মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে লন্ডনের একমাত্র বাংলা পত্রিকা ছিল সাপ্তাহিক জনমত ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবের ছ’দফা পুস্তিকা হিসেবে ছাপিয়ে বিতরণ করার পর প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেয়। তখন রাজনীতি-সচেতন বাঙালিরা যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা চিন্তা করেন। ১৯৬৮ সালে লন্ডনের কেনসিংটন এলাকায় অবস্থিত ‘তাজমহল’ রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ওয়ালি আশরাফ, সুলতান মাহমুদ শরীফ, সালাহউদ্দিন, আনিস আহমদ এবং আরাে কয়েকজন একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলাপ-আলােচনা করেন। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক জনমত প্রকাশিত হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডন সফরে আসেন। তখন ‘জনমত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ওয়ালি আশরাফ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনিস আহমদ বঙ্গবন্ধুর হােটেলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীকালে স্মৃতিচারণ উপলক্ষে ওয়ালি আশরাফ বলেন : ‘কথা প্রসঙ্গে তাঁকে (শেখ মুজিব) বললাম, এখন আপনি ছ’দফার বদলে একদফা বলছেন না কেন? উনি হেসে বললেন, তােরা বল। আমরা বুঝলাম, আমাদের কী নির্দেশ দিলেন। আমরা এরপর জনমত’-এর প্রথম পৃষ্ঠায় শিরােনাম দিলাম-‘স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালিদের গত্যন্তর নেই।”৯৫০ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সাপ্তাহিক জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি, মুজিবনগর সরকারের কার্যকলাপ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ, যুক্তরাজ্যে সংগঠিত অ্যাকশন কমিটিগুলাের কার্যকলাপ সম্পর্কিত রিপাের্ট এবং বিদেশি সংবাদ ‘জনমত’-এ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে স্মৃতিচারণ উপলক্ষে স্টিয়ারিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিচারপতি চৌধুরীর বিশ্বস্ত সহকর্মী শেখ আবদুল মান্নান বলেন : “পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক ওয়ালি আশরাফ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনিস আহমদ এবং আরাে অনেকে যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ব্রিটেনে বসবাসকারী বাঙালি যারা ইংরেজি জানেন না, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ পৌঁছে দেয়া ছাড়াও পাকিস্তানপন্থী। বাঙালি এবং বাংলাদেশবিরােধী পাকিস্তানিদের অপপ্রচারের পাল্টা জবাব এবং তাদের গােপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে পত্রিকাটি আমাদের সংগ্রামের সহায়তা করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানাের জন্য পাকিস্তান অবজারভার’-এর মালিক হামিদুল হক চৌধুরী ও তৎকালীন গণতন্ত্রী দলের সেক্রেটারিজেনারেল মাহমুদ আলীকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ইউরােপ ও আমেরিকা সফরে পাঠায়। তাদের ভাতাদান সম্পর্কি সরকারি দলিলের ‘ফ্যাক্সিমিলি সাপ্তাহিক জনমত’-এর ৫ সেপ্টেম্বর (১৯৭১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালানাের জন্য হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর কন্যা বেগম আখতার সােলায়মান ও তার স্বামী এস সােলায়মানকেও পাকিস্তান সরকার ব্রিটেন সফরে পাঠায়। তাদের ভাতাদান সম্পর্কিত সরকারি দলিলের ‘ফ্যাক্সিমিলি’ সাপ্তাহিক জনমত’-এর ১২ সেপ্টেম্বর (১৯৭১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ব্রিটেনে প্রকাশিত সর্বপ্রথম পত্রিকা ছিল একটি ইংরেজি “নিউজলেটার বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ আন্দোলনের কয়েকজন সমর্থক প্রাথমিক আলাপ-আলােচনার পর ২৭ মার্চ (শনিবার) একটি ইংরেজি সংবাদ বুলেটিন প্রকাশের সিদ্ধান্ত করেন। এদের মধ্যে ছিলেন “দি গ্যাঞ্জেস’ রেস্তোরাঁর মালিক তাসাদুক আহমদ, তার স্ত্রী রােজমেরী আহমদ ও সাংবাদিক আবদুল মতিন। উল্লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ মার্চ (মঙ্গলবার) নিউজলেটার – এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ আন্দোলনের অকুণ্ঠ সমর্থক ফরিদ জাফরী সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন এয়ার কমােডাের এম কে জানজুয়া সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিছুকাল পর ড. প্রেমেন আডিডও এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন। পত্রিকাটি এপ্রিল মাসে সাপ্তাহিক, মে মাসে পাক্ষিক এবং জুন মাস থেকে মাসিক সংবাদপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নিউজলেটার’-এ প্রবাসী বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিবরণ, মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম, মুক্তিবাহিনীর সামরিক তৎপরতা, বাংলাদেশ আন্দোলনে বিদেশি সমর্থকদের অবদান, মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী সম্পর্কিত খবর এবং বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত খবর ও সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশিত হয়। এর ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামের গতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয়।
পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় ব্রিটিশ সােশ্যালিস্ট ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের কাছে খােলা চিঠি’ এবং মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশের সমর্থনে গঠিত অ্যাকশন কমিটির কার্যকলাপ সম্পর্কে রিপাের্ট প্রকাশিত হয়। খােলা চিঠিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আক্রমণের অন্তর্নিহিত কারণ উল্লেখ করে অবিলম্বে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযােগ প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দান, আওয়ামী লীগের ওপর আরােপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার দাবি এবং হত্যা ও অমানুষিক নির্যাতন সম্পর্কে তদন্ত করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের দাবি সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানানাে হয়। পারী থেকে লাল সালু’র লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ ফরাসি সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ ও সম্পাদকীয় মন্তব্য বাংলাদেশ নিউজলেটার’-এ প্রকাশের জন্য পাঠান। তার স্ত্রী এ্যানমারী ওয়ালিউল্লাহ এসব সংবাদ ও সম্পাদকীয় মন্তব্য অনুবাদ করেন। বাংলাদেশ। স্বাধীন হওয়ার দু’মাসেরও বেশ কিছু কাল আগে (১০ অক্টোবর, ১৯৭১) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। বাংলাদেশ নিউজলেটার’-এ প্রকাশিত সংবাদ, মন্তব্য ও নিবন্ধগুলাে রােজমেরী আহমদ তার আই বি এম টাইপরাইটারের সাহায্যে টাইপ করেন। পত্রিকাটি ছাপানাে ও ডাক খরচের দায়িত্ব বিনা দ্বিধায় তাসাদুক ও রােজমেরী আহমদ গ্রহণ করেন। ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’-এর উদ্যোগে বাংলার কথা শীর্ষক একটি সাময়িক পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে সংগ্রামরত বাঙালি, তাদের সমর্থক, পার্লামেন্ট সদস্য, সরকারি অফিসার এবং বিদেশি দূতাবাসে পৌঁছে দেয়া ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পশ্চিম ইউরােপের দেশগুলােতে বাংলাদেশ নিউজলেটার’ নিয়মিতভাবে পাঠানাে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে আন্দোলনে জড়িত প্রবাসী বাঙালি ও প্রগতিশীল পাকিস্তানি এবং বিদেশি সমর্থনকারীদের কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে “বাংলাদেশ নিউজলেটার’ গ্রুপের ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ স্থাপিত হয়।১৭২ এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নামটি কি এক শব্দ, নাকি দু’শব্দবিশিষ্ট সে সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক তথ্য উল্লেখ করা প্রয়ােজন।
মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে লন্ডনে প্রকাশিত ডাকটিকেটে বাংলাদেশ নাম দু’শব্দ হিসেবে দেখানাে হয়েছে। এ সম্পর্কে গ্রাফিক শিল্পী বিমান মল্লিককে কোনাে নির্দেশ দেয়া হয় নি বলে তিনি ডাকটিকেটের ডিজাইনে বাংলাদেশ দুটি পৃথক শব্দ হিসেবে দেখান। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ নিউজলেটার’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আসাদুক আহমদ ডাকযােগে মুজিবনগর সরকার প্রকাশিত একটি ইংরেজি বুলেটিন পান। এই বুলেটিনের শীর্ষে ইংরেজিতে বাংলাদেশ নামটি বাংলা’ ও ‘দেশ’ আলাদা করে ছাপানাে ছিল। তাসাদুক আহমেদ চিঠি লিখে তাদের জানালেন–দয়েচল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নামের মতাে বাংলাদেশ নামটিও এক শব্দ হওয়া উচিত। এই যুক্তি গৃহীত হওয়ার পর আসাদুক আহমেদ লন্ডনে ‘দি টাইমস পত্রিকায় চিঠি লিখে বললেন, Bangla এবং Desh শব্দ দুটি এক সঙ্গে Bangladesh হিসেবে ‘মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চিঠির সঙ্গে তিনি মুজিবনগর সরকারের ‘লেটারহেড’-এর ‘ফ্যাক্সিমিলি পাঠিয়ে ছিলেন। দি টাইমস’-এ আসাদুক আহমদের চিঠি। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রে বাংলাদেশ নামটি এক শব্দ হিসেবে। গ্রহণ করা হয়। তৎকালে তাসাঙ্গুক আহমদ এ সম্পর্কে একটি বুলেটিন’ প্রকাশ করেন। ( ২৩ জুন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী হল্যান্ড থেকে লন্ডনে ফিরে আসার পর। স্টিয়ারিং কমিটির এক বৈঠকে বাংলাদেশ টু-ডে’ শীর্ষক একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এই বৈঠকে শেখ আবদুল মান্নান সভাপতিত্ব করেন। পত্রিকাটি প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন আমীর আলী, ড. কবীর উদ্দিন আহমদ (ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক) এবং আরাে কয়েকজন উৎসাহী কর্মী। সুরাইয়া খানম, শিল্পী আবদুর রউফ এবং মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীও এ ব্যাপারে সাহায্য করেন। ১ আগস্ট পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। – স্টিয়ারিং কমিটির উদ্যোগে ‘সংবাদ পরিক্রমা শীর্ষক একটি বুলেটিনও ১১ নম্বর।
গােরিং স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত হয়। স্টিয়ারিং কমিটি এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি আয়ােজিত সভার রিপাের্ট সংবাদ পরিক্রমায় প্রকাশিত হয়। মহিউদ্দীন আহমদ চৌধুরী এসব রিপাের্ট তৈরি করেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় এসব রিপোের্ট প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে পাঠানাে হয়। গােরিং স্ট্রিট থেকে আফরােজ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘বাংলার রণাঙ্গণ শীর্ষক আরাে একটি পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। উত্তর ইংল্যান্ডের লিডস শহরে বসবাসকারী বাঙালি কর্মীরা জয় বাংলা’ শীর্ষক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। লিডসে অধ্যয়নরত ছাত্র মােহাম্মদ নূরুল দোহা পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। ‘লন্ডন অ্যাকশন কমিটি ফর দি পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’-এর মুখপত্র হিসেবে ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক আরাে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় । আমীর আলীর সম্পাদনায় পত্রিকাটির মােট ৪ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বার্মিংহাম শহরে একটি উৎসাহী বাঙালি গ্রুপের উদ্যোগে পূর্ব পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ গঠিত হয়। ১৪ মার্চ লন্ডনের হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশের পর সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে বার্মিংহাম অ্যাকশন কমিটি নাম গ্রহণ করে। এই কমিটি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ‘বিদ্রোহী বাংলা শীর্ষক একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। | উত্তরে লন্ডনের এজওয়ার এলাকা থেকে বাংলাদেশ নামে আরাে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বি করিম পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লন্ডন থেকে বাংলাদেশ-বিরােধী ‘পাকিস্তান সলিডারিটি ফ্রন্ট’-এর মুখপত্র হিসেবে মুক্তি নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন পাকিস্তানপন্থী বাঙালি আবুল হায়াত।
উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য পাকিস্তান সরকার লন্ডনস্থ দূতাবাস মারফত প্রয়ােজনীয় অর্থ সরবরাহ করে। এ সম্পর্কিত একটি গােপন দলিল ১০ অক্টোবর লন্ডনের ‘দি সানডে টাইমস্ -এ ফাঁস করে দেয়া হয়। পত্রিকাটির মাধ্যমে আবুল হায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরােধিতা অব্যাহত রাখেন। বিচারপতি চৌধুরী সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা ও মানহানিকর গুজব পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়। আবুল হায়াত ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। মুক্তিযুদ্ধকে তিনি ভারতীয় হিন্দুদের মুসলমান-বিরােধী ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করেন। মুক্তি পত্রিকায় কখনাে কখনাে ইংরেজিতে সংবাদ ও মন্তব্য প্রকাশিত হয়। ইংরেজি লেখাগুলাে পাকিস্তান হাই কমিশন থেকে সরবরাহ করা হয়। চীনপন্থী বাঙালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে নিজেদের আদর্শ ও কর্মপন্থা অনুযায়ী কাজ করেন। তাদের মুখপত্র হিসেবে গণযুদ্ধ’ শীর্ষক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার সম্পাদকীয় বাের্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জিয়াউদ্দিন মাহমুদ, মেসবাহউদ্দিন, জগলুল হােসেন ও ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাজাহান। স্টিয়ারিং কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় তারা ‘গণযুদ্ধ বিক্রির চেষ্টা করেছেন। পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে তারা অনেক জায়গায় স্বাধীনতা সংগ্রামের একনিষ্ঠ। সমর্থকদের হাতে নাজেহালও হয়েছেন।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি – যুক্তরাজ্য – আবদুল মতিন