You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ে প্রবাসীদের প্রস্তুতি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে দেশে যে প্রতিরােধ ও অসহযােগ আন্দোলন চলছিল তার প্রতিক্রিয়া সুদূর বিলাতে সৃষ্টি হয়েছিল। বিলাতে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে পাকিস্তানের সংসদ অধিবেশন আহ্বানের টালবাহানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও মিটিং এর আয়ােজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন থেকে পাকিস্তান দূতাবাসে মেমােরেন্ডাম প্রদান ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিলাত প্রবাসীদের মনােভাব ব্যক্ত করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তান পার্লামেন্টে (National Assembly) বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান সংসদ আহ্বান না করে সংসদ বাতিলের যে ষড়যন্ত্র করছিল তা প্রবাসী সচেতন বাঙালিরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা এবং ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা বিশ্বজনমতের কাছে তুলে ধরার জন্য বিলাতে বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে বিলাতে যে কয়টি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত ছিল তার মধ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও প্রবাসী ছাত্ররা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। আন্দোলনের এই পর্যায়ে একটি বিশেষ দিক লক্ষণীয় ছিল যে, পাকিস্তানের কিছু বুদ্ধিজীবী, ও রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে সংসদ অধিবেশন আহ্বান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে বিলাতে বাঙালিদের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ। করেছিলেন। বিলাতের বিভিন্ন অরাজনৈতিক মানবতাবাদী সংগঠন সমূহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে সেমিনার সিম্পােজিয়ামের আয়ােজন করে সমস্যার সঠিক সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেছিল। কমনওয়েলথ সােসাইটি, বিভিন্ন চার্চ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সংসদ সমূহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা একটি ন্যায় সংগত সমাধান চেয়েছিলেন। এমনি একটি সেমিনার আয়ােজন করেছিল লন্ডনের ইম্পােরিয়েল কলেজ ছাত্র সংসদের ডিবেটিং সােসাইটি। উক্ত সেমিনারে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন ও পাকিস্তানের অবস্থান। ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখার জন্যও বক্তা নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে আলােচক হিসেবে এসেছিলেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক কলিম সিদ্দিকী। তিনি লন্ডন থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দি গার্ডিয়ানে কর্মরত একজন। সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিকতার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে না হলে একজন পাকিস্তানী হয়ে ইংরেজী দৈনিকে কলাম লেখার সুযােগ লাভ করতেন না। সাংবাদিক কলিম সিদ্দিকী উন্ন সেমিনারে শশী বিদেশী সঞ্চণ শ্রাতাকে বিস্মিত করে দিয়ে পূর্ব পাকিও-র দাবির এ জোর সমর্থন দিলেন।

তিনি তার বক্তব্যে বললেন যে, ‘আজ পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাশালীদের প্রয়ােজন সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানের ভাইদের কাছে হাত জোড় করে মিনতি করা যাতে তারা পশ্চিম পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে না দেন।’ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু হয়ে সারাজীবন সম্পদের সিংহভাগ ভােগ করা সম্ভব হবে তা যদি পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী মনে করে থাকেন তাহলে তারা বােকার স্বর্গে বসবাস করছেন বলেও কলিম সিদ্দিকী উক্ত সেমিনারে মন্তব্য করেছিলেন। উক্ত সেমিনারে ঐ কলেজের তৎকালীন ছাত্র হিসেবে একজন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার আমার সুযােগ হয়েছিল। পাকিস্তান। দূতাবাসের কর্তা ব্যক্তিদের সামনে এ ধরনের বক্তব্য রাখার জন্য নাকি কলিম সিদ্দিকীকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছিল। তাকে ছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তানী বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র ১৯৭০ এর শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, তাদের মধ্যে কলিম সিদ্দিকী ১৯৭০ সালের ২৪ নভেম্বর গার্ডিয়ানে স্বনামে। ‘পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার জ্বর (ফিভার)’ এই শিরােনামে কলাম লিখেছিলেন। উপরােক্ত একটি ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগােষ্ঠী, সামরিক জান্তা ও ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পরের পদক্ষেপ সমূহকে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকেই সঠিক মনে করেননি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে যে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে সে ব্যাপারে অনেক প্রবাসী পাকিস্তানী বক্তৃতা, বিবৃতি ও লিখনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক জান্তাকে সাবধান করেও দিয়েছিলেন। পাকিস্তানে তা প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও বিলাত প্রবাসী বহু পাকিস্তানী তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং প্রকাশ করেছিলেন। কলিম সিদ্দিকী এক পর্যায়ে ১৯৭০ সালের ২৫ নভেম্বরের গার্ডিয়ানে ইয়াহিয়ার চলে যাওয়া উচিৎ’ শিরােনামে কলাম লিখেও পাকিস্তানকে রক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।  ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে যখন জাতীয় পরিষদ আহ্বানের প্রশ্নে দেশে চরম উত্তেজনা এবং পূর্ব পাকিস্তানে দূর্বার প্রতিরােধ আন্দোলন চলছিল তখন লন্ডনের বাঙালি

ছাত্রদের চাপে জাতীয় পরিষদ আহ্বানের প্রশ্নে পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তানের অখণ্ডতায়। বিশ্বাসী আপােসকামী বাঙালি ছাত্রনেতা একরামুল হক। সভা চলাকালে অন্য একজন বাঙালি ছাত্রনেতা এককালীন পূর্ব পাকিস্তানের ‘এন, এস, এফ’ নামক ছাত্র সংগঠনের নেতা এবং ফজলুল হক হলের এককালীন সহ-সভাপতি আনােয়ার আনসারী খান পাকিস্তানের প্রেসিডে ইয়াহিয়া খানের কাছে লেখা একটি মেমােরেণ্ডাম পাঠ করে তা ফেডারেশন থেকে অনুমােদন প্রার্থনা করলেন। এই পর্যায়ে স্বাধিকার আন্দোলনের স্বপক্ষের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উপস্থিত প্রায় সকল সদস্য এই মেমােরেন্ডাম প্রেরণকে কামার বাড়ীতে কোরান পাঠে সামিল’ হিসেবে মন্তব্য করে সভা ত্যাগ করেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনের পাকিস্তান হাউজের হজমেন্ট নিং কক্ষে। সভ৷ কক্ষ ত্যাগ করার ব্যাপারে যায়। অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তারাই পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে পাকিস্তান হাউজে বসেই বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন। ফেব্রুয়ারীর এই বিভক্তি করণকে কেন্দ্র করে একাধিকবার পাকিস্তান হাউজে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপের একজন নেতা মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জুকে আক্রমণও করেছিল। দেশে ছাত্ররা যখন অস্ত্র নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন সুদূর লন্ডনেও বাঙালি ছাত্রদের সাথে পাকিস্তানী ছাত্রদের দ্বন্দ্ব ও সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করছিল ।  ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিলাত প্রবাসীদের মধ্যে শহীদ দিবস পালনের আয়ােজন ও আকার ছিল রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণের ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানীদের কোন উৎসাহ স্বাভাবিকভাবেই থাকার কথা নয়। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনসাধারণ লন্ডনের পাকিস্তান ভবন, পূর্ব পাকিস্তান ভবন ও পূর্ব লন্ডনের কমিউনিটি হল সহ বিলাতের বিভিন্ন শহরে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মহান শহীদ দিবস পালন করেন। এই আয়ােজনের মধ্যদিয়ে বিলাত প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মানসিক প্রস্তুতির একটি পূর্ণ সুযােগ লাভ করে। এই উপলক্ষে আয়ােজিত বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে বিলাতে অবস্থানরত বাঙালি বুদ্ধিজীবী, ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক কর্মী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা প্রকাশ্যে প্রচার করেন এবং সাধারণ বাঙালি জনসাধারণকে স্বাধীনতার প্রয়ােজনীয়তার কথা বিশ্লেষণ করেন।

বাঙালিদের মধ্যে একটি ছােট অংশ এ সকল বক্তব্য ও প্রচারণাকে পাকিস্তানের সংহতি বিরােধী বলে মনে করতেন এবং জাতীয়তাবাদী গ্রুপ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতেন। পরবর্তীকালে এই গ্রুপ ব্যারিস্টার আব্বাস আলীর নেতৃত্বে বিলাতে মুক্তিযুদ্ধের বিরােধী কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।  ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিক তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেবেন বলে যে আশঙ্কা বা রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী প্রচারিত ছিল তা লন্ডনের পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছিল। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ তারিখে লন্ডন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হাইডপার্ক। স্পীকার্স কর্ণারে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরােধিতা করার জন্য এক জনসভা আয়ােজন করা হয়েছিল। যদিও উক্ত প্রতিবাদ সভা লন্ডন আওয়ামী লীগ আহ্বান করেছিল কিন্তু ইস্যুটি এতই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যে লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন দল ও গােষ্ঠী সভায় যােগদান করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। লন্ডনে অধ্যয়নরত বাঙালি ছাত্রদের তখনাে কোন স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠেনি। তবুও লন্ডন আওয়ামী লীগ আহুত সভায় ছাত্ররা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। লন্ডন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন লন্ডন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ শরিফ, দপ্তর সম্পাদক ইসহাক ও ছাত্রনেতা মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু সহ যুব ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

বক্তার জনসভায় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানবে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিলে তার ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে প্রবাসী বাঙালিদেরকে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা না হলে প্রয়ােজনে স্বাধীনতা ঘােষণা করা হবে বলেও কোন কোন বক্তা ইংগিত প্রদান করেন। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, ২৮ ফেব্রুয়ারির জনসভায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যােগদান করেনি। ইতােপূর্বে নেতৃত্বের প্রশ্নে বিলাতের আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত ছিল । গাউস খান।  (মরহুম) ও তৈয়বুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নামে একটি গ্রুপ কাজ করছিল। তাদের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ করে মিনহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আর একটি গ্রুপ। লন্ডন আওয়ামী লীগের নামে একটি পৃথক সংগঠন পরিচালনা করছিলেন। লন্ডন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ ও মাহমুদ। সুলতান শরিফ। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী আরও একটি ছােট গ্রুপ তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘ওভারসীজ আওয়ামী লীগের ব্যানারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বি এইচ তালুকদার ও আহম্মদ হােসেন জোয়ারদার যথাক্রমে ওভারসীজ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিলাতের আওয়ামী লীগ তিন গ্রুপে বিভক্ত থাকায় পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকালে বিলাতের কর্মকাণ্ডকে প্রথমদিকে সমন্বয় করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লন্ডনের মুভমেন্টে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব লাভ করতে সমর্থ হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে লন্ডন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বাংলাদেশের সাথে অধিকতর যােগাযােগ এবং নেতৃত্বের যােগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে একক নেতৃত্ব গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কভেন্ট্রিতে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের কোন গ্রুপের নেতাই স্থান পাননি।

পকিস্তানের জাতীয় পতাকা ভস্মীভূত

পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপার যখন চূড়ান্ত তখন তার প্রতিবাদে ও প্রতিরােধের উদ্দেশ্যে লন্ডনে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিরা ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ (১৯৭১) পর্যন্ত একটানা আন্দোলন কর্মসূচী ঘােষণা করে। কর্মসূচীর মধ্যে ১ মার্চ থেকে লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে লাগাতার তৎপরতা (Vigilance), অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন অব্যাহত রাখা হয়। ইয়াহিয়া খান হঠাৎ করে জাতীয় পরিষদ বসার তারিখ স্থগিত করে দেবার খবর লন্ডনে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার ছাত্র, যুবক, চাকুরীজীবী সই রাজনৈতিক কর্মী ৫ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে ৫ মার্চ তারিখে বিলাতে বসবাসকারী বাঙালিদের সাথে পাকিস্তান। দূতাবাসের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় । সমবেত জনতা সেদিন সঙ্গত কারণেই অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত ছিল । ৫ মার্চ তারিখে প্রথমবারের মতাে বিক্ষুব্ধ বাঙালিরা দূতাবাসে স্থাপিত পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামিয়ে তা ভস্মিভূত করে। আন্দোলনের এই পর্যায়ে বিলাত প্রবাসী ছাত্ররা এবং লন্ডন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি অংশ এই পর্যায়ে কোন অগ্রীম পদক্ষেপ, স্বাধীনতার কথা বলা, দূতাবাসে বিক্ষোভ বা পতাকা ভস্মিভূত করার মতাে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে দ্বিমত পােষণ করেছিলেন। তাই এই পর্যায়ে বিলাতের আন্দোলন সৃষ্টিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের তেমন উৎসাহ ছিল না।

৭ই মার্চে হাইডপার্কে জনসভা। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য

৭ মার্চের জনসভার সাথে সামঞ্জস্য রেখে  ৭ মার্চ, ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ লন্ডনের ঐতিহাসিক হাইডপার্ক স্পীকার্স কর্ণারে এক জনসভার আয়ােজন করে। লন্ডন আওয়ামী লীগ, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন সহ হাজার হাজার বাঙালি উক্ত জনসভায় যােগদান করেন। বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টার সহ বিভিন্ন শহর থেকেও বাঙালিরা হাইডপার্ক কর্ণারে সমবেত হয়ে বাঙালিদের দাবির প্রতি একাত্মতা ঘােষণা করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি গাউস খানের (মরহুম) সভাপতিত্বে উক্ত জনসভায় বেশির ভাগ বক্তা বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ঘােষণা করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের। নেতারা অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখেন এবং সভার প্রস্তাবাবলীতে স্বাধীনতার ঘােষণার বিষয় অস্পষ্ট রাখেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য ছিল যে, সেদিন ঢাকায়। শেখ মুজির স্বাধীনতা ঘােষণা না করে একটি আপােষ ফর্মুলা দেবেন। অতএব, লন্ডনে। স্বাধীনতা ঘােষণা করলে তা আত্মঘাতি হবে। এমনি একটি দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে হাইডপার্ক-এর। জনসভা শেষ হয়। ১৯৭১ সনের ৭ মার্চ হাইড-পার্ক স্পীকার্স কর্ণারে যে উল্লেখযােগ্য ঘটনা ঘটে তা হলাে। বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বিধা থাকা। সত্ত্বেও লন্ডন আওয়ামী লীগ ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে হাইডপার্কের সমাবেশে। বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক পতাকা উত্তোলন করা হয়। লন্ডনের বিপ্লবী কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পতাকা কি হতে পারে তার একটা অস্পষ্ট ধারণা বিরাজমান ছিল। সবুজ, লাল ও সােনালী রংয়ের সমন্বয়ে বাংলাদেশের পতাকা শােভা পাবে এমন একটা ধারণার উপর ভিত্তি করে সেদিনের পতাকাটি ডিজাইন করা হয়েছিল যার পটভূমিতে ছিল। সবুজ রং এবং মাঝে লাল সূর্য ও তার অভ্যন্তরে ছয় পাতা বিশিষ্ট একটি সােনালী পাট গাছ। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা চির সবুজ বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে পতাকার পটভূমিতে সবুজ রং এবং একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে লাল সূর্য লন্ডনে উত্তোলিত বাংলাদেশের পতাকায় স্থান পেয়েছিল। লাল সূর্যের মধ্যভাগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের সােনালী আঁশ-পাট এবং ৬ দফা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে পাটের ছয়টি সােনালী পাতা উক্ত পতাকায় সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরবর্তীকালে ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণার প্রেক্ষাপটে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক মুজিবনগরে উত্তোলিত পতাকার গঠন বিলাতে প্রকাশিত হওয়ার পর উক্ত পতাকার গঠন পরিবর্তন করা হয়।

স্বাধীনতা ঘােষণা পূর্ব পর্যন্ত বিলাতের বাঙালিদের মধ্যে যে গ্রুপট সবচাইতে সােচ্চার। ছিলেন তারা হলেন প্রগতিশীল ছাত্র কমী, লন্ডন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ইয়থ। ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের কর্মী ও নেতৃবৃন্দ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর। উপরােক্ত সংগঠনের কর্মী ও নেতারাই বিভিন্ন এ্যাকশন কমিটি সমূহের নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। স্বাধীনতার ও স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষে বাঙালিদের মুখপত্র হিসেবে জাতীয়তাবাদী সাপ্তাহিক পত্রিকা “জনমত ও পূর্ব পাকিস্তানের লিবারেশন ফ্রন্টের মুখপত্র ‘বিদ্রোহী বাংলা এর মাধ্যমে আন্দোলনের খবরাখবর প্রবাসীদের মধ্যে প্রচার লাভ করত। ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চের লাগাতার আন্দোলনের এক পর্যায়ে বাঙালি ছাত্রদের চাপে ‘পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশন’ পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে একটি জনসভা আহ্বান করতে বাধ্য হয়। ইতােপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সংহতিতে বিশ্বাসী একটি আপােসকামী বাঙালি গ্রুপের নেতা একরামুল হক তখন উক্ত ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। একরামুল হক, আনােয়ার আনসারী খান, মনােয়ার হােসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানী ছাত্রদের সাথে বিদ্রোহী ও বিক্ষোভকারী বাঙালি ছাত্র নেতৃবৃন্দের আপােস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঙালিদের তুমুল বিক্ষোভের মুখে কোন প্রকার আপােস ফর্মুলায় উপনীত হওয়া বা যৌথ কোন মেমােরেন্ডাম প্রদান করা সম্ভব হয়নি। বরং বাঙালি বিপ্লবী ছাত্র নেতারা যখন বাংলায় বক্তব্য শুরু করেন তখন সভা হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে যায়। এক পর্যায়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের আক্রমণে ইয়থ ফেডারেশনের নেতা শামসুল আলম আহত হন। উক্ত ঘটনার পর পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ আরাে তীব্র আকার ধারণ করে। লন্ডন ও আশেপাশের বসবাসকারী বাঙালি ছাত্র, শ্রমিক ও কর্মচারীরা বিক্ষোভে এসে যােগদান করতে শুরু করে। তখন বিলাতে পাকিস্তানের হাই কমিশনার ছিলেন সালমান আলী। তিনি এক পর্যায়ে কড়া পুলিশ প্রহবায় সমবেত বিক্ষোভকারীদের কাছে পাকিস্তানের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তুমুল বিক্ষোভ ও ঘৃণার মুখে সালমান আলীর সেই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।

সালমান আলীর সামনেই বাঙালি ছাত্ররা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকায় অগ্নি সংযােগ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে শ্লোগান দেয়। বৃটিশ পুলিশের তা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খেতে হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লন্ডনের হাইওপার্কে জনসমাবেশ, স্বাধীনতা ঘােষণা ও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ছাড়াও পাকিস্তান স্টুডেন্ট হাউজে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শপথে “বেঙ্গল স্টুডেন্ট এ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘােষণার পর বিলাতে বহু সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল কিন্তু ‘বেঙ্গল স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি’ স্বাধীনতা ঘােষণার পূর্বেই গঠিত প্রথম একটি সংগ্রাম কমিটি। পরবর্তীকালে অবশ্য এই সংগ্রাম কমিটির নামে কিছুটা রদবদল করে বাংলাদেশ স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি ইন ইউকে রাখা হয়েছিল। ৭ মার্চে পাকিস্তান স্টুডেন্টস হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রনেতা মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু । উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে “বেঙ্গল স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি গঠন ও তার ১১ জন সদস্য মনােনয়ন দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক এই ১১ জন সদস্যের মধ্যে ছিলেন মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু (বর্তমান লন্ডনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী), খন্দকার মােশাররফ হােসেন (এই গ্রন্থের লেখক), এ কে নজরুল ইসলাম (লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী), এ টি এম ওয়ালী আশরাফ (বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য), সুলতান মাহমুদ শরীফ (বাংলাদেশে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ), শফিউদ্দিন মাহমুদ বুলবুল (ব্যারিষ্টার), সামসউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী মানিক (ব্যারিষ্টার), জিয়াউদ্দিন মাহমুদ (ব্যারিষ্টার ও বৃটেনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়ােজিত), লুৎফর রহমান সাহজাহান (ব্যারিষ্টার ও বাংলাদেশে আইনজীবী), আখতার ইমাম (ব্যারিষ্টার ও বাংলাদেশে আইনজীবী) ও কামরুল ইসলাম (বর্তমান অবস্থান জানা নেই)।  ‘বেঙ্গল স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি’ দেশে স্বাধীনতা ঘােষণার পর বাংলাদেশ স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি’ নাম গ্রহণ করে এবং কমিটিকে সম্প্রসারিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটির কর্মকাণ্ড সমন্বয় ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তিনজন আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু, খন্দকার মােশাররফ হােসেন (লেখক) ও এ. কে. এম. নজরুল ইসলাম। স্বাধীনতা ঘােষণার পর কিছুদিনের মধ্যে মােহাম্মদ হােসেন মঞ্জু স্বাধীনতা যুদ্ধে আরাে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে মুজিবনগর গমন করায় আমার (লেখক) উপরই ছাত্র সংগ্রামের আহ্বায়কের দায়িত্ব অর্পিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বেশির ভাগ সময়ই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ অফিস হাই হবাের্ণের ৩৫ নং গ্যামেজেজ বিল্ডিং এ স্থাপন করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় সদস্য ও তৃতীয় আহ্বায়ক এ. কে. নজরুল ইসলাম তার ব্যবসার অফিসটি সম্পূর্ণভাবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদকে হস্তান্তর করেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরাে সময় এই অফিস থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ কালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মকাণ্ড ও গুরুত্ব সম্পর্কে মুজিবনগর সরকারের তৎকালীন বৈদেশিক প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মরহুম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তার লিখিত  প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’ শীর্ষক গ্রন্থে বহুবার অত্যন্ত জোরালােভাবে উল্লেখ করেছেন। ৭ মার্চ উত্তর লন্ডনের হাইবারী হীলে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান হাউজে’ এক সমাবেশ | অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশ আহ্বানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালে পূর্ব পাকিস্তান হাউজ’ | এর সেক্রেটারী আমীর আলী। এই সমাবেশে ছাত্র, চাকুরীজীবী ও রাজনৈতিক নেতা সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সমাবেশ থেকে সর্বসম্মতভাবে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা ঘােষণার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবের কিছু অংশ উল্লেখ করা প্রয়ােজন যাতে felett f507 The panjabi answer to the popular Bangalee mandate (given by the electorate in the General Election) has been a bloodbath. And so things have come to snch a hcad that nothing short of complete Independence can satisfy the Bangalees. Hence the revolution. We, the overseas Bangalees, express our fullest solidarity with our fighting and slaying brothers back home. A free Bengal will exact retribution for their blood. And as the same blood flows through our veins, we also raise our voices in unison with them and say “Victory for Bengal, Longlive Revolution.” ঢাকায় ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘােষণা দেয়া না হলেও হাইড পার্ক স্পীকার্স কর্ণারের সভায় স্বাধীনতার ঘােষণা ও বাংলাদেশের পতাকা (কাল্পনিক) উত্তোলন এবং পূর্ব পাকিস্তান হাউজে’ অনুষ্ঠিত সমাবেশের স্বাধীনতা ঘােষণার । প্রস্তাব একই চেতনার বহিঃপ্রকাশ। ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্যস্থ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিবাদে, পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা। হস্তান্তরের দাবিতে লন্ডনের হাইডপার্ক স্পীকার্স কর্ণারে এক বিরাট জনসভার আয়ােজন করা হয়। বিভিন্ন শহর থেকে কোচ ও ট্রেন যােগে সমাবেশে যােগ দেয়ার জন্য হাজার হাজার। বাঙালি হাইড পার্কে সমবেত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি গাউস খান। সমাবেশ শেষে প্রায় ১০ হাজার বাঙালির এক বিরাট মিছিল লাউন্ডস। স্কোয়ারে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে পূর্ব বাংলার দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!