You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ১লা সেপ্টেম্বর, রোববার, ১৫ই ভাদ্র, ১৩৮১

সীমান্তের পাট চোরাচালান বন্ধের পদক্ষেপ

দেশের সীমান্ত এলাকায় পাট বেচা কেনার ব্যাপারে একটি নতুন অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে। এই অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় দশ মাইলের মধ্যে বসবাসকারী পাট চাষিরা শুধুমাত্র সরকারি ডিলারদের কাছে পাট বিক্রি করতে পারবেন। পাট চাষিরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য পরিবার প্রতি দু’মণ করে পাট রাখতে পারবেন এবং পাট বিভাগের ডিরেক্টর পাটের মান দেখে মূল্য ধার্য করবেন। চাষিরা কত পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করছেন, সেই জমির উৎপাদনের পরিমাণ কত এবং উৎপাদিত পাটের কতটা বিক্রয় করা হলো তার হিসাব সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেকে একটি করে ‘ব্রোয়ার্স কার্ড’ ও দেয়া হবে বলে অর্ডিন্যান্সের বলা হয়েছে। এছাড়া যে কোনো চাষী দেশের অভ্যন্তর থেকে সীমান্ত এলাকায় পাট নিতে পারবেন না, সীমান্ত এলাকার কোন চাষী পাট মজুত করলে অথবা অন্যত্র সরিয়ে নিলে বা অন্য কোথাও বিক্রি করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে বলেও জানানো হয়েছে। বস্তুত এই অর্ডিন্যান্সের উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত এলাকায় পাট চোরাচালান বন্ধ করা। কারণ সীমান্তে বেসরকারি খাতে পাট বেচাকেনার ওপর উল্লেখিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য সৎ নিঃসন্দেহে, তবে বাস্তবতা নিরিখে তা বিচার্য। সীমান্তে পাট বেশি মাত্রায় চোরাচালান হয়ে যেতো, যার দরুন কতৃপক্ষ নানা ধরনের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করলেও যথেষ্ট সুফল অর্জন করতে পারেননি। এ কারণে সীমান্ত এলাকার জন্য একটি বিশেষ নিয়ম প্রবর্তন করে পাটের চোরাচালান বন্ধে ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা বিবেচ্য। ‘ব্রোয়ার্স কার্ড’ দেবার যে নিয়মের কথা বলা হয়েছে তা আদৌ কার্যকরী হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। একশ্রেণীর ফড়িয়ারা এ সুযোগ গ্রহণ করবে। অক্ষরজ্ঞানহীন কৃষকদের জন্য এ ধরনের ‘ব্রোয়ার্স কার্ড’ রক্ষণাবেক্ষণ করা বেশ অসুবিধার সৃষ্টি করবে। এছাড়া দেশের ভেতর থেকে সীমান্ত এলাকায় পাট না যাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করাও সম্ভবপর হবে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। পাট বিক্রয় কেন্দ্রে এক ধরণের অসৎ কর্মচারী যে সকল কীর্তিকলাপ করে থাকে। কলাপ করে থাকে তার রোধ করতে না পারলে উদ্দেশ্য সফল হবে না এটা ধরে নেওয়া যায়। এদিকে অন্য এক সংবাদে প্রকাশ, সরকার গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম পাট ক্রয় করতে সক্ষম হয়েছেন। মৌসুমের প্রথম দুই মাসে গতবছরের তুলনায় পাঁচ লাখ মণ কম পাট কেনা হয়েছে। এবার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মিলের জন্য ত্রিশ লাখ বেল এবং রপ্তানির জন্য চব্বিশ লাখ বেল। এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে কিনা তাতে বিভাগীয় প্রতিমন্ত্রীর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তিনি বন্যার কারণে পাটের ক্ষতি, বন্যার কারণে পাটের আমদানি বাজারের কম এবং নব্য ব্যবসায়ীরা সরাসরি পাটকিলে গুদামজাত করায় লিপ্ত রয়েছে ইত্যাদি অসুবিধার কথা বলেছেন। এছাড়া পাটের মূল্য সবক্ষেত্রে ন্যায্য ভাবে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে পাট রপ্তানির ব্যাপারে কতগুলো অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে পরিবহনের অবস্থায় সবচেয়ে প্রকট বলে একটি সংবাদে বলা হয়েছে। অথচ পরিবহনের অসুবিধায় পাট রপ্তানি গত অর্থবছরে ব্যাহত হয়েছে এমন কথা সরকার সরাসরি বলেন নি। এটা একটি অজুহাত ছাড়া কিছু নয়। যেহেতু আমাদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম উৎস, সেহেতু তার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরাজিত অসুবিধা গুলো অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে পূর্বাহ্নে মোকাবেলা করতে হবে। নতুন পুঁজির মালিকরা পাট ক্রয় করে যদি মজুদ করতে থাকে তাহলে সরকারি পাটকলে সংখ্যাকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। পূর্বাহ্নেই সরকার পাটের সার্বিক অসুবিধার ব্যাপারে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি।

পণ্যমূল্য তালিকা প্রসঙ্গে

ঘটনাটা যেন এইরকমঃ চোরের ভয়ে অস্থির গৃহস্বামী প্রতিদিন রাত্রে শুতে যাবার আগে দরজার কাছে সবিনয় নিবেদন মার্কা একখানা বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রাখেন। চোরদের উদ্দেশ্যে তার মূল বক্তব্য হলোঃ তোমাদেরকে মোকাবেলা করবো সে হিম্মত আমার নেই এবং তাতে আমার নিদ্রাভঙ্গের আশঙ্কা। বিজ্ঞপ্তির ভাষা পরে যদি তোমাদের মনে দয়া উদ্রেক হয় তাহলে আমার ঘরখানা তোমাদের কুদৃষ্টি থেকে ‘নিস্তার’ পাক।
গতকাল তাবৎ খবরের কাগজে একটা সংবাদ-এর সবিশেষ স্থান ছিল। অল্প বিস্তর হের ফেরে হেডিংটার মূল বক্তব্য হলো ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখুন।’ আমরা জানি না মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখলে কি লাভ হবে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর কি ভেবে এই নয়া নির্দেশ জারি করেছেন। নির্দেশ মোতাবেক সকলেই হয়তো মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখবেন। কিন্তু তাতে কাজ কতটুকু হবে সেটাই বিবেচ্য। যতদূর মনে পড়ে গত বছরও মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ রিক্সার জন্য নির্ধারিত ভাড়ার তালিকাও প্রকাশ করেছিলেন। এমনই আরো অনেক কিছুই হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অবস্থাটা যা ছিল তাই আছে। আদৌ অবস্থান বদলায়নি। বরং আরো খারাপ হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে না রাখলে শাস্তি স্বরূপ ১৯৭০ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী (মূল্য ও বন্টন) আদেশ বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সদা আতঙ্কগ্রস্ত দেশবাসী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল হোক এটা মনেপ্রাণে কামনা করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখলেই কি দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল হবে? অন্ততঃ অর্থনৈতিক নিয়মে কিন্তু সে কথা বলে না। অর্থনীতি বলে উৎপাদন, বন্টন ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে না পারলে দ্রব্য মূল্য স্থিতিশীল হবে না। এছাড়া রয়েছে সমাজবিরোধী, মুনাফাখোর, মজুতদার, চোরাকারবারীদের অশুভ তৎপরতা। ওদের তৎপরতাও তো বন্ধ করতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে দেখা যাবে ন্যায্য মূল্যের দোকান থাকা সত্ত্বেও যেমন জনসাধারণ ন্যায্যমূল্যে কোন জিনিস পাচ্ছেন না তেমনি মূল্যতালিকা থাকা সত্বেও কোন নির্ধারিত মূল্য থাকছে না। এটা কাগজেই থাকবে। কাজে লাগবে না। মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখা সম্পর্কেও আমাদের একই বক্তব্য। থাকাটা ভালো। কিন্তু জনসাধারণ জিনিসপত্র নির্ধারিত মূল্যে যাতে পায় তার সঙ্গে সে ব্যবস্থাটাও করা দরকার।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!