প্রসঙ্গক্রমে : বিদেশী রাজনৈতিক সাংবাদাতা’ প্রসঙ্গ
বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও সেখানকার নিরীহ জনসাধারণের উপর ইয়াহিয়া খানের সমরচক্রের বর্বরতম আক্রমণের ফলাফল সম্পর্কে বিদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে যতাে না ঔৎসুক্য দেখা গেছে, সাম্প্রতিক পাকভারত উপমহাদেশে উত্তেজনাবৃদ্ধি তাদের মধ্যে অনেক বেশি আগ্রহের সঞ্চার করেছে। মাছের গন্ধ যেভাবে বেড়ালকে হেসেলে টেনে আনে, সেইভাবেই এই সব রাজনৈতিক সংবাদদাতা’রা কলকাতার বড় বড় হােটেলগুলি আগেভাগেই ছেয়ে ফেলেছেন। এঁদের আবদার অনেক। এরা শুধু শরণার্থী শিবির দেখেই খুশি নন, সীমান্তে বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে ঢুকতে চান, তারা কি কি অস্ত্র ব্যবহার করেন সে সম্পর্কে সারল্যে ভান দেখিয়ে প্রশ্নাদি করেন ; শুধু তাই নয়, খােদ মুজিব নগরে হানা দিতেও এদের বাসনা কম নয়। এদের ভেতরে এমন সাংবাদিক আছেন, যাঁরা ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে ঢাকা শহরে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
জানি না, এদের অভিপ্রায় ও চালচলনকে ভারত সরকার কতােখানি সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করছেন। এদের অনেকেরই সঙ্গে পাক গুপ্তচরদের গােপন যােগাযাগ আছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত যে সব অভিযােগ উঠেছে, সেগুলিকে সরকার বর্তমান গুরুতর পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনছেন কিনা, সে সম্পর্কেও আমাদের কিছু জানা নেই। কিন্তু এ তথ্য আমাদের জানা আছে যে, ইসলামাবাদে টেলিভিশনে এখন নিয়মিত ভেসে উঠছে মুক্তিযােদ্ধাদের গােপন মহড়ার স্থান ও অস্ত্রশস্ত্রের ছবি, মুজিবনগরের বাঙলাদেশ সরকারী কাৰ্য্যালয়ের ভিতর-বাইরের পুত্থানুপুঙ্খ তথ্যচিত্র ও আমাদের সীমান্ত রক্ষীদের অবস্থান ঘাঁটিগুলির আলােকচিত্র। কেবল তাই নয়, মুভি ক্যামেরা ঘাড়ে করে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতা’র দলও বিদেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন ও প্রায় বিনা বাধায় সীমান্তবর্তী এলাকায় যত্রতত্র ছবি তুলে বেড়াচ্ছেন। আমাদের প্রশ্ন এরা কি পরিমাণ ফিল্ম নিয়ে যাচ্ছেন, কতাে ছবি তুলেছেন এবং সেগুলির কটি করে প্রিন্ট করেছেন বা বিভিন্ন জায়গায় সে সব ছবি পাচার হচ্ছে কি না- এ সব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকার কতখানি সতর্কতা ও উদ্যম গ্রহণ করেছেন?
আমরা যদি বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম বলে বােধ করি, তাহেল সর্বাগ্রে আমাদের করণীয় হবে সেইসব বিপদজ্জনক সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে উচ্ছেদ করা, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করা।
সূত্র: কালান্তর, ২৮.১০.১৯৭১