You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | মুক্তি বাহিনী - মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক লে.জে, জগজিৎ সিং অরােরা ঢাকা ঘুরে গেলেন - সংগ্রামের নোটবুক

জেনারেল অরােরা ঢাকা ঘুরে গেলেন।

পঞ্চাশেরও বছর কয়েক বেশি ছিল তার বয়স, ১৯৭১ সালে। সেই বয়সের সাথে ২৭ যােগ হওয়াতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সুপরিচিত ভারতীয় বাহিনীর, সেই সাথে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক লে.জে, জগজিৎ সিং অরােরা এখন ৮১ বছরের বৃদ্ধ। দেহের জৌলুস এখন নেই। তবে ওর বার্ধক্যের শরীরেও এক ধরনের চাকচিক্য আছে যা সব বয়স্কের থাকে না। এখনাে একা চলাফেরা করতে পারেন এবং বুকে ‘পেস মেকার’ বসানাে থাকলেও বেশ সচল, সচরাচর দেখা যায় না। যথেষ্ট রসিকও এই সিংজী। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারকয়েক আমি তাকে দূর থেকে দেখেছিলাম, কিন্তু কথা হয় নি। হওয়ার কথাও ছিল না। কারণ আমি ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের মাঠ পর্যায়ের একজন অতি-তরুণ সৈনিক, যদিও সাংবাদিকতার সাথে সেই তখন থেকে যুক্ত ছিলাম বলে যুদ্ধের মাঠে নেতা বা সেনাপতিদের অনেকের সাথেই সাক্ষাৎপরিচয়ের সুযােগ ছিল অনেক বছর আগে দিল্লিতেও একবার দেখা করতে গিয়েছিলাম জে, অরােরার সাথে  কিন্তু গিয়ে পাই নি। তিনি তখন শিখ জাতির অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে। যথেষ্ট ব্যস্ত মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখালেখির প্রয়ােজনে তার একটি সাক্ষাৎকারের প্রয়ােজন ছিল আমার। বেশিদিন দিল্লি থাকা সম্ভব হয় নি বলে ঢাকা ফিরে এসেছি।পরে অবশ্য সেই সাক্ষাৎকারটি আমি লিখিতাকারে তার কাছ থেকে পেয়েছি। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেখা হলে ব্যাপারটা উল্লেখ করতেই তিনি চট করে তা মনে করতে পারলেন। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’-এর আমন্ত্রণে অবসরপ্রাপ্ত এই ভারতীয় জেনারেল সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেলেন। বাংলাদেশে তার সফরটি কোনাে সরকারি আমন্ত্রণে ঘটে নি। ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আগলে রাখা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। এর পরও জে, অরোরার সাথে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার সৌজন্য সাক্ষাৎকার ঘটেছে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গেছেন, আমাদের স্বাধীনতার শহীদদের উদ্দেশে ফুল দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মৃতিসৌধের খাতায় নিজের আবেগের কথা লিখেছেন।

সেই সাথে জে, অরােরা গেছেন সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে, অর্থাৎ সেদিনের রমনা রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে নয় মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর যৌথ বাহিনীর হাতে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি পরাজিত সৈন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলাে, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ। জেনারেল অরােরা নামটি বাংলাদেশে সুপরিচিত। এই ভারতীয় জেনারেল সুপরিচিত বাঙালির স্বাধীনতার শত্রু-মিত্র সবার কাছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে যুক্ত একটি নাম জে, অরােরা, যাকে ইচ্ছে করলেও কেউ কখনাে মুছে দিতে পারে  সেদিনের মুক্তি বাহিনী আর মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক হিসেবে তার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। আমাদের মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী আত্মিসমর্পণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না, ছিলেন তার ডেপুটি সেদিনের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (পরবর্তীতে) এ.কে. খন্দকার। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল সইয়ের ঐতিহাসিক ছবিটি এতটাই সুপরিচিত যে, লে.জে, জগজিৎ সিং অরােরার চেহারা আর পাগড়িবাধা মুখটা পর্যন্ত এ দেশের নবীন-প্রবীণদের সকলের চেনা। অনেক আগেই এই বয়ােবৃদ্ধ ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। শিখ স্বর্ণমন্দিরে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আঘাত করলে তিনি তার প্রতিবাদ করেন এবং বেশ কিছু কালের জন্যে রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। একবার রাজ্য সভারও সদস্য হন। সে তার জীবনের আরেক অধ্যায়। এখন পরিপূর্ণ অবসর যাপন। আমার ধারণা, জীবন সায়াহ্নে প্রাক্তন ভারতীয় জেনারেলের এই বাংলাদেশ সফরটি তার জন্যে নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের প্রাপ্তি। এবং আমাদের সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঝালাই করে নেয়ারও একটি বড় উপলক্ষও তার সাম্প্রতিক এই সফরটি। মুক্তিযুদ্ধ। জাদুঘর তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে জে, অরােরার মতাে একজনকে উপস্থিত করিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাপন্থী মানুষের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে বলে আমার ধারণা। আমি ব্যক্তিগতভাবে জে, অরােরার বেশকিছু বক্তব্য, যা তিনি বিগত দিনগুলােতে বিভিন্ন উপলক্ষে রেখেছিলেন, লক্ষ করেছি। অবশ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তার সব বক্তব্য বা মতামত আমার আজকের লেখার বিষয় নয়। এবারে ঢাকা এসে তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি বাহিনী নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে।

ইতিহাসের সততা রাখতে গেলে বলতেই হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীরা, যারা এই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে, এই মাটির শাশ্বত সাংস্কৃতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে একাত্তরের রণাঙ্গন তৈরি করেছিল। এই যুদ্ধ সাধারণ কোন লড়াই বা কনভেনশনাল ওয়ার’ ছিল , ছিল এক জনযুদ্ধ। আর এই জনযুদ্ধের মুখ্য বাহিনী ছিল মুক্তি বাহিনী। মুক্তি বাহিনীর সৃষ্টি বা দেশব্যাপী তাদের ব্যাপক আত্মত্যাগী আর দুঃসাহসী যুদ্ধতৎপরতা সুশিক্ষিত এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সৈন্যদেরই কেবলমাত্র বিচলিত করে নি, তাদের যুদ্ধ করার মনােবল পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছিল, তাদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছিল এবং তাদের অগ্রাভিযান রুদ্ধ করেছিল। একাত্তরের রণাঙ্গন এও প্রমাণ করেছে যে বাঙালি পেশাগতভাবে যােদ্ধা জাতি না হলেও আরােপিত কোন জাতীয় যুদ্ধে সে তার নিজের সম্মান এবং যােগ্যতা রাখতে পারে। তবে যে-কোনাে যুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষই এটা মানবেন যে, যুদ্ধের শেষদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক অংশগ্রহণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সামরিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং সে কারণেই স্বল্পতম সময়ে হানাদার পাকিস্তান বাহিনী। সরকারের বিরুদ্ধে বৰ্তিয়েছে তার অনেকটা ছিল বাস্তব, অনেকটা কাল্পনিক । অনেকটা ছিল পরিস্থিতির সৃষ্টি, অনেকটা ছিল দেশী-বিদেশী কৌশলি ষড়যন্ত্রের ফসল। বলতে বাধ্য, ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সচেতনভাবে বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে চেষ্টা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে সামরিকায়ন করে এর ধারাবাহিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহকে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে দূরে রাখার। আর, একই সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে এও প্রচারের ব্যবস্থা হয়েছে যে, আমাদের স্বাধীনতা হচ্ছে ইসলামের দুশমন এবং সেই সাথে ‘হিন্দু ভারতের ষড়যমের ফসল। সুকৌশলি আর দীর্ঘস্থায়ী এ প্রচারণায় আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি তাৎপর্যময় অংশও ইতিহাস বিস্মৃতিতে ডুবেছে বলে আমার বিশ্বাস। এসব কারণে, প্যানেল আলােচনায়, জে, জগজিৎ সিং অরােরার কিছু মন্তব্য আমার কাছে প্রণিধানযােগ্য বলে মনে হয়েছে। শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, কেউ কাউকে সাহায্য-সহযােগিতা করলে কৃতজ্ঞতার প্রশ্ন অবশ্যই ওঠে, কিন্তু কৃতজ্ঞ থাকতেই হয় এমন ঘটনা সব সময় ঘটে না। বাংলাদেশের বেলাতেও তাই ঘটেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযােগিতা করার কারণে ভারত বাংলাদেশের কাছে তেমনটা আশাও করে নি।

তবু ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশে কিছুটা প্রতিরােধ গড়ে ওঠে। এ আলােচনার ওপর একটি প্রধান দৈনিকের খবরটি এরকম, মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে.জে, জগজিৎ সিং অরােরা বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছিল বলে বাংলাদেশ ভারতের প্রতি এতােটাই ঋণী বােধ করে যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ভেতর কিছু প্রতিরােধ তৈরি হয়ে যায়। এ কারণেই হয়তাে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ভারতের সাহায্যকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করেছে।’ একদিক থেকে জে, অরােরার এই অভিমত সত্য বৈকি কিন্তু আমার মনে হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক অবদানকে যারা খাটো করে দেখবার প্রয়াস পান তারা মুখ্যত তিনটি শ্রেণীভুক্ত। এক, যারা মনেপ্রাণে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, সাতচল্লিশের উপমহাদেশ বিভাজনের সময় কিংবা তার আগে ও পরে, যে ধর্মীয় কোন্দলের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং যে শ্ৰেণীটি ইতিহাসের সেই পাপ থেকে আজও মুক্ত হতে পারে নি। দুই. মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পাকিস্তানপন্থীরা, যারা একাত্তরের পরাজয়ের শশাধ নিতে এখনাে সক্রিয় এবং তিন, আমাদের স্বাধীনতা-উত্তরকালে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসা নব্য-রাজনীতিবিদরা, যারা একদিকে ছিলেন প্রাচীন পাকিস্তানি ধারার মনমানসিকতায় তৈরি, অন্যদিকে এক্ষুণি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ক্ষমতা পাকাপােক্ত করতে উন্মুখ এর পরও বলব, ভারতীয় ধর্মীয় মৌলবাদীদের এবং উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের’ অপতৎপরতাও বাংলাদেশে এক ধরনের ভারতবিরােধিতার আবহ তৈরি করেছে। এই শ্রেণীটি অবশ্য ভারতীয় মৌলবাদবিরােধীদের সক্রিয় এবং ব্যাপক তৎপরতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে পারত, কিন্তু তা তারা রাখে নি। ভারতের মতাে বাংলাদেশেও ধর্মীয় মৌলবাদীদের উগ্র তৎপরতা আছে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেহারা আছে, কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ মৌলবাদী দেশে পরিণত হয় নি, তেমনি ভারতও হয় নি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের প্রধান এবং পরীক্ষিত বন্ধুদেশ। পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলে ভারত খুব অখুশি হতাে- এটা ভাববার সঙ্গত যুক্তি হয়তাে নেই। যেমন এখনাে, ব্রিটিশ চলে যাওয়ার ৫০ বছর পরও ভারতের বিচ্ছিন্নতায় সবচে’ খুশি হবে পাকিস্তানই। দুর্ভাগ্যক্রমে উপমহাদেশের প্রধান দুই দেশের গতানুগতিক রাজনীতি ধারাই এই। আমি এটাকে ইতিহাসের পাপ বলি যা থেকে আমরা কেউই আজও মুক্ত হতে পারি নি। ইতিহাসবিদ এবং বর্তমানে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আনােয়ার হােসেন জে, অরােরাকে সরাসরি একটি প্রশ্ন করেছিলেন : পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করাই ভারতের উদ্দেশ্য ছিল বলে একটা কথা চালু আছে, আপনার কী মনে হয়। এ ব্যাপারে জে, অরােরার উত্তর ছিল, সে প্রেক্ষাপট ভারত তৈরি করে নি, পাকিস্তানই তৈরি করেছে; ভারত সে সুযােগ কাজে লাগিয়েছে মাত্র। এ প্রসঙ্গে আমার একটিই কেবল প্রশ্ন, তা হচ্ছে, যদি এটা হতাে যে পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হবে বলে ভারত সেদিনের পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন না জানাত, যদি সে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্বিচার গণহত্যা চালাতে সাহায্য করত, যদি সে এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে আশ্রয় না দিত, তাহলে কি সেই মানবতাবিরােধী অপরাধের জন্যে বাঙালি কোনদিন ভারতকে ক্ষমা করতে পারত। নাকি বাংলাদেশ নামে কোনাে দেশের সৃষ্টি হতাে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটেই থাকবে তা মনে করার সঙ্গত কারণ নেই। কিন্তু ইতিহাস সততার স্বার্থে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা উঠলে, বাঙালির স্বাধীনতার রক্তাক্ত অধ্যায়ের কথা উঠলে, আমাদের এক কোটি শরণার্থীর আশ্রয়ের কথা উঠলে, অবশ্যই ভারতের জনগণ আর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রশ্ন উঠবে। তবে এ দুই পড়শি দেশের অধুনা সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে, দু’দেশের মানুষের কল্যাণে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আর অর্থনৈতিক বিনিময়ে। ইমােশন’ মানুষ ভুলে যায়, কিন্তু নিজের প্রয়ােজনকে মানুষ ভােলে না। সে। কারণে বাস্তবতার আঙ্গিকে আজ এই সম্পর্কের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা পাবে এ কামনাই করি। রাজনীতিবিদদের একটা কথা মনে রাখতে হবে। পুরনাে ইমােশন’ ক্রমান্বয়েই ফিকে হয়ে যায়, কিন্তু পারস্পরিক লেনদেনের বাস্তবতা মানুষকে পরস্পর পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল করে তােলে। আমরা যেন সেই আস্থায় আস্থাশীল হয়ে উঠি। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। আমাদের ভুললে চলবে না— এ উপমহাদেশের জাতিগােষ্ঠীর মধ্যে। বিদ্বেষ জাগিয়ে রাখতে প্রতিপক্ষ সততই তৎপর।

মার্চ, ১৯৯৮

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত প্রবন্ধ হারুন হাবীব