আজাদ
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান প্রশ্নে ন্যাপের সাতটি পুর্ব্বশর্ত
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
ছাত্র সমাজের ১১ দফা আলোচনার বিষয়বস্তু হিসাবে গ্রহণসহ সাতটি পূর্ব্বশর্ত পূরণ না হইলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী পন্থী) যোগদান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় ও প্রদেশিক ওয়ার্কিং কমিটির যুক্ত বৈঠকে ষোল ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনার পর গতকাল সোমবার রাত্রে গোলটেবিল সম্মেলনে যোগদান সম্পর্কে এই সৰ্ব্বশেষ সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে।
মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে গত রবিবার অপরাহ্ণে ঢাকায় ন্যাপের বৈঠক আরম্ভ হয়।
ন্যাপ বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করা হইয়াছে যে, ছাত্রদের এগার দফা আলোচনার ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করা হইলে গোলটেবিল বৈঠক ফলপ্রসু হইবে। পূৰ্ব্বশর্ত সমুহ মানিয়া লইলেই কেবল বৈঠকে অংশ গ্রহণ করা যাইতে পারে।
ন্যাপ সভার প্রস্তাবে ফলপ্রসু গোলটেবিল বৈঠকের জন্য উত্থাপিত দাবীসমূহ যাহাতে মানিয়া লওয়া হয় সেইদিকে সরকার ও বিরোধী দলসমূহকে লক্ষ্য রাখিতে বলা হইয়াছে। সরকার বৈঠকের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছেন।
এক প্রস্তাবে সরকারের তীব্র সমালোচনা করিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে যে, সরকার গুলী, গ্রেফতার, কারফিউ ইত্যাদি নিৰ্য্যাতনমূলক ব্যবস্থা দ্বারা দেশব্যাপী গণ-আন্দোলন স্তব্ধ করিতে পারেন নাই এবং জনগণ এই সমস্ত নির্যাতন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখিয়া অগ্রসর হইয়াছে। নির্যাতন দ্বারা স্তব্ধ করিতে ব্যর্থ হইয়া সরকার আন্দোনল দমাইবার উদ্দেশ্যে অন্যতম পথ অবলম্বন করিয়াছেন এবং গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাব করেন।
ন্যাপ প্রস্তাবে “জনগণ রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে” সরকারকে জরুরী অবস্থা ও আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য করিয়াছে বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে।
গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী মওলানা ভাসানী জনসভায় দুই মাসের মধ্যে ১১ দফা মানিয়া লওয়া না হইলে ‘কর ও খাজনা বন্ধের’ আন্দোলন শুরু করার যে ঘোসণা করিয়াছেন তাহা সভায় অনুমোদন করা হইয়াছে।
পূৰ্ব্ব শৰ্ত্ত
ন্যাপ গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের নিম্নরূপ পূর্ব্বশর্ত দিয়াছে:
ছাত্রদের ১১ দফা গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার ভিত্তি করিতে হইবে। (২) সামরিক বাহিনী ও পুলিশের গুলীতে যাহারা নিহত ও আহত হইয়াছেন তাহাদের পরিবার বর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান। (৩) যাহাদের পূর্ব্বাঞ্চলে পাঁচ একর পর্যন্ত এবং পশ্চিমাঞ্চলে সাড়ে বার একর পর্যন্ত জমি রহিয়াছে তাহাদের রাজস্ব সব সময়ের জন্য মওকুফ এবং বকেয়া খাজনা ও ট্যাক্স মওকুফ। (৪) শ্রমিকদের বাঁচার মত দাবী অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরী নির্দ্ধারণ এবং শ্রমিক বিরোধী কালাকানুন বাতেল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চার্টার মানিতে হইবে। (৫) নিরাপত্তা আইন ও প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স বাতিল। প্রগ্রেসিভ পেপার লিমিটেডকে মুল মালিকের হাতে ফিরাইয়া দিতে হইবে। (৬) বন্যা নিয়ন্ত্রণকে জাতীয় সমস্যারূপে গ্রহণ এবং বন্যাদুর্গত এলাকাকে দুর্ভিক্ষ এলাকা হিসাবে ঘোষণা। (৭) কৃষক ও জেলেদের ঋণ আদায় বন্ধ।
সভায় গুলীতে নিহত শহীদদের অভিনন্দন জানান হইয়াছে এবং ১৯৬০ সালে লাহোর দুর্গে হাসান, নাসির কিভাবে মারা গিয়াছেন, তাহা প্রকাশ করার দাবী করা হয়।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯