বাংলাদেশ মহিলা সমিতি
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেত্রীস্থানীয় বাঙালি মহিলারা পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। দেশে ভয়ঙ্কর একটা কিছু হতে যাচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর আক্রমণের খবর পাওয়ার পর তারা অবিলম্বে সংগঠিত হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ২ এপ্রিল এক বৈঠকে মিলিত হয়ে তারা বাংলাদেশ উইমেনস্ অ্যাসােসিয়েশন ইন গ্রেট ব্রিটেন’ (বাংলাদেশ মহিলা সমিতি) গঠন করেন। মিসেস জেবুন্নেসা বখস্ প্রতিষ্ঠানটির কনভেনার মনােনীত হন। প্রথম কয়েক মাস মিসেস সুফিয়া রহমান প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। জনসংযোগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মিসেস আনােয়ারা জাহান, মিসেস ফেরদৌস রহমান ও মিসেস মুন্নী রহমান। পরবর্তীকালে জেবুন্নেসা বস্ মহিলা সমিতির প্রেসিডেন্ট পদে নিয়ােজিত হন। আনােয়ারা জাহান ও খালেদাউদ্দিন যথাক্রমে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল সেক্রেটারি এবং ট্রেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ উপলক্ষে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লিখেছেন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গঠিত হওয়ার পর প্রবাসী বাঙালি মহিলারা বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থনে কাজ করতে শুরু করেন। তাঁৱা স্টিয়ারিং কমিটি আয়ােজিত প্রতিটি সভায় যােগদান করেন। স্টিয়ারিং কমিটিকেও তারা নানাভাবে সাহায্য করেন। তারা পােস্টার লিখেছেন, প্রচারপত্র প্রকাশ করেছেন এবং হাউস অব কমন্সে গিয়ে পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারকালে বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রতি সমর্থনদানের জন্য অনুরােধ জানান। বিচারপতি চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি অত্যন্ত কর্মচঞ্চল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। তারা পৃথকভাবে কয়েকটি সম্মেলনের আয়ােজন করেন। স্টিয়ারিং কমিটি ও অন্যান্য সমিতির বিভিন্ন সভায় যােগ দিয়ে লুলু বিলকিস বানু, আনােয়ারা জাহান, ফেরদৌস রহমান ও জেবুন্নেসা বখস্ বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ আন্দোলনের কাজে ব্যবহৃত পােস্টারগুলাে লেখার ব্যাপারে তাদের অবদান ছিল অপরিসীম। ফেরদৌস রহমানের বাড়িতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, সবাই মিলে তৈরি করছেন পােস্টার ও বাংলাদেশের পতাকা।
পল কনেট প্রতিষ্ঠিত ‘অপারেশন ‘ওমেগা’ সম্পর্কিত কাজে মহিলা সমিতি যথেষ্ট সহায়তা করে। নিচে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মুক্তিযুদ্ধকালীন কার্যকলাপের বিবরণ দেয়া হলাে :
৩ এপ্রিল (১৯৭১) বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রবাসী বাঙালি মহিলারা একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়ােজন করেন। প্রায় ৩০০ মহিলা এই মিছিলে যােগদান করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন জেবুন্নেসা বখস, আনােয়ারা জাহান, লুলু বিলকিস বানু, জেবুন্নেসা খায়ের, শেফালি হক, খালেদাউদ্দিন, পুষ্পিতা চৌধুরী ও সেলিনা মােল্লা। ৪ এপ্রিল বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে জরুরি তারবার্তা পাঠানাে হয়। ৮ এপ্রিল মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে কয়েকটি ছােট ছােট দল লন্ডনে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। এ সম্পর্কে একটি স্মারকলিপিও তারা পেশ করেন। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টকে সমস্যা সমাধানের জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার অনুরােধ জানিয়ে তারবার্তা প্রেরণ করা হয়। ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানকে বৈদেশিক সাহায্য দানকারী প্রতিষ্ঠান ‘এইড পাকিস্তান কসরসিয়ামকে সাহায্য দান বন্ধ রাখার জন্য মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে আবেদন জানানাে হয়। সেদিন লন্ডনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসেও একটি স্মারকলিপি পেশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্মারকলিপি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ১৮ এপ্রিল মহিলা সমিতি কর্তৃক বিভিন্ন দেশের ‘ফার্স্ট লেডি’কে (রাষ্ট্রপ্রধানের সহধর্মিনী) পাঠানাে তারবার্তায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর নারী-হত্যা ও ধর্ষণ এবং শিশু হত্যা বন্ধ করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের অনুরােধ জানানাে হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে মহিলা সমিতির সদস্যরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে গিয়ে এমপিদের লবি করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহিলারা পার্লামেন্ট ভবনের দোরগােড়ায় অপেক্ষা করে তাদের নিজ নিজ এলাকার এমপিদের চিরকুট পাঠিয়ে দেখা করেন।
পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরতার কাহিনী বর্ণনা করে তারা দুস্থ মানবতার প্রতি এম পিদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সবাই মন দিয়ে তাঁদের কথা শুনেছেন। কেউ হয়তাে দুঃখ প্রকাশ করেছেন; কেউ-বা বলেছেন, তার পক্ষে যা করা সম্ভব তা তিনি করবেন। মহিলা সমিতির সদস্যরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে পার্লামেন্টে আলােচনা, স্বাধীন বাংলাদেশকে ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতিদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এম পিদের কাছে দাবি জানান। লবি’তে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন আনােয়ারা জাহান, কুলসুমউল্লা, জেবুন্নেসা খায়ের, বেলা ইসলাম, বদরুন্নেসা পাশা (বার্মিংহাম) ও মিসেস শরফুল ইসলাম। ২৭ এপিল আসন্ন সিয়াটো’র অধিবেশন উপলক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবেন এক বৈঠক অনুষ্ঠানকালে মহিলা সমিতির কয়েকজন সদস্যা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা শ্লোগানগুলাের মধ্যে ছিল : পাকিস্তানকে ‘সিয়াটো থেকে বহিষ্কার কর,’ রক্তই যদি স্বাধীনতার মূল্য হবে তবে বাংলাদেশ অনেক দিয়েছে এবং ‘বাংলাদেশ আরেক মাইলাই।’ বিক্ষোভ শেষে মহিলারা একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ৭ মে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ব্রিটিশ ত্রাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’-এর (War on Want) মাধ্যমে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙালিদের জন্য প্রায় এক টন ওজনের পুরাতন কাপড়-চোপড় পাঠাবার ব্যবস্থা করে। ২২ মে ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির একটি শাখা অফিস খােলা হয়। পরে গ্লাসগাে, সাউদাম্পটন ও ম্যাঞ্চেস্টারসহ মােট ৮টি শহরে শাখা খােলা হয়।
৪ জুন মহিলা সমিতির উদ্যোগে প্রায় তিনশ’ বাঙালি মহিলা লন্ডনের সেন্ট জেমস পার্কে সমবেত হয়ে মিছিল সহকারে ‘সেইভ দি চিলড্রেনস ফান্ড’, ‘রেডক্রস’ এবং “ক্রিশ্চিয়ান এইড’-এর অফিস হয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যান। মহিলাদের কেউ কেউ নিজ নিজ শিশু-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলে যােগদান করেন। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের ভেতরে এবং ভারতের শরণার্থী শিবিরে অসুস্থ ও অভুক্ত শিশুদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অধিকতর সাহায্য পাঠানাের অনুরােধ জানান। পরদিন লন্ডনের পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের কথা প্রকাশিত হয়। সাহায্যদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলােও ভারতের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত শিশুদের জন্য ওষুধ, খাবার ও অর্থসাহায্য পাঠাবার খবর প্রচার করে। ১৬ জুন পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্যদান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মহিলা সমিতির সদস্যরা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে যােগ দিয়ে পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পাকিস্তানকে সাহায্যদান বন্ধ করার দাবি সম্পর্কিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন উপলক্ষে এই বিক্ষোভের আয়ােজন করা হয়। ১৮ জুন পরীতে অনুষ্ঠিত ‘এইড পাকিস্তান কনসরসিয়াম’-এর বৈঠক চলাকালে বিক্ষোভে যােগদানের জন্য মহিলা সমিতির একজন প্রতিনিধিকে ফরাসি দেশে পাঠানাে হয়। ২১ জুন মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলােচনা করেন।
২৪ জুন বাংলাদেশ আন্দোলনকে সমর্থন এবং মুক্তিবাহিনীকে সাহায্যদানের আবেদন জানিয়ে মহিলা সমিতি ব্রিটেনের ছ’শর বেশি ছাত্র ইউনিয়নের কাছে চিঠি পাঠায়। ২৫ ও ২৬ জুন পাকিস্তানকে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লন্ডনস্থ দূতাবাসের সামনে মহিলা সমিতির বিশিষ্ট সদস্যা মিসেস রাজিয়া চৌধুরী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আবদুল হাই খানসহ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যােগ দিয়ে অনশন পালন করেন। জুলাই মাসের মুজিবনগর সরকারের একজন প্রতিনিধি লন্ডনে আসেন। তার কাছে অভাব-অনটনের কথা শােনার পর মহিলা সমিতি মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দু’শ পাউন্ড দিয়েছেন বলে জেবুন্নেসা বখস্ ‘বিলেতে বাংলার যুদ্ধ’ বইটির লেখককে বলেন- ৬ আগস্ট মহিলা সমিতি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসােসিয়েশনের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য চারশ’ শার্ট ও ট্রাউজারস পাঠাবার ব্যবস্থা করে। ৭ আগস্ট মহিলা সমিতি মুক্তিযােদ্ধা ও বাঙালি শরণার্থীদের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কনওয়ে হলে একটি মীনাবাজার-এর আয়ােজন করে। মেয়েদের নিজ হাতে রান্নাকরা খাবার ও হাতের কাজ বিক্রি এবং মহিলা ও শিশু-কিশােরদের গান-বাজনার আসর করে ৭০০ পাউন্ড সংগৃহীত হয়। ২১ আগস্ট মহিলা সমিতির সদস্যরা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারী শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি জাম্বল সেইল’ (পাঁচমিশালি জিনিসপত্র সস্তা দরে বিক্রি) আয়ােজন করে। ৫ সেপ্টেম্বর মহিলা সমিতি বাংলাদেশ আন্দোলনের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেজওয়াটার এলাকায় একটি সিনেমা হলে ‘চ্যারিটি শাে’র আয়ােজন করেন। এই উপলক্ষে মহিলারা নিজ হাতে তৈরি খাবার বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করেন। ৬ ও ১৩ অক্টোবর মহিলা সমিতির প্রতিনিধিরা যথাক্রমে শ্রমিক ও টোরি দলের বার্ষিক সভায় উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি সম্পর্কে অধিকতর সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য উভয় দলের সদস্যদের বিশেষ করে মহিলা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। ১১ অক্টোবর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাংলাদেশ সােসাইটি গঠনের ব্যাপারে মহিলা সমিতি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাঙালি ছাত্রদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযােগিতা দান করেন। এই প্রচেষ্টায় অধ্যাপক আবুল খায়ের, খােন্দকার মােশাররফ, জেবুন্নেসা খায়ের, লুলু বিলকিস বানু ও আনােয়ার জাহান উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেন।
২৪ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বরের মধ্যে মহিলা সমিতি বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেলের কাছে বাংলাদেশে সংঘটিত পাকিস্তানি ধ্বংসযজ্ঞ, ধর্ষণ ও লুটপাট সম্পর্কিত চিঠি এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কাটিং’ পাঠায়। বাংলাদেশ থেকে ইয়াহিয়া খানের দখলকারী সৈন্যবাহিনীকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও জাতিসংঘের ওপর চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এসব চিঠি ও প্রতিবেদনের ‘কাটিং’ পাঠানাে হয়। ১০ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের দাবি জানানাের উদ্দেশ্যে মহিলা সমিতির উদ্যোগে হাউড পার্কের ‘স্পিকার্স কর্নার’-এর কাছে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পর একটি মিছিল বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বীকৃতিদানের অনুরােধ জানায়। বাংলাদেশ আন্দোলন পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মহিলা সমিতি বিভিন্ন সময়ে মেলা, সিনেমা শশা, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদির আয়ােজন করে। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতীক সংবলিত নেকটাই, ব্যাজ ও ক্যালেন্ডার ইত্যাদি বিক্রির ব্যাপারে শিশু ও কিশাের-কিশােরী এবং অল্পবয়সী সদস্যরা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। মহিলা সমিতির তহবিল থেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসােসিয়েশন’কে এক হাজার পাউন্ড মূল্যের ডাক্তারি সরঞ্জাম কিনে দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সদ্য স্থাপিত শিশু হাসপাতালের আসবাবপত্র, ঘড়ি এবং খেলনা ইত্যাদি কেনার জন্য ১,৪৫০ পাউন্ড অনুদান হিসেবে দেয়া হয়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি – যুক্তরাজ্য – আবদুল মতিন