চৌধুরীকে বলেন। একই দিনে বিবিসি বাংলা বিভাগের তরফ থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয় এবং এর মাধ্যমে বিচারপতি চৌধুরীর লন্ডন আন্দোলনে অংশ গ্রহণের খবর দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া মার্চের শেষ সপ্তাহে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লড জেমস, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের সচিব উইলিয়াম পিটার্স, ইন্টারন্যাল কমিশন অব জুরিসটস এর মহাসচিব ম্যাক গরমেট এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির (রক্ষণশীল দল) কমনওয়েলথ বিষয়ক সচিব প্রফেসর জেনকিন সহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার সাথে যােগাযােগ করে বাংলাদেশে মুক্তি সংগ্রামের কথা বলেন। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বিচারপতি চৌধুরী তার নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে কাজ শুরু করে নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাই পরবর্তিকালে মুক্তিযুদ্ধ কালে লন্ডন আন্দোলনের সমন্বয় সাধন ও নেতৃত্বে কোন সংকটের সৃষ্টি হয়নি। বিচারপতি চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে অধ্যায়-উনত্রিশ’ এ আলাদাভাবে আলােচনা করা হয়েছে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!