বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সমর্থন ঘােষণা
(বিশেষ সংবাদদাতা)
আগরতলা, ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বশান্তি আন্দোলনের দুই প্রখ্যাত ইতালীর সংসদ সদস্য ডক্টর আন্তানিল্লো ট্রম্ব আদৌরা এবং লেবাননের জননেতা ডঃ মাহমুদ টোব্বো ত্রিপুরায় পর পর তিনটি জনসভায় বাঙলাদেশের সংগ্রামের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ঘােষণা করেন। তারা বলেন, ইয়াহিয়া চক্রকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিশ্বব্যাপী শান্তি স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের শক্তিকে মুক্তি সংগ্রামের পেছনে সংগত করার আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাবেন। উল্লেখযােগ্য যে, বুদাপেস্ত শান্তি সম্মেলনের প্রস্তাব অনুসারে সারা ভারত শান্তি সংসদের আমন্ত্রণে শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনের জন্য এই দুই নেতা ত্রিপুরায় আসেন। গত ২৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় স্থানীয় চিলড্রেন পার্কে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সর্বশ্রী আন্তানিল্লো ট্রম্বআদৌরা ও মাহমুদ টোঝে বলেন,“আমরা ইয়াহিয়ার বর্বরতার নীরব সাক্ষী হতে এখানে আসিনি, আমরা এসেছি বাঙলাদেশের মানুষের মরনপণ সংগ্রামের সাথী ও অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে।” বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পটভূমিকা বিশ্লেষণ করে ঐ দুই নেতা বলেন, বাঙলাদেশের মানুষের বর্তমান সংগ্রাম দীর্ঘদিনের শােষণ ও বঞ্চনার ফলশ্রুতি। পাকিস্তানের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বাঙলাদেশের মানুষ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে দাবি তুলেছেন, তার জন্য দায়ী ইয়াহিয়ার জঙ্গী চক্র। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছিলেন। নির্বাচনের ফলাফলই তার পরিচয়। কিন্তু নির্বাচনের প্রতিফলিত জনমতের অভিব্যক্তিকে সম্মান দেখানোের পরিবর্তে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনপুষ্ট ইয়াহিয়াচক্র ২৫ মার্চ থেকে সীমাহীন বর্বরতা চাপিয়ে বাঙলাদেশের পরিস্থিতিকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। তারা আরাে বলেন, পাকিস্তানের সামরিক চক্র পরিস্থিতিকে যেভাবে জটিল করে তুলছে তাতে ২৫ মার্চের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া কঠিন। তারা দাবি করেন বাঙলাদেশ যে কোন রাজনৈতিক সমাধানের পূর্বশর্ত হবে শেখ মুজিবরের আশু ও বিনাশর্তে মুক্তি। ভারতীয় এলাকায় গােলাবর্ষণ অন্তর্ঘাত কার্যকলাপ ও একের পর এক প্ররােচনা সৃষ্টি করে পাকিস্তান যেভাবে যুদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে নেতৃদ্বয় তারও উল্লেখ করেন। তারা বলেন,পাকিস্তানের বাঙলাদেশ সমস্যাকে ভারত পাকিস্তান বিরােধের বিষয়ে পরিণত করে বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করতে। ভারত সােভিয়েত পরস্পর সহযােগিতা চুক্তির কথাও উল্লেখ করেন এবং চুক্তিটিকে স্বাগত জানান। পরিশেষে তারা বাঙলাদেশের সংগ্রাম। মানুষদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যান। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অদম্য কামনাকে কোনাে পশুশক্তি চিরকাল গায়ের জোরে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।” ন্যাপ নেত্রী বেগম মতিয়া চেীধুরী পাকিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের আনুপূর্বক বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বাঙলাদেশের চুড়ান্ত মুক্তির জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষ সাম্রাজ্যবাদ ও ইয়াহিয়ার আক্রমণকে একসঙ্গেই রুখবে। ত্রিপুরার কমিউনিস্ট নেতা শ্রীসরােজ চন্দ ঘােষণা করেন, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীরযােদ্ধারা একা নন, ভারত ও সােভিয়েতের মহান জনগণসহ বিশ্বের প্রগতিশীল এবং শান্তিকামী মানুষেরা তাদের পেছনে আছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীমােহর দত্ত ও গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন ওপার বাঙলার খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী শ্ৰীহার পাল। বিশ্বশান্তি সংসদের দুই প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ইতিপূর্বে বিলােনিয়া ও উদয়পুরেও দুটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র: কালান্তর, ৪.৯.১৯৭১